অনলাইন ডেস্ক : দীপাবলীতে শব্দদানবের তান্ডব রুখতে পুলিশ, প্রশাসন ও প্রদূষন নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে যৌথভাবে শিলচরে বিভিন্ন বাজি – পটকার বাজারে শুরু হয়েছে অভিযান। কান ফাটানো কিছু পটকা বাজেয়াপ্ত করা হলেও দেখা গেছে, চোর-পুলিশের খেলা শুরু করে অভিযানকারীদের ফাঁকি দিয়ে একাংশ বিক্রেতা আড়ালে সেসব বিক্রি চালিয়েই যাচ্ছেন।
এবার প্রথম অভিযান চালানো হয় গতকাল মঙ্গলবার। জানিগঞ্জ, ফাটকবাজার, ন্যাশনাল হাইওয়ে বাজার ইত্যাদি এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয় উচ্চ আওয়াজ সৃষ্টিকারী ৩৭ প্যাকেট পটকা। এরপর বুধবারও চলে অভিযান। বুধবার অভিযান চালানো হয় তারাপুর, রংপুর, ইটখোলা বাজার ও সেন্ট্রাল রোডে। এদিন সব মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০ প্যাকেট পটকা।
পটকা বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হয়। জানা গেছে এদিন অভিযানের সময় তারাপুর শিববাড়ি রোড, রংপুর ও ইটখোলা বাজারে পাওয়া যায় অনুমতি বা লাইসেন্স বিহীন তিনটি দোকান। এসব দোকানের সব পটকাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার দুপুরে জানিগঞ্জ ও ফাটকবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গতকালের অভিযানের জেরে বিক্রেতারা অনেকটাই সতর্ক। সামনে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা বাজি- পটকার মধ্যে নেই এটম বা হাজারীর মতো উচ্চ আওয়াজ সৃষ্টিকারী পটকা। যদিও কানে কানে জিজ্ঞেস করলে ক্রেতার দিকে একদফা উপর-নীচ নজর বুলিয়ে ভালোভাবে নিরীক্ষণের পর বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে, জানিয়ে দিচ্ছেন মিলবে। তবে দর হবে একটু বেশি। এরপর অন্যত্র লুকিয়ে রাখা এসব পটকা এনে তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে।
বিক্রেতারা যে এমন পন্থা নিয়েছেন, তা ভালোভাবেই জানেন অভিযানকারীদের অনেকেও। অভিযানকারী দলে থাকা প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্মকর্তা জানান, অন্তরালে লুকিয়ে রেখে উচ্চ আওয়ার সৃষ্টিকারী পটকা যে লুকিয়ে লুকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, তা জানলেও ধরার কোনও উপায় থাকছে না। এক্ষেত্রে বিক্রেতাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে মোবাইল। কোথাও ক্রেতা সেজে গিয়ে যে কাউকে ধরা হবে, সম্ভব হচ্ছে না তাও। অভিযান শুরুর খবর পাওয়ার পর বিক্রেতারা আর কাউকেই তাদের কাছে এটম বা হাজারীর মত পটকা থাকার কথা স্বীকার করছেন না।
প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শিলচর আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যাবাহী বাস্তুকার অরবিন্দ দাস জানান, কেন্দ্রীয় প্রদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ১৬ ধরনের পটকা বিক্রির ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্টারস (সব সাইজ), রশি, ২৮ বোম, রকেট, স্নেইক কার্টুন, গ্রাউন্ড ক্রেকার, স্কাই শো (সব সাইজ), রংমহল, কালার ম্যাচেস, পেপার বম্ব, কালার কাঠি, তারাবাতি, ফ্লাওয়ার পোস্টস, কিটক্যাট ও স্টার্স।
তার কথায়, ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দসৃষ্টিকারী পটকা বিক্রি করা বা ফাটানোর ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে এর চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী পটকা বিক্রি করা হলে সেসব বাজেয়াপ্ত করে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি জানান, গতবছর দীপাবলিতে সারাদেশে কম বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিল শিলচর। শিলচরের চেয়ে কম বায়ুদূষণ ঘটেছে শুধু কর্ণাটকের মাদিকেরী ও তামিলনাড়ুর উটিতে। এবারও এই ধারা অব্যাহত রাখতে অভিযান চালানোর পাশাপাশি বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে সচেতনতামূলক প্রচার। আর গত বছর ১২ নভেম্বর দীপাবলির দিনের শব্দ দূষণের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান ওইদিন শহরে জেলাশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন এলাকায় গণপড়তা শব্দ দূষণের মাত্রা ছিল
৬০ ডেসিবেল,জানীগঞ্জে ৭৬ ডেসিবেল, অম্বিকা পট্টিতে ৬৩ ডেসিবেল, নেতাজি সুভাষ এভিনিউতে ৬৫ ডেসিবেল, আদালত চত্বরে ৫৬ ডেসিবেল এবং রাঙ্গিরখাড়ি এলাকায় গড়পড়তা শব্দ দূষণের মাত্রা ছিল ৭৪ ডেসিবেল। এবার শব্দ দূষণের এই মাত্রাও আরও কমিয়ে আনার লক্ষ্যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।