অনলাইন ডেস্ক : নোবেলজয়ী ড. মহম্মদ ইউনূসের জন্য উদগ্রীব বাংলাদেশ। তাকে অভিনন্দন জানাতে গোটা দেশের মানুষ অপেক্ষায়। এমন এক পরিস্থিতিতে প্যারিস থেকে দুপুরে ঢাকায় পৌছেন ড. ইউনূস। তার আগমণে বিমানবন্দর জুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। এর আগে প্যারিস স্থানীয় সময় বুধবার ঢাকার পথে রওনা দেন। দুবাইয়ে ট্রানজিটকালে নিরাপত্তার কারণে তার সঙ্গে কাউকে সাক্ষাত করতে দেয়নি বলে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ১০ মিনিটে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন ড. ইউনূস। সেখানে সেনাপ্রধান তাকে অভ্যত্থনা জানান। বিমান বন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তার গুলশানের বাসভবনে স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান এবং তারপর সরাসরি বঙ্গভবনে যান। সেখানেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং রাত ৮টায় অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে শপথ নেবেন। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান ড. ইউনূস। তার নেতৃত্ব, পরিপক্কতা এবং সততা দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারবেন বলেই বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস। অধ্যাপক ইউনূস সাহসী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। এ আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দেওয়ার জন্য তিনি জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। উল্লেখ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশী সামাজিক উদ্যোক্তা, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের নেতা। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বৃহস্পতিবার শপথ নিতে যাচ্ছেন। ড. ইউনূস ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্রবিত্ত ধারণার প্রবর্তনের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। এই ঋণগুলি এমন উদ্যোক্তাদের দেওয়া হয় যারা প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণের জন্য যোগ্য নয়। ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের প্রচেষ্টার জন্য। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বলেছিল যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করা সম্ভব নয় যদি বড় জনসংখ্যা গোষ্ঠী দারিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে না পায় এবং সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার বিভিন্নতার মধ্যে, ইউনুস এবং গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে যে এমনকি সবচেয়ে দরিদ্র মানুষও তাদের নিজস্ব উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারে। ড. ইউনুস বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মাননা। তিনি প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পান, পরে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পান। ২০২০ সালে তিনি ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি থেকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে ইউনুস সাস্কিয়া ব্রুইস্টেন, সোফি আইজেনম্যান এবং হ্যান্স রাইটজের সাথে একত্রে ইউনুস সামাজিক ব্যবসা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস প্রতিষ্ঠা করেন। ইউনুস সামাজিক ব্যবসা সারা বিশ্বে সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সামাজিক ব্যবসা তৈরি ও ক্ষমতায়িত করে। ইউনুসের নতুন, মানবিক পুঁজিবাদের দৃষ্টিভঙ্গির আন্তর্জাতিক বাস্তবায়ন শাখা হিসেবে এই সামাজিক ব্যবসা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সামাজিক ব্যবসার জন্য ইনকিউবেটর তহবিল পরিচালনা করে এবং কোম্পানি, সরকার, ফাউন্ডেশন এবং এনজিওদের পরামর্শ সেবা প্রদান করে। ২০১২ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হন এবং এই পদে তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি তার অর্থনৈতিক কাজের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেছেন। তিনি গ্রামীণ আমেরিকা এবং গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড সদস্য, যা ক্ষুদ্রঋণকে সমর্থন করে। ইউনুস ১৯৯৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কার্যক্রমকে সমর্থনকারী জনহিতকর সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করেন