অনলাইন ডেস্ক : রহস্যজনক মৃত্যু ঘটলো পুরোহিতের। ঘটনাস্থল শিলচর এন এন দত্ত রোড। অজিত চৌবে (৪৫) নামে এই পুরোহিত এন এন দত্ত রোডের “আরিয়ান কমপ্লেক্স” নামে বহুতল ভবনে থেকে ওই ভবনের একেবারে উপরের তলায় (পঞ্চম তলা) থাকা মন্দিরে পূজা পাঠ করতেন। সোমবার সকালে ভবনের পাশে খালি জায়গায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাকে ঘিরে এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্যের।
অজিতের পৈত্রিক বাড়ি সোনাই থানা এলাকার নতুন রামনগরে। তবে পূজা পাঠের সূত্রে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি আরিয়ান কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলায় মন্দিরের পাশে একটি দু’কামরার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার পরিবারে রয়েছেন পত্নী রঞ্জনা চৌবে, দুই সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া প্রাঞ্জল চৌবে ও পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া প্রণতি চৌবে সহ বৃদ্ধা মা বিদ্যারানী চৌবে।
পত্নী রঞ্জনা চৌবে জানিয়েছেন, অজিতের ভগ্নিপতি বর্ণিব্রিজ বাগান এলাকার বাসিন্দা দেবজিৎ পান্ডে তিন- চার দিন আগে তাদের ফ্ল্যাটে এসেছেন। দীপাবলি উপলক্ষে অন্যত্র পূজার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অজিতই পূজাপাঠে সহায়তার জন্য দেবজিৎ কে ডেকে নিয়ে আসেন। অন্যান্য দিনের মতো রবিবার রাতেও তারা ঘুমিয়ে ছিলেন স্বাভাবিকভাবে। সামনের কামরায় মেঝোয় ম্যাট্রেস পেতে ঘুমিয়ে ছিলেন অজিত ও তার ভগ্নিপতি দেবজিত। ভেতরের কামরায় শাশুড়ি বিদ্যাবতি ও দুই সন্তানের সঙ্গে শুয়ে ছিলেন তিনি। ভোররাতে হঠাৎ দেবজিত তাদের ডেকে বলেন অজিতকে পাওয়া যাচ্ছে না। দেবজিত তাদের জানান,রাত আড়াইটা নাগাদ অজিত হঠাৎ দরজা খুলে বাইরে যান। যাবার সময় পাশে শুয়ে থাকা দেবজিৎকে বলেন
মন্দিরের সামনের নাট মন্দিরে একটু পায়চারি করে আসছেন। কিন্তু অনেকক্ষণ তিনি না ফেরায় দেবজিৎ বাইরে বেরিয়ে দেখেন অজিত নেই। এরপর ভেতরের ঘরে শুয়ে থাকা তাদের ডেকে ব্যাপারটা জানান। রাতে তারা পুরো বহুতল ভবনে খুঁজেও অজিতের সন্ধান পাননি। তবে রাতের অন্ধকারে পাশের খালি জমিতে তাদের পক্ষে কিছু দেখা সম্ভব হয়নি। আর সেখানে তিনি যেতে পারেন একথা মাথায়ও আসেনি। ভোর হওয়ার পর তাদের নজরে পড়ে পাশের খালি জমিতে পড়ে রয়েছে অজিতের মৃতদেহ।
অজিতের মৃতদেহ পাশের খালি জমিতে পাওয়া গেছে ভবন থেকে প্রায় ৯ – ১০মিটার দূরত্বে। তার গলায় থাকা রুদ্রাক্ষের মালা সেখানে পড়েছিল ছেঁড়া অবস্থায়। আর মৃতদেহ ছিল আকাশ পানে মুখ করে। তার নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসা সহ হাতে দেখা গেছে কিছু আঘাতের চিহ্ন। প্রশ্ন উঠছে, তিনি যদি উপর থেকে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মঘাতী হন, তবে মৃতদেহ কেন পড়ে থাকবে আকাশ পানে মুখ করে। আর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এতটা উঁচু থেকে পড়লে শরীর যতটা ক্ষতবিক্ষত হওয়ার কথা তেমনটা দেখা যায়নি তার মৃতদেহে। এছাড়া তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লে মৃতদেহ ভবন থেকে প্রায় ৯-১০ মিটার দূরে গিয়ে পড়াটা কতখানি সম্ভব এনিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন মৃতদেহ যেখানে পড়েছিল সেখানে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়লে উপরের যে অংশ থেকে ঝাপ দেওয়ার কথা সেখানে সে ধরনের কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি। উপরের ওই অংশে মন্দিরের পাশে কিছুটা জায়গা দেওয়াল দিয়ে ঘিরে মাটি রেখে সেখানে লাগানো হয়েছে ছোট ছোট গাছ।
কেউ সেই অংশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লে মাটিতে পায়ের চিহ্ন থাকার কথা। তেমন কিছুই দেখা যায়নি সেখানে। সব মিলিয়ে ঘটনাটাকে ওই বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের অনেকেই আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে পারছেন না।
এদিন ঘটনার খবর পেয়ে ধোয়ারবন্দ থেকে ছুটে আসা মাত্র অজিতের এক বোন মমতা দুবে জানান, অজিত আত্মঘাতী হওয়ার মত লোক ছিলেন না। মা বিদ্যারানী চৌবে এবং পত্নী রঞ্জনা চৌবেও বলেন অজিত আত্মঘাতী হওয়ার মতো লোক ছিলেন না। তবে রঞ্জনা জানান, কিছুদিন ধরে অজিতকে চিন্তামগ্ন মনে হতো। যদিও জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলেননি।
পুলিশ অবশ্য এই মুহূর্তে ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে রাজি নয়। পুলিশের সূত্র জানান, বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে আসলে ঠিক কি ঘটেছিল তা অনেকটাই খোলসা হয়ে যাবে বলে জানান সূত্রটি। জানা গেছে, অজিতদের ফ্ল্যাটের পাশে নাট মন্দিরের রয়েছে সিসি ক্যামেরাও। এই সিসি ক্যামেরার সূত্রেও অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।