অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি (সিআরপিসি), অসম-এর পক্ষ থেকে।সেদেশে বর্তমানে তালিবানিরাজ কায়েম করে পুন: পাকিস্তানিকরনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ এনে সংখ্যালঘু এবং আওয়ামীলীগ সদস্যদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশ ইস্যুতে এভাবে একযোগে সরব হলেও সেদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ ইউনূসকে ঘিরে অবশ্য তাদের মুখে শোনা যায় ভিন্ন ভিন্ন সুর।
রবিবার কমিটির পক্ষ থেকে শিলচরে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপদেষ্টা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশীদের দেশ। আর বাঙালি হিসেবে ওই দেশের প্রতি আলাদা একটা আবেগও রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় তারা চুপ থাকতে পারেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের বর্তমানে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বদলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে সে দেশে আন্দোলনকারীরা বাংলা বর্ণমালা মুছে লিখে দিয়েছে উর্দু বর্ণমালা। শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি সহ ভেঙ্গে দিয়েছে জাতীয় জাদুঘর। এসবের মাঝে আবার সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে তালিবালি কায়দা কানুন লাঘু হয়েছে। আর এভাবে দেশটার পাকিস্তানিকরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তপোধীরবাবু বলেন বাংলাদেশে এই যে উগ্র ধর্মান্ধ গুষ্টি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এর পেছনে রয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদত,রয়েছে চীনের সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপও। আর মো: ইউনুস মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হাতের পুতুল ছাড়া আর কিছু নন। তাই তার হাত ধরে বাংলাদেশ ফের সূস্থির হয়ে উঠবে
এমন আশা করা দুরাশা মাত্র। ইউনূসের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে ড: ভট্টাচার্য বলেন, দায়িত্ব পেয়েই ইউনুস ভারতের “সেভেন সিস্টার” হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলো এবং মায়ানমারকে ঘিরে যেভাবে হুমকি দিয়েছেন এবং তার নিজের দেশে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করে দেবার কথা বলেছেন, এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে তার উদ্দেশ্য মোটেই ইতিবাচক নয়।
কথার সূত্রে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সংখ্যালঘু হওয়াটা কি অপরাধ। কেন এদের উপর নির্যাতন হবে। এরপর বলেন, শুধু আমরা ধর্মনিরপেক্ষ হলেই চলবে না প্রতিবেশী রাষ্ট্রকেও সেই পথেই চলতে হবে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতেই হবে বাংলাদেশ সরকারের। অন্যথায় এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কোনওভাবেই শান্তি ফিরে আসবে না।
কমিটির সচিব প্রধান সাধন পুরকায়স্থ বলেন, বাংলাদেশে যে অরাজকতা চলছে তা শীঘ্র বন্ধ না হলে ভারতে এর প্রতিক্রিয়া হওয়াটা স্বাভাবিক। সিআরপিসি চায় না কোনও প্রতিক্রিয়া হোক। তবে যেভাবে সীমান্তে এসে হাজার হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘু লোক জড়ো হয়েছেন ভারতে আশ্রয় চেয়ে, এথেকেই স্পষ্ট সে দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নেই। তিনি বলেন ছাত্রদের আন্দোলন ছিল সংরক্ষণের বিরুদ্ধে, কিন্তু পরবর্তীতে তা পরিণত হলো সরকার এবং সংখ্যালঘু বিরোধী আন্দোলনে।যারা এসব করছে তারা বাংলাদেশকে ভালোবাসে না। আমরা চাই আবার স্বাধীন মুক্ত চিন্তার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
সিআরপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সামঞ্জস্য রয়েছে। তাই বাংলাদেশের বর্তমানের অস্থিরতায় তারা নীরব থাকতে পারছেন না। তবে ইউনূস সম্পর্কে তার কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। উনার সম্পর্কে তার বিশেষ কিছু জানা নেই। তবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ইউনৃস মন্তব্য করেছেন, তাকে ধরে এনে দায়িত্ব দেওয়ার পর যদি এসব হত্যা লীলা ও অরাজকতা চালিয়ে যাওয়া হয়, তবে তিনি আর দায়িত্বে থাকবেন না। এই মন্তব্য থেকে বুঝা যায়, ইউনূসের মধ্যে একটা সদিচ্ছা রয়েছে । সঙ্গে তিনি যেভাবে গণভবনে লুট করা হয়েছে এর তীব্র নিন্দা জানান।
কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্ররা মহৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের আন্দোলন শুরু করেছিল। তবে কিছু উগ্র জাতীয়তাবাদী অসৎ উদ্দেশ্য তাদের হাত থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমানে যিনি নেতৃত্বে এসেছেন সেই ইউনুসকে
বলা হয় সুদখোর। ঘরবাড়ি ভেঙ্গে, সুদের পয়সা নিয়ে যান গরিব মানুষের কাছ থেকে। উনার গ্রামীন ব্যাংকের সুদের হার পৃথিবীর অন্য যেকোনও ব্যাংক থেকে বেশি। ভারতের সেভেন সিস্টার এবং মায়ানমারে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি যে হুমকি দিয়েছেন তাও খুবই নিন্দনীয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংগঠনের অন্য কর্মকর্তা সমীরণ চৌধুরী বলেন, ইউনূসের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কতখানি নিরাপত্তা পাবেন এনিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।