অনলাইন ডেস্ক : ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর একাংশ পড়ুয়ার মারপিটকে ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের রূপ নিল পিসি বড়জালেঙ্গা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল। আহত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হল তিন পড়ুয়া। মারপিটের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে গাফিলতি, পড়ুয়াদের সময়ে শাসন না করার অভিযোগ এনে এদের কাঠগড়ায় দাঁড় করান অভিভাবকদের একাংশ। একসময় মারমুখী এই অভিভাবকদের রোষের মুখে পড়েন অধ্যক্ষ প্রাণেশকুমার দেব সহ স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রাণ বাঁচাতে স্কুলের একটি কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষা করেন তাঁরা। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বা তারও বেশি সময় সেই বন্ধ ঘরেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও করে রাখা হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুরও চালানো হয় স্কুল ভবনে। একই সঙ্গে স্কুলের সম্মুখে শিলচর-হাইলাকান্দি রোডে গড়ে তোলা হয় অবরোধ। বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এলাকা অবরোধমুক্ত হলেও আতঙ্কের ছবিতে তেমন কোনও হেরফের ঘটেনি। সন্ধ্যার পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্ধার করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে আনা হয় শিলচরে।
শনিবার স্কুল ছুটির পর এই মারপিটের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বড়জালেঙ্গা, ছোট জালেঙ্গা সহ বৃহত্তর ধোয়াবন্দ ও তার আশেপাশে। গুরুতর আহত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে স্কুলের একাদশ শ্রেণির তিন পড়ুয়া। আহত পড়ুয়াদের মধ্যে দীনু তাঁতি ও সুরেশ তাঁতির বাড়ি ওয়েস্ট বড়জালেঙ্গা চা বাগানে, সঞ্জীব রাজোয়ার ধোয়ারবন্দের বাসিন্দা। অভিযোগ, সঙ্গীসাথী নিয়ে এদের ওপর দলবদ্ধ আক্রমণ চালিয়েছে স্কুলের-ই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নওবা সিংহ।সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শনিবার সব স্কুলেই অর্ধদিবস ছুটি। ঘটনার সূত্রপাত ছুটির এক-দেড় ঘণ্টা আগে। সকাল ১১টা নাগাদ। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা জানান, এ সময় একাদশ শ্রেণির ক্লাসে কোনও শিক্ষক ছিলেন না। যার সুযোগ নিয়ে ওই শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে নওবা সিংহ নামের সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াটি। কী কারণে সে বড়দের ক্লাসে প্রবেশ করল, এ নিয়ে তার সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে দীনু তাঁতিরা। অভিযোগ, বচসা চলাকালে ছুটির পর দীনুদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় নওবা। উল্লেখ্য, নওবার বাড়ি স্কুলের পাশের গ্রামে। ফলে তার এই হুমকি হালকাভাবে না নিয়ে স্কুল অধ্যক্ষ প্রাণেশ কুমার দেবকে সবকিছু বিস্তারিত জানায় দীনু ও তার সহপাঠীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে তেমন গুরুত্ব দেননি অধ্যক্ষ। ছুটির পর দীনুদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়। নওবা ও তার সঙ্গীদের দলবদ্ধ আক্রমণে গুরুতর আহত হয় দীনু ও সহপাঠীরা। এদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে ওয়েস্ট বড়জালেঙ্গা চা বাগান, ধোয়ারবন্দ ও আশপাশ এলাকা থেকে আক্রান্ত পড়ুয়াদের অভিভাবক সহ কয়েক শতাধিক মারমুখী জনতা এসে চড়াও হন স্কুলে। এদের দলবদ্ধ আক্রমণ থেকে বাঁচতে স্কুলের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে আত্মরক্ষা করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছয় যে, কক্ষের চালে উঠে টিন খুলে শিক্ষকদের ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়। ভাঙচুর চলতে থাকে স্কুল ভবনে। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত অসহায় শিক্ষকেরা টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় সাহায্যের আবেদন জানান। এসবের মাঝখানে অবরোধ গড়ে তোলা হয় শিলচর-হাইলাকান্দি রোডে।
ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে পুলিশ বাহিনী সহ অকুস্থলে গিয়ে হাজির হন কাছাড় জেলার শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এডিসি বহ্নিকা চেতিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার সেন। অবরোধকারী অভিভাবকেরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। নওবাদের বাড়ি স্কুলের পাশে থাকায় তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছে দূর থেকে আসা পড়ুয়ারা। অধ্যক্ষকে নালিশ করেও সুফল মেলেনি। আজ সমস্ত সমস্ত সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে তাদের। তারা কয়েকজন শিক্ষকের বদলির আবেদন জানান। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের যাবতীয় অভিযোগ শোনার পর প্রশাসনিক আধিকারিকরা এদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অবরোধমুক্ত করেন সড়ক। অধ্যক্ষ সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্ধার করে আনা হয় জেলা কমিশনারের কার্যালয়ে। জানা যায়, শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবার পর নিরাপত্তা জনিত কারণে স্কুলের অধ্যক্ষ প্রাণেশ কুমার দেবকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলা কমিশনার রোহন কুমার ঝা।