অনলাইন ডেস্ক : পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত কসরত করছে পুলিশ। অসম পুলিশের ফেসবুক পেজে এমন খবর আর ছবি আকসার দেখা যায়। কিন্তু কাটিগড়ায় ঘটে গেল উল্টো ছবি। যাবতীয় কসরতকে তুড়ি মেরে পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল তার দলবল! পুলিশ হেফাজতে গাড়ির ভেতর আবদ্ধ আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি তারা, বরং ব্যাপক মারধরও করেছে মামলাকারীকে। ঘটনার পরপরই পুলিশ কোনও মতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এলেও সেখানে বাঁধে প্রচণ্ড মারপিট। এতে মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন একজন।
ঘটনাটি কাটিগড়ার আমতলা বাজারে শনিবার সন্ধ্যায় সংঘটিত হয়। ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তের ওই বাজারে কাটিগড়া পুলিশের এএসআই উত্তম কুমার সিনহা গিয়েছিলেন এক মামলার আসামি ধরতে। সঙ্গে ছিলেন আরও পুলিশকর্মী। সেখানকার চণ্ডিনগর ২য় খণ্ডের গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন কালাইন লক্ষীপুরের কাওসার উদ্দিন। কাওসারের মূল বাড়িও চণ্ডিনগর ২য় খণ্ডে। তাদের লেনদেন বিষয়ক বিবাদের জেরে গিয়াসের বিরুদ্ধে শুক্রবার কাটিগড়া থানায় মামলা ঠুকেন কাওসার। শনিবার এএসআই সিনহার কাছে খবর আসে, অভিযুক্ত গিয়াস অটো গাড়ি নিয়ে আমতলা বাজারে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ দলবল নিয়ে গিয়াসকে ধরতে সেখানে পৌঁছে। এবং তখন গিয়াসকে ধরে তাদের গাড়িতে তুলেও নেয় পুলিশ। আর এতেই বাঁধে বিপত্তি। খবর মতে, তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছিল। বাজারেও বেশ জনসমাগম ছিল। এমন সময় আচমকা পুলিশের গাড়ি ঘিরে ফেলে গিয়াসের কয়েকজন নিকটাত্মীয়। তারা অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে। একসময় গাড়ির ভেতর দুই সিপাহির মাঝখানে বসা গিয়াসকে টেনে হেঁচড়ে বের করে চম্পট দেয় সবাই। এএসআই সিনহাও কসরত করে কূল পাননি। এতে পালিয়ে যায় আসামি গিয়াস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন থানায় মামলাকারী কাওসারও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। গিয়াসের লোকরা পুলিশের উপস্থিতিতেই কাওসারকেও প্রচণ্ড মারপিট শুরু করে। পুলিশ তখন গিয়াসের খোঁজ আর না নিয়ে কাওসারকে উদ্ধার করে থানায় ফিরে আসে। পরে থানায় দাঁড়িয়ে আহত কাওসার জানান, পুলিশের হাত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে অভিযুক্তের দল। এবং তাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। বছর কয়েক আগে তাঁর বাবাকেও এভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
এদিকে, আমতলা বাজারে তীব্র উত্তেজনা থাকা অবস্থায় পুলিশ সেই স্থান ত্যাগ করে। ফলে পুলিশ ফেরার পরই সেখানে প্রচণ্ড মারপিট শুরু হয়। গিয়াসের স্বজনেরা কাওসারের বাড়ির অন্যান্য লোকদের উপর চড়াও হয়। এতে কাওসারের তুতো-ভাই আলি হোসেনের মাথা ফেটে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে কোনও মতে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পুলিশ আহত আলি হোসেনকে হাসপাতালে পাঠায়। ওই মারপিঠে আরও কয়েকজন অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন বলেও জানা যায়।
অন্যদিকে, থানায় ফিরে আসার পর এএসআই উত্তম সিনহা ফের আমতলা বাজারে যান। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ততক্ষনে মারপিট থেমে যায় এবং পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া লোকদেরও টিকির নাগাল পাননি। পাননি মূল অভিযুক্ত গিয়াসকেও। পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এএসআই সিনহা। বলেন, মামলার তদন্ত শুক্রবারই করে এসেছেন তিনি। শনিবার নির্ভরযোগ্য খবরের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে ধরতে গিয়েছিলেন আমতলা বাজারে। ধরেও ছিলেন আসামি গিয়াসকে। কিন্তু গাড়িতে তোলার পর যখন থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন, তখনই বিপত্তি ঘটে। কিছু লোক এসে গিয়াসকে নিয়ে যেতে জোরাজুরি শুরু করে। একসময় ওই লোকরা গাড়ির ভেতর থেকে অভিযুক্তকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, মারপিটের ঘটনা নিয়ে শনিবার রাতে আহত আলি হোসেন মোট তিনজকে অভিযুক্ত করে এক মামলা দায়ের করেন। এরা হলেন গিয়াস উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন ও বাবুল উদ্দিন। তবে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশ কোনও মামলা করেছে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশের ভুমিকায় অসন্তুষ্ট এলাকার মানুষ। পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্ত ছিনিয়ে নেওয়াকেও ভালো চোখে দেখছেন না তারা। এতে পুলিশের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।