অনলাইন ডেস্ক : চাকরি হারাতে চলেছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ১৭ জন পুলিশ আধিকারিক। এই ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জন ইনস্পেক্টর এবং ১ জন সাব-ইন্সপেক্টর। এদের মধ্যে রয়েছেন কাছাড়ে কর্মরত ইন্সপেক্টর ভণিতা দাসও।
সংবাদ সংসার খবর অনুযায়ী অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নিযুক্তি পাওয়া এই ১৭জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের মহা পরিদর্শক (প্রশাসন) পার্থসারথি মহন্ত চিঠি পাঠিয়েছেন গৃহ ও রাজনৈতিক বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অজয় তিওয়ারিকে। ১৭ জনের তালিকায় ভনিতা দাস ছাড়া অন্য যে ১৬ জন রয়েছেন তারা হলেন সহিদুর রহমান, ভাস্কর বর্মন, বদ্রিপ্রসাদ বারুবতী, হেমেন শর্মা, ফারুক আহমদ, অমর ঘোষ, নবোজিৎ তালুকদার, কামাখ্যা মিশ্র, আমিনুল ইসলাম, শশধর কলিতা, শরিফুল ইসলাম, উদ্দীপ্ত কলিতা, নীলিমা বড়ো, রিঙ্কুমনি কলিতা, পিঙ্কল গোস্বামী ও সুনিতা ডেকা। এর মধ্যে সহিদুর রহমান
বর্তমানে কামরূপ জেলায় পুলিশের বিশেষ শাখায় ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত, ভাস্কর বর্মন মরিগাও ডিইএফ-এর ইন্সপেক্টর, বদ্রিপ্রসাদ বারুবতি গুয়াহাটির সীমান্ত সংস্থায় সাব ইন্সপেক্টর, হেমেন শর্মা কোকরাঝাড় চরাইখোলার সপ্তম এপিবিএন-এর ইন্সপেক্টর, ফারুক আহমদ লক্ষিমপুর লীলাবাড়ির ১৩ এপিবিএন এর ইন্সপেক্টর, অমর ঘোষ বরপেটা ডিইএফ- এর ইন্সপেক্টর, নবোজিৎ তালুকদার সিআইডির ইন্সপেক্টর, কামাখ্যা মিশ্র কামরূপ ডি ই এফ এর ইন্সপেক্টর, আমিনুল ইসলাম সীমান্ত শাখার ইন্সপেক্টর, শশধর কলিতা হোজাই ডিইএফ-এর ইন্সপেক্টর, সরিফুল ইসলাম অগ্নি নির্বাপন এবং জরুরিকালীন সেবার ইন্সপেক্টর, উদ্দীপ্ত কলিতা, নীলিমা বড়ো, রিঙ্কুমনি কলিতা ও সুনিতা ডেকা বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর এবং পিংকল গোস্বামী কর্মরত রয়েছেন বিআইইও-র ইন্সপেক্টর হিসেবে। প্রসঙ্গত এদের মধ্যে অমর ঘোষও দীর্ঘদিন কাজ করে গেছেন কাছাড়ে। আর ভনিতা দাস মাস দুয়েক আগেও ছিলেন ট্রাফিক শাখার শিলচরের “সিটি ইন্সপেক্টর”। বর্তমানে তিনি রয়েছেন ছুটিতে।
২০০৭ এ সালের ২৩ নভেম্বর ১১৬টি সাব ইন্সপেক্টর পদের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। যাবতীয় প্রক্রিয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাছাইতালিকা প্রকাশ করে ১১৫ জনকে নিযুক্তি দেওয়া হয় । এরপর ১৭ জন বঞ্চিত প্রার্থী একাংশ প্রার্থীর নিযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গৌহাটি হাইকোর্টে মামলা করেন। এই মামলার শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই বাছাইতালিকা পুনরায় দুই মাসের ভেতর প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। যদিও হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় বঞ্চিত ১৭ প্রার্থী ২০১৫ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে ফের মামলা করেন। এরপর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের ৭ মার্চ পুলিশের ডিজিকে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তালিকায় নাম থাকা ১১৬ জনের মধ্যে ১৯ জনকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করে সেই স্থলে নতুনভাবে অন্য ১৯ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর সংশোধিত তালিকা পেশ করা হয় হাইকোর্টে। এর ভিত্তিতে হাইকোর্ট অবৈধভাবে নিযুক্তিপ্রাপ্ত ১৯ জনের স্থানে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৯ জনকে শীঘ্র নিযুক্তি দেবার নির্দেশ দেয়। এরপর পুলিশের মুখ্য কার্যালয় থেকে অবৈধ ১৯ জনের যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয় গৃহ বিভাগের কাছে। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯ জনের মধ্যে অঞ্জন চৌধুরী ও দীপঙ্কর শইকিয়া নামে দুজনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একজন এ পি এস সি পরীক্ষায় বসে অন্য নিযুক্তি পেয়ে যান। দ্বিতীয় জনকে সরাসরি অব্যাহতি দেওয়া হয়। যদিও ঝুলে থাকে অন্য ১৭ জনের ব্যাপারটা। এবার হঠাৎ করে গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) পার্থসারথি মহন্ত গৃহ ও রাজনৈতিক বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অজয় তিওয়ারির কাছে এই ১৭ জনকে নিয়ে চিঠি পাঠানোর পর এদেরও চাকরি হারানোর উপক্রম হয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে নিযুক্তি পাওয়ার পর এই ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনই সাব ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর স্তরে পদোন্নতি পেয়েছেন। এদিকে দীর্ঘ ১৬ বছর পর এদের চাকরি থেকে অপসারণ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হওয়ায় বিভিন্ন মহলে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারও। হাইকোর্টের নির্দেশের পর কেন আরও আগে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, কেন এতদিন ঝুলিয়ে রাখা হলো ব্যাপারটা, এনিয়ে প্রশ্ন উঠছে ওই সব মহল থেকে। আর এদের নিযুক্তির পেছনে সরকারের তরফে ভুল ছিল কিনা চর্চা শুরু হয়েছে এনিয়েও।