অনলাইন ডেস্ক : শিলচর পুরনিগম গঠনের জন্য চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারির পর শুরু হয়েছে নির্বাচনী তোড়জোড়। এরমধ্যে আসন সংরক্ষণে বুধবার জেলা কমিশনারের কার্যালয়ে আহ্বান করা হয় সর্বদলীয় বৈঠক। বৈঠকে আসন সংরক্ষণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করা হলেও কোন কোন আসন সংরক্ষিত হবে, তা নির্ধারণের জন্য লটারি করা হয়নি। এতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএম। সিপিএম এতে হতাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি এদিন লটারি না করার পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে কংগ্রেস।
৬ টি এজেন্ডাকে সামনে রেখে দিন দুপুর ১২ টা নাগাদ শুরু হয় সর্বদলীয় বৈঠক। সংরক্ষণ করা হবে ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টের ভিত্তিতে। দেখা গেছে ২০১১ র জনগণনার রিপোর্ট অনুযায়ী নিগমের ৪২ টি ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত এলাকায় লোকসংখ্যা ৩,০৬,৩৪৩, এরমধ্যে অনূসূচিত জাতির লোকের সংখ্যা ৪৮,২৮২, শতকরা হিসেবে ১৫’৭৬ শতাংশ। এই হিসেবের ভিত্তিতে আলাপ আলোচনা করে ঠিক হয় নিগমের এলাকায় যেহেতু অনুসূচিত জাতির লোক রয়েছেন প্রায় ১৬ (১৫’৭৬) শতাংশ, তাই ৪২ টি ওয়ার্ডের ১৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭টি ওয়ার্ড সংরক্ষিত করা হবে অনুসূচিত জাতির জন্য। তবে সামগ্রিকভাবে যেহেতু ৫০ শতাংশ ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা, তাই সংরক্ষিত ৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে কতটি ওয়ার্ড অনুসূচিত মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে এনিয়ে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় আলাপ আলোচনা। ৭টি আসনের ৫০ শতাংশ দাঁড়ায় ৩’৫। তবে তা যেহেতু সম্ভব নয় তাই আলাপ-আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত ঠিক করা হয়
৭টি আসনের মধ্যে ৩টি আসন সংরক্ষিত থাকবে অনুসূচিত মহিলা প্রার্থীদের জন্য। বাকি ৪টি আসনে দাঁড়াতে পারবেন নির্ধারিত যোগ্যতা থাকা অনূসূচিত জাতির যে কেউ। আর সব মিলিয়ে সংরক্ষিত ৭টি ওয়ার্ডের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে, ক্রমপর্যায়ে অনুসূচিত ভোটার বেশি থাকার নিরিখে।
এরপর শুরু হয় মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন (ওয়ার্ড) সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা। ৪২ টি ওয়ার্ড-এর ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ২১ টি ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের হিসেব কষার পর ঠিক হয় যেহেতু ৩টি ওয়ার্ড অনুসূচিত মহিলাদের জন্য আগেই সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাই বাকি ওয়ার্ড গুলোর মধ্যে ১৮ টি ওয়ার্ড সংরক্ষণ করা হবে সাধারণ শ্রেণীর মহিলাদের জন্য।
এসব আলোচনার পরবর্তীতে অনুসূচিত ৩টি এবং সাধারণ শ্রেণীর ১৮টি মিলিয়ে কোন ২১ টি ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে লটারির মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। যদিও তা হয়ে উঠেনি। জেলা কমিশনার মৃদুল কুমার যাদব জানান, কিছু ওয়ার্ড নিয়ে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ রয়েছে। সেসব যাচাই করে দেখার পর দুই-তিন দিনের মধ্যে লটারির ব্যবস্থা করা হবে। এরপর বৈঠক সেখানেই শেষ হয়ে যায়।
এদিনের বৈঠকে জেলা কমিশনার ছাড়া উপস্থিত ছিলেন দুই বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও মিহির কান্তি সোম, ডিডিসি নরসিং বে, বিজেপির পক্ষে অভ্রজিৎ চক্রবর্তী ও রাজেশ দাস, কংগ্রেসের অভিজিৎ পাল, সূর্যকান্ত সরকার, আলী রাজা উসমানী, ও দেবদীপ দত্ত, সিপিএম-এর দুলাল মিত্র ও বিদ্যুৎ দেব, এ আই ইউ ডি এফ এর সামিনুল হক বড় ভূঁইয়া, তৃণমূল কংগ্রেসের সজল বণিক ও রাহুল আলম লস্কর এবং আপের পক্ষে ছিলেন অভিজিৎ বিশ্বাস।
বৈঠকে অনুসূচিত জাতির জন্য ৭টি ওয়ার্ড
বা আসন সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হলেও কোন ৭টি ওয়ার্ড সংরক্ষিত হবে তা চিহ্নিত করা হয়নি। তবে ক্রমপর্যায়ে বেশি সংখ্যক অনুসূচিত লোক থাকা ৭টি ওয়ার্ডকে সংরক্ষিত করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেই হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ার কথা ৩২, ১৯, ৫, ১৮,১০, ৩ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড। দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি ৪৯’৬৭ শতাংশ অনূসূচিত লোক রয়েছেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর ক্রমপর্যায়ে ১৯ নম্বরে ৪০’২৬ শতাংশ, ৫ নম্বরে-৩৯’৬১ শতাংশ, ১৮ নম্বরে ৩৯’১ শতাংশ, ১০ নম্বরে ৩৭’৮২ শতাংশ, ৩ নম্বরে ৩০’৫১ শতাংশ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন ২৯’১৩ শতাংশ।
বৈঠকে এদিন লটারি না হওয়ার প্রসঙ্গ ছাড়া কেউ খুব একটা উচ্চবাচ্চ্য করেননি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মধুরবন্দ এলাকার ওই ওয়ার্ডে ১২’৯৩ শতাংশ অনুসূচিত জাতির লোক রয়েছেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বাস্তবে তা ঠিক গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। এতে জেলা কমিশনার জানান ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে বৈঠকের পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলা সভাপতি অভিজিৎ পাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিগমের নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন শিলচরবাসী। শাসক দলের ভোট ব্যাংকের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ওয়ার্ড ভাগাভাগি করা হয়েছে। এরপরও যথার্থ পুরসেবা পেতে শিলচর বাসী উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন নির্বাচনের জন্য। কিন্তু এদিন যেভাবে লটারি না করে জেলা কমিশনার মাঝপথেই বৈঠক শেষ করে দিয়েছেন এর পেছনে থাকতে পারে কোনও ষড়যন্ত্র। জেলা কমিশনার বিজেপির মুখপাত্র হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করে অভিজিৎ বলেন, লটারির নামে কোনও ধরনের কারচুপি করা হলে কংগ্রেস চুপ করে বসে থাকবে না। তিনি আরও বলেন, যে কক্ষে বৈঠক হয়েছে সেই কক্ষে লটারির জন্য বাক্সও তৈরি করে রাখা হয়েছিল। আর লটারির ব্যাপারটা ছিল এজেন্ডায়ও ।এরপরও মাঝপথে যেভাবে লটারি না পরে বৈঠক শেষ করে দেওয়া হল এতে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহাতুর হয়ে উঠবেন যে কেউ।
সিপিএমের দুলাল মিত্র বলেন, এদিন লটারি না হওয়ায় তারা চূড়ান্তভাবে হতাশ। শেষপর্যন্ত প্রশাসন স্বচ্ছভাবেই লটারি করুক, এটাই তাদের দাবি।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজেশ দেব অবশ্য বলেন, এদিন লটারি না করা নিয়ে তাদের বিশেষ আপত্তি নেই। কারণ কিছু কিছু ওয়ার্ড নিয়ে তারা আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এসব খতিয়ে দেখার পর আসন সংরক্ষণ নিয়ে লটারি করা হবে। তাই এক্ষেত্রে তাদের কোনও সমস্যা নেই। তবে সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন প্রথমত সর্বদলীয় বৈঠকে তাদের দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরবর্তীতে দলের নেত্রী সুস্মিতা দেব জেলা কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পর এক প্রশাসনিক আধিকারিক তাকে ফোন করে আমন্ত্রণ জানান। এ আই ইউ ডি এফ-এর সামিনুল হক বড়ভূঁইয়া বলেন, এদিন যা হওয়ার হয়ে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন যাতে স্বচ্ছ ভাবে লটারির ব্যবস্থা করে এটাই তার দাবি।
।