অনলাইন ডেস্ক : ডিলিমিটেশন খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণ করে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, কংগ্রেস, এআইইউডিএফ সহ অন্য বিরোধী দল ও বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠন আহূত ১২ ঘণ্টার বরাক বনধ-এ স্তব্ধ কাছাড়-করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা। বরাক উপত্যকার তিন জেলায় সোমবার থেকেই রাস্তায় নামানো হয় সশস্ত্র সিআরপিএফ জওয়ানদের। পুলিশ-সিআরপিএফ-এ ছয়লাপ বরাক উপত্যকার তিন জেলায় এদিন সকাল থেকে পিকেটাররা রাস্তায় নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ধরপাকড় অভিযান। বহু পিকেটারের সঙ্গে আটক করা হয় বিরোধী দলের দুই বিধায়ক উত্তর করিমগঞ্জের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং হাইলাকান্দি জেলার কাটলিছড়ার সুজাম উদ্দিনকে।
পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা থেকে গোটা বরাকজুড়ে স্বতঃস্ফূ্র্তভাবে জনতা পালন করছেন বনধ। তবে আহূত বনধকে বানচাল করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন কোনও ত্রুটি রাখেনি। সকালে করিমগঞ্জ জেলা সদরে জেলাশাসকের প্রবেশদ্বারে বনধ-এর অন্যতম আহ্বায়ক কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কম কসরত করেনি। এক সময় পুলিশ উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের উপ-সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়েছে। আটক করে নেওয়া হয়েছে জেলা কংগ্রেস সভাপতি রজত চক্রবর্তী সহ অন্যদেরও। করিমগঞ্জ কলেজের সামনে ছাত্রছাত্রীদের পথ আগলে ধরেন পিকেটাররা। কিন্তু পুলিশের দল এসে পিকেটারদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কলেজে ঢুকে ছাত্রছাত্রীরা।
এদিকে হাইলাকান্দি জেলায়ও বনধকে বানচাল করতে বহু পরিশ্রম করতে হয়েছে পুলিশকে। পুলিশ কাটলিছড়ার বিধায়ক এআইইউডিএফ নেতা সুজাম উদ্দিন লস্করকে হাইলাকান্দির কৃষ্ণপুর থেকে আটক করে নিয়ে গেছে। হাইলাকান্দির কৃষ্ণপুরে তাঁর সমৰ্থকদের নিয়ে দোকানপাট বন্ধ করাচ্ছিলেন বিধায়ক সুজাম উদ্দিন। সুজাম ছাড়াও প্রায় ৩০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
অনুরূপভাবে কাছাড় জেলা সদর শিলচরেও বনধ-এর প্ৰভাব পড়েছে। কৈবৰ্ত উন্নয়ন পরিষদ-এর কর্মকর্তারা বরাক বনধ-এর বিরোধিতা করে মাঠে নামায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে ডিলিমিটেশন প্রস্তাবের বিরুদ্ধাচরণকারী প্রতিবাদকারীদের। বরাক উপত্যকার তিন জেলার কোথাও সরকারি ছাড়া বেসরকারি খুব বেশি যানবাহন আজ রাস্তায় নামেনি। শিলচরে অবশ্য মাঝে-মধ্যে কয়েকটি অটো রিকশা ও টোটো চলাচল করেছিল। তবে পিকেটারদের অনুরোধে তাঁরাও ঘরমুখো হয়ে যান। স্কুল-কলেজে ছাত্র-শিক্ষকদের প্রবেশ করতে দেননি পিকেটাররা। পিকেটাররা প্ৰতিরোধ গড়ে তোলায় বেশ কয়েকটি সরকারি দফতরে কর্মচারীদের প্রবেশ করতে অসুবিধা হয়েছিল। তবে কোনও জায়গা থেকে এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কাছাড় জেলার কাটিগড়া, কালাইন, বড়খলা, লক্ষ্মীপুর, সোনাই, ধলাই প্রভৃতি এলাকায় পিকেটারদের আটক করায় বনধ সফল হয়নি, জানিয়েছেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার নোমাল মাহাতো।
আহূত বনধ সম্পর্কে বরাক ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় এবং শিলচর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ পালের দাবি, সংসদীয় ও বিধানসভা এলাকার ডিলিমিটেশন খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বরাক উপত্যকার সর্বস্তরের মানুষ। তাই আজকের বনধকে তাঁরা সমর্থন করে সর্বাত্মক করেছেন। প্রকাশিত খসড়া ডিলিমিটেশন প্রস্তাব সম্পূর্ণ অনৈতিক, তা বাতিল করতে হবে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনকে, জোরের সঙ্গে বলেছেন দত্তরায়।