অনলাইন ডেস্ক : গ্ল্যামারাস একটা ফাইনাল। টান টান উত্তেজনা। স্নায়ুর তার ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম। পেন্ডুলাম কখনও এদিকে তো কখনও ওদিকে। একের পর এক মোমেন্ট। নার্ভ ধরে রেখে গৌরবের হাসির ঝিলিকটা রোহিত, হার্দিকদের ঠোঁটেই খোঁজে পেলেন ক্যামেরাম্যানরা। রোমাঞ্চের স্রোতে ভেসে ক্যারিবিয়ান উপকূলে কুড়ির মহারণে বিশ্বসেরা ভারত। ১৭ বছর পর ক্রিকেটের সবচেয়ে নবতম তথা বর্ণময় সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হল টিম ইন্ডিয়া।
সেই ট্রেডিশন সমানেই এগোলো । আরও এক দুঃখরজনীর সাক্ষী থাকল প্রোটিযারা। রূপকথার রচনা লিখেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন থেকে একধাপ পিছনে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও বিশ্বকাপ পৌছালো না রামধনুর দেশে।
ব্যর্থতার গোলার্ধে থাকতে থাকতে ক্লান্ত বিরাট ফাইনালকেই কিছু একটা ‘বিশেষ’ করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। প্রথম বল থেকেই নিজের প্ল্যানটা এক্সিকিউট করতে থাকেন দা গ্রেট ‘ ভিকে ‘। জানসেনের প্রথম ওভারেই নিজের ভিকে ট্রেডমার্ক লাগানো তিনটে চার। দেখে মনেই হচ্ছিল না যে এই লোকটাই ব্যর্থতার নিঝুম রাতে হারিয়ে বসতে বসেছিল ক্যারিবিয়ান উপকূলে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ( ৮) ছিলেন চেনামেজাজে। রাজকীয় মেজাজে মহারাজের প্রথম দু বলে দুটি চার। এরপরই ছন্দপতন। সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ ধরিয়ে বসেন ক্লাসেনকে। রোহিতের এই আউটকে সিলেবাসের বাইরে ফেললে চলবে না। কানেক্ট হয়নি বলে মাঠ শান্ত হয়ে গেল। নইলে তো একশোর উপর ডেসিবেলে শব্দদানবের হুঙ্কার আসতো – কাম অন রোহিত। তবে পন্থ ( ০) এবং সূর্যকুমারের (৩) আউটকে কোনোভাবেই চেক পয়েন্টের ‘ গ্রিন সিগন্যাল ‘ দেওয়া যাবে না। ধৈর্যটা যদি থাকতো তাহলে ফাইনালটা এই দুজনের নামে লেখা থাকতো। তবে শুধু ফাইনাল নয় পুরো আসরেই বৈচিত্রের নাম হল অক্ষর প্যাটেল ( ৪৭)। গুজ্জু ভাই সবেতেই দশে দশ। রান করেছেন, উইকেট নিয়েছেন আবার ক্রাঞ্চ মোমেন্টে দারুণ ক্যাচও ধরেছেন অক্ষর। টপ অর্ডার ধসে যাওয়ার পর বিরাটের সঙ্গে কাউন্টার অ্যাটাক করেন। ৭২ রানের পার্টনারশীপটা জিইয়ে তুলে নীল সেনাকে। ডি ককের দারুণ একটা থ্রো ক্রিজে অক্ষরের সুইসাইডের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিরাটকে দেখে একসময় অনেকটাই নিষ্প্রভ মনে হচ্ছিল। তবে শেষদিকে দশবছর আগের অবতারে ফিরে আসেন কোহলি। গ্রেটরা নাকি নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে বড় মঞ্চকেই বাছাই করেন বলে গল্পে গল্পে শুনেছি। বিরাটের ৭৬ রানের ইনিংসে সেটা চাক্ষুস দেখেও নিলাম। শিবম দুবেও ১৬ বলে ২৭ রানের একটা সময়োপযোগী ইনিংস উপহার দিলেন। ফাইনালের মত একটা ম্যাচে ১৭৭ রানের টার্গেটকে কোনোভাবেই ছোট বলা যাবে না।
এবারের আসরে টিম ইন্ডিয়ার একটা বিষয় কিন্তু বেশ নজর কেড়েছে। সেটা অবশ্যই বোলিং। ব্যাটাররা রান কম করলেও উতরে দিয়েছেন বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। রেজা হেন্ডেরিক্স এবং মার্করাম শুরুতেই ফেরেন। ম্যাচটার কন্ট্রোল রোহিতদের হাতেই ছিল। লুটেরা হয়ে সেই রাশ ছিনিয়ে নেন ডি কক ( ৩৯), স্ট্যাবস (৩১), ক্লাসেনরা ( ৫২)। আফ্রিকানদের আগ্রাসনে একসময় অসহায় লাগছিল ভারতীয় বোলারদের। ক্লাসেন যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন বেশি বেগ পেতে হয়নি ভারতীয় ফিল্ডারদের। আকাশে আকাশে ট্রেভেল করছিলো ক্লাসেনের শটগুলি। ক্লাসেন ঝড়ে তো একসময় মনে হচ্ছিলো এক দুই ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচটা শেষ হবে যাবে। তারপরই একটা টুইস্ট চলে আসে। স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ম্যাচের ধারা পাল্টে দেন পান্ডিয়া। এরপর আলাদা অক্সিজেন পেয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। জানসেনকে বোল্ড করেন বুমরা। এরপর!!! অকল্পনীয়, অতিমানবীয় নাকি অলৌকিক বলব সূর্যকুমারকে। বাউন্ডারী লাইনে অসম্ভব ভাল একটা ক্যাচ ধরেন সূর্য। তাও আবার মিলারের। সাত রান আগে থামে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ব্যস কেল্লাফতে। বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু তারপর সুখের কান্নায় ভেসে যাচ্ছিলো ব্রিজটাউনের আউটফিল্ড।
২০০৭ সালের ধোনি। আর আজকের রোহিত। বিরাটের বিদায়বেলায় ভারত আবার কুড়ির ক্রিকেটের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। উল্লেখ্য ফাইনালের সেরা এবং আসরের সেরা হন যথাক্রমে বিরাট এবং বুমরা।
ম্যাচ শেষ হতেই বৃষ্টি নামে। মাঠ জুড়ে গান বেজে যাচ্ছে। ভারতীয়দের কানে যা খুবই মধুর লাগছে। প্রোটিয়াদের কাছে হয়তো অসহ্য। কিন্তু গান থামবে কেন? ক্রিকেট আর জীবন তো এরকমই। কেউ হাসে তো কেউ কাঁদে। আর জিতে যায় খেলাটা।