অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশে উত্তাল পরিস্থিতির মাঝে সেদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সন্দেহে একদল উন্মত্ত লোকের হামলার শিকার হলেন দুই ব্যক্তি। শুক্রবার সকালে শিলচর তারাপুর শিববাড়িরোডে ঘটে এই ঘটনা। পুলিশ মারমুখী লোকেদের হাত থেকে দুজনকে উদ্ধারের পর অবশ্য বেরিয়ে এসেছে অন্য কাহিনী। পুলিশের এক সূত্র জানান এই দুজন ভারতীয়, তবে সন্দেহ করা হচ্ছে এদের সংযোগ থাকতে পারে বিদেশি মুদ্রার অবৈধ কারবারে।
যে দুজন লোক হামলার শিকার হয়েছেন এদের একজনের বাড়ি এজেলারই কাটিগড়া থানা এলাকার শিবনারায়নপুরে। চৌধুরী পদবীর বছর ৩৯-এর ওই ব্যক্তি ছিলেন সেখানকার এক মসজিদের ইমাম। অন্যজন বছর ১৯-এর শেখ পদবীর এক যুবক। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজারঘাটের বাসিন্দা এই যুবক শিলচর আশ্রম রোড এলাকায় ভাড়াঘরে থেকে কাজ করেন এক নির্মাণ সংস্থায়।
জানা গেছে এদিন যখন দুজন হামলার শিকার হন তখন তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। আশপাশের লোকেরা তাদের কথাবার্তা থেকে সন্দেহাতুর হয়ে ধরতে গেলে দুজন পালিয়ে যান। চৌধুরী ও শেখ পদবীর দুজনকে পাকড়াও করে উত্তম মধ্যম দেওয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
চৌধুরী পদবীর ব্যক্তিটি পুলিশকে জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে বদরপুরে তার সঙ্গে পরিচয় হয় শেখ পদবীর যুবকের এক সঙ্গীর। ওই সঙ্গী জানায়, তার কাছে সৌদি আরবের কিছু মুদ্রা রয়েছে। সেসব ভারতীয় মুদ্রায় বদলে দিলে উভয় পক্ষেরই লাভ হবে। এই টোপ গিলে শেখ পদবীর যুবকটির সঙ্গীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে এদিন তিনি আলগাপুর এলাকার বাসিন্দা তার নিজের এক সঙ্গীকে নিয়ে হাজির হন শিলচরে। অপরদিকে যে লোকটি আরবের মুদ্রা বদলে দিতে বলেছিল সেও হাজির হয় সঙ্গী শেখ পদবীর যুবককে নিয়ে। তারা আরবের মুদ্রা বদল নিয়ে কথাবার্তা বলার সময় আশপাশের লোকেরা হঠাৎ করে তাদের উপর হামলা চালান। সেসময় তার সঙ্গী আলগাপুরের বাসিন্দা ব্যক্তি ও শেখ পদবীর যুবকটির সঙ্গী পালিয়ে গেলেও তারা পালাতে পারেননি।
শেখ পদবীর যুবকটি জানিয়েছেন, তিনি উত্তর ২৪ পরগনার বাড়ি থেকে শিলচরে এসেছেন প্রায় ৭-৮ মাস আগে। এখানে আগে থেকেই রয়েছেন তার ভাই। তারা দুই ভাই একসঙ্গে আশ্রম রোডে ভাড়া ঘরে থেকে কাজ করেন। তার যে সঙ্গী তাকে নিয়ে এসেছিল, সে পশ্চিমবঙ্গেরই নদীয়ার বাসিন্দা। তবে বেশ কিছুদিন ধরে রয়েছে শিলচরে। যদিও শিলচরে সে ঠিক কোথায় থাকে তা তার জানা নেই। নদীয়ার বাসিন্দা সঙ্গীর সঙ্গে এসেই ফেঁসে যান তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে শেখ পদবীর যুবকের সঙ্গে ছিল একটি ব্যাগ। আর ওই ব্যাগে পাওয়া গেছে কিছু সৌদি আরবের মুদ্রা। তবে এসব আসল না নকল এনিয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ থেকে পুলিশ অনুমান করছে এরা বিদেশি মুদ্রার অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এনিয়ে বর্তমানে তদন্ত চলছে।
পুলিশ এদের কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত শুরু করলেও এভাবে হঠাৎ করে কারও উপর হামলা না চালানোর জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে পুলিশকে জানানোটা অবশ্যই কর্তব্য। কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াটা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কেউ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা চালালে কড়া হাতে দমন করা হবে তা।