‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ কিংবা যে বিশেষণে বিশেষিত করা হোক না কেন, স্বাধীনতার আবেগ প্রতিটি ভারতবাসীর হৃদয়ে প্রোথিত। তথাপিও এই বছরটি দেশবাসীর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এবারই দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পচাত্তর বর্ষপূর্তি। হুজুগ ও ভক্তির আতিশয্যে এর বিচার হয় না। ভারতমায়ের কত সহস্র বীর সন্তানের আত্মবলিদানে দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনমুক্ত গণতান্ত্রিক একটি দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়ার দিন আজ। শুধু তা-ই নয়, এদিন প্রতিটি ভারতবাসীকে দেশমাতৃকার মর্যাদা রক্ষায় নিজ নিজ ভূমিকা পালনে সচেতন ও যত্নশীল হওয়ার কথা মনে করার দিন।দুশো বছর ইংরেজ শাসনে থেকে এই দেশ যাকিছু হারিয়েছে, আজ এই পচাত্তর বছরে পদার্পণ করে ফিরে দেখারও অবকাশ। এবং এত ঝড়ঝাঁপটার মোকাবিলা করে দেশের নাগরিক ও সরকার যেভাবে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটারও মূল্যায়নের সময়।
বলতে দ্বিধা নেই, সাড়ে সাত দশকে বিশ্বের মানচিত্রে আজ এ দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। হাজার সমস্যার পাহাড় ডিঙিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারত আজ মহত্ব এবং ঐতিহ্য প্রচার শুধু নয়, বিশ্বকেও নেতৃত্বদানের মতো অবস্থানে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রায় সবক্ষেত্রেই ভারতের মতামত,উপদেশ ও পরামর্শ সাদরে গৃহীত। অর্থাৎ, নয়া বিশ্ব গঠনেও এই দেশের ভূমিকা অপরিহার্য।বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়, সৌহার্দ স্থাপনে ,দেশে দেশে মৈত্রী ও বন্ধুতার সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও ভারতের ভূমিকা বিশ্ব-দরবারে উচ্চ প্রশংসিত।উপ-মহাদেশ,মহাদেশের চৌহদ্দিতে সীমাবদ্ধ না থেকে বহুকাল আগেই এই দেশ বিভিন্ন দিশায়ই কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চিনের মতো রাষ্ট্রের লাগাতার রক্তচক্ষু উপেক্ষা ও মোকাবিলা করে নিজের মজবুত অবস্থান বজায় রেখে যাচ্ছে ভারত। কোনও হুমকির কাছে মাথানত নয়, এই বার্তা শুধু কথায় নয়, বাস্তবেও তুলে ধরছে দেশের সরকার।
কিন্তু এতসবের পরেও কুচক্রীরা সময় সময় দেশে অশান্তি ছড়ানোর ফিকির খুঁজে যায়। দেশের ঐক্যে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যায় লাগাতার। সরকার এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও কড়াহাতে দমনেও দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা পালন করছে। ফলে ষড়যন্ত্রকারীরদের সব অশুভ প্রয়াস ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি এতে এই দেশ ও সরকারের প্রতি দেশের জনগণের ভরসার পরিসর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।একইসঙ্গে সার্বিক অগ্রগতির স্বার্থে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা নিয়ে নাগরিকরাও এগিয়ে আসছেন। মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকার যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত, যেগুলো ছাড়া ন্যুনতম জীবনধারণ অসম্ভব, সেসবের নিশ্চয়তাদানে সরকারও সচেষ্ট। এতেও নাগরিকের ভরসা ও দেশ গঠণে তাদের আন্তরিকতার পরিসর অবধারিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীনতার এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি।
আসলে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ যদি মুক্ত না হন, স্বাধীনতার নির্যাস অর্থহীন হয়ে যায়।অন্নবস্ত্র ও বাসস্থানের পরেও স্বাধীন জীবনযাপনে শান্তি ও নিরাপত্তা এবং সবাইকে নিয়ে চলার, সম বিকাশের অধিকার ও এর নিশ্চয়তা একটা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রাকশর্ত।সেই মন্ত্রে দীক্ষিত বলেই প্রধানমন্ত্রীর ‘ সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানটি খুবই প্রাসঙ্গিক। বিদেশি শাসনমুক্ত হওয়ার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্বাধীনতার অর্থ খুঁজতে গেলে সার্বিক অগ্রগতির নিরিখে তা দেখতে হবে।পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতান্ত্রিক এই দেশে কোনও একক গোষ্ঠী বা অঞ্চলের একক বিকাশে তা কোনওভাবেই বিচার্য নয়। সেই ভাবনা ভারতাত্মার অনুষঙ্গ। এই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলুক দেশ। একসঙ্গে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়েই সুনিশ্চিত হোক সবার স্বাধীনতা। ছিয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবসের পূণ্যলগ্নে সবার প্রতি রইল শুভেচ্ছা।