অনলাইন ডেস্ক : সোনাইর প্রাক্তন বিধায়ক তথা অসম বিধানসভার প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর বুধবার কংগ্রেস দলে যোগদান করেছেন। তাঁর এই দল-বদলের ঘটনায় বরাকের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ‘আমিনুল নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই এতদিন বিজেপিতে ছিলেন। দলকে ভালবেসে বা আদর্শের জন্য তিনি বিজেপি করেননি।’ এভাবেই তাঁকে কটাক্ষ করেছেন দলের পোড় খাওয়া কর্মী আশিস হালদার।
শিলচরে আশিস সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৬ সালে তিনি সোনাইয়ে দলীয় টিকিটের জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। তখন আমিনুল ‘উড়ে এসে জুড়ে বসেছি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। সেবার পরিমল শুক্লবৈদ্যের বাড়িতে আমিনুলের আহ্বানে আয়োজিত বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, পরবর্তীতে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু ২০২১ সালে বিজেপি আমিনুলকেই টিকিট দেয়। সেবার তিনি পরাজিত হওয়ার পর ফের দলের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করতে থাকেন। কাটগড়ায় তুলেন খোদ পরিমলবাবুকেও। তিনিই নাকি তাঁর পরাজয়ের পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন। আশিসের কথায়, আমিনুল সব সময়ই নিজের ন্যস্ত স্বার্থে দলকে ব্যবহার করেছেন। কখনও দলীয় কর্মীদের স্বার্থে কাজ করেননি। পাঁচ বছরের রাজত্বে তিনি নিজের আত্মীয়-স্বজনের প্রভূত কল্যাণ করেছেন। দলের প্রতি যে তাঁর কখনও আনুগত্য ছিল না, আজ সেটাই প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিন আশিসবাবু দাবি করেন, সোনাইয়ে আমিনুলের জন্য বিজেপির সংগঠন শক্তিশালী হয়নি। তিনি দলে যোগ দেওয়ার অনেক আগেই সোনাইয়ে বিজেপির শক্ত ভিত ছিল। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, কংগ্রেস আমলে ৮৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত বাগপুর-নিয়াইরগ্রাম থেকে বিজেপি টিকিটে জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন নজরুল ইসলাম বড়ভুইয়া। বিজেপি সংখ্যালঘু শাখার কাছাড় জেলা সভাপতি পদে বারকয়েক নির্বাচিত হন সোনাবাড়িঘাট জিপির বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়া। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আরও অনেকেই বিজেপির বিভিন্ন স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই সোনাইয়ে বিজেপির অনুকূলে মুসলিম ভোট টানা বা মুসলিমদের মধ্যে দলীয় সংগঠন বিস্তারে আমিনুলের কোনও অবদান বা ভূমিকা নেই বলে দাবি করেন আশিস। তিনি আরও বলেন, আমিনুলকে বিজেপি অনেক কিছুই দিয়েছে। বিনিময়ে তিনি কিছুই করেননি, শুধুই নিজের আখের গুছিয়েছেন। বিধানসভা এলাকা পুনর্নির্ধারণের ফলে বর্তমানে সোনাই কেন্দ্রে মুসলিম ভোট বেড়ে গেছে। ফলে আগামীতে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা কম! এই কারণেই হয়তো আমিনুল লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি ছেড়েছেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন কখনও সফল হবে না বলে জানিয়ে দেন আশিস। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সোনাই কেন্দ্র থেকে আরও বেশি মার্জিনে বিজেপি প্রার্থী পরিমল শুক্লবৈদ্য জয়ী হবেন।
প্রসঙ্গত, আশিস হালদার ১৯৯৮ সাল থেকে বিজেপি দলের সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘ সময়ে তিনি দলের বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন জেলা বিজেপির কার্যবাহী সদস্য। এছাড়া তিনি ভিডিপি-র কাছাড় জেলার ডেপুটি অ্যাডভাইসর পদেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালে দলের টিকিট না পেয়ে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে সোনাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোট পান। ফলে দল থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি ফের স্বমহিমায় বিজেপিতে যোগদান করেন।