অনলাইন ডেস্ক : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জিরিবামে জাতি দাঙ্গায় নিহত মৈতৈ সম্প্রদায়ের নয়জনের মৃতদেহ গিয়ে পৌঁছল মনিপুরের জিরিবামে। শুক্রবার শিলচর মেডিকেল কলেজ থেকে পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সড়কপথে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জিরিবামে। এদিন সকালে হাসপাতালে উপস্থিত হন পরিবারের লোকেরা। দুপুর ১২টা নাগাদ তাদের হাতে মৃতদেহ সমঝে দেওয়া হয়। হাসপাতাল চত্বরেই তারা কিছু ধর্মীয় আচার পালন করেন। এরপর মৃতদেহ নিয়ে সড়ক পথে রওনা হন নিজের রাজ্যের উদ্দেশ্য।
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ জিরিবামে নিয়ে যাওয়ার পথে কাছাড় জেলার বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মনিপুরি সম্প্রদায়ের লোকেরা। রংপুর, আরকাটিপুর, বাদ্রি, করইকান্দি, বাশকান্দি, রানীপুর,পালোরবন্দ, শিবপুর, শ্রিবার, পয়লাপুল, ফুলেরতল সহ বিভিন্ন স্থানে মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কাছাড় জেলা পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় জিরিঘাট পর্যন্ত পৌছে দেওয়া হয় মৃতদেহ গুলো।
এই নিহত নয়জনের মধ্যে রয়েছেন জিরিবামের জাকুড়াডর থেকে অপহরণ হওয়া তিন মহিলা এবং তিন শিশু সহ একই পরিবারের ছয়জন। ১১ নভেম্বর তাদের গ্রামে হামলা চালিয়েছিল সশস্ত্র কুকি জঙ্গিরা। এই হামলায় এলাকার দুই প্রবীণ ব্যক্তি নিহত হন এবং এদের মধ্যে একজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। একই দিনে এক পরিবারের ছয় ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। পরে তাদের মৃতদেহ একের পর এক বরাকের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ছিলেন ৬৫ বছরের ওয়াই রানী দেবী, তার দুই কন্যা টি থৈবি দেবী (৩১) এবং এল হেইতমবি দেবী (২৫), নাতনি টি তেলেম থাজমানবি দেবী (৮), নাতি এল চিংখেইগামবা সিংহ (২.৫) এবং এল লাংগামবা সিংহ (৮ মাস)। তিনজনের মৃতদেহ পাওয়া যায় মনিপুরের অসম সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এবং বাকি তিনজনের মৃতদেহ মেলে কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায়। ১১ নভেম্বর জাকুড়াডরে দুষ্কৃতীদের হামলার পর লাইসরাম বারেন মৈতৈ (৬৩) এবং মাইদাম কেশো (৭১)-য়ের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। ১৭ নভেম্বর জিরিবামে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মৈতৈ সম্প্রদায়ের যুবক কে আথৌবা। এদের মৃতদেহ একের পর এক পাঠানো হয়েছিল শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পরিবারের লোকেদের বলা হয়েছিল তারা যেন মৃতদেহ নিয়ে যান। তবে প্রথমে তারা এতে অস্বীকার করেন। পরিবারের লোকেরা চাইলেও এদিন প্রশাসন মৃতদেহ জাকুড়াডর নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। শেষমেষ জিরিবামে সমাধিস্ত করা হয় নয়টি মৃতদেহ। লাইসরাম বারেন মৈতৈর পরিবারের লোকেরা বলেন, ‘যে ১০ জন জঙ্গি সিআরপিএফের গুলিতে নিহত হয়েছে, তাদের গ্রামরক্ষী বাহিনী বলে আখ্যা দিয়েছে কুকি সম্প্রদায়ের লোকেরা। তারা যদি গ্রামরক্ষী হতো, তাহলে চুরাচাঁদপুর থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জিরিবামে কি করতে এসেছিল? গ্রামরক্ষী হলে তাদের নিজের গ্রামে থাকা উচিত ছিল। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, এই ১০ ব্যক্তিকে জঙ্গি বলে ঘোষণা করা হোক। আমাদের বিশ্বাস কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে এসব তথ্য উঠে আসবে।’শুক্রবার বিকেলে মৃতদেহগুলো জিরিবামে পৌঁছানোর আগেই সেখানে বহু লোক জড়ো হন। প্রায় প্রত্যেকের চোখে জল ছিল এদিন। বিকেল তিনটে নাগাদ একের পর এক মরদেহ নিয়ে যাওয়া গাড়ি এলাকায় ঢোকে এবং পরিস্থিতি আরও করুন রূপ ধারণ করে। উপস্থিত প্রত্যেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। যে নয় ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তারা হিন্দু ধর্মের লোক, ফলে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী দাহ করার কথা ছিল।