অনলাইন ডেস্ক : এবার ঘুষ কাণ্ডে থাবা পড়ল কাছাড়ের জেলাশাসকের কার্যালয়ে। ঘুষ নেওয়ার সময় কার্যালয়ের উচ্চবর্গের সহায়ক সৌম্যব্রত ভট্টাচার্যকে পাকড়াও করল পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। গুয়াহাটি থেকে আসা দুর্নীতি দমন শাখার একটি দল ফাঁদ পেতে বুধবার পাকড়াও করে সৌম্যব্রতকে।
সৌম্যব্রত জেলাশাসকের কার্যালয়ে রাজস্ব শাখায় কর্মরত। পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার এক সূত্র জানান, তিনি শিলচর শহর সংলগ্ন রামনগর এলাকার বাসিন্দা রাধেশ্যাম সাহু নামে এক ব্যক্তির কাছে ঘুষ দাবী করেছিলেন। রাধেশ্যাম সেখানে নিজের বাড়ির কাছে কিছুটা জমি ক্রয় করেছিলেন। যিনি বিক্রি করেছিলেন তার তুতো ভাই পরিচয়ে একজন এনিয়ে আপত্তি জানান। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, জমিতে তারও অংশ রয়েছে। যদিও শুনানির দিনগুলোতে আপত্তি জানানো সেই ব্যক্তি ছিলেন
গরহাজির। এই অবস্থায় রাধেশ্যাম তার পক্ষে যাতে নিয়মমাফিক একতরফা রায় দেওয়া হয়, এ নিয়ে আর্জি জানান। যদিও সৌম্যব্রত একতরফা রায় পাইয়ে দিতে ঘুষ দাবি করেন বলে অভিযোগ। সাহু
দাবি মতো কয়েক কিস্তিতে বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু এরপরও সৌম্যব্রত দাবি করতে থাকেন আরও অর্থ। সাহু বেশ কিছুদিন ঘুরাঘুরির পরও সৌম্যব্রত কাজ করে না দেওয়ায় তিনি দ্বারস্থ হন দুর্নীতি দমন শাখার।
অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন শাখা সৌম্যব্রতকে হাতেনাতে ধরার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করে। মঙ্গলবার গুয়াহাটি থেকে একটি দল এসে পৌঁছায় শিলচরে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশেষ ধরনের রাসায়নিক লাগিয়ে সাহুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ২ হাজার টাকা। সাহু এই টাকা নিয়ে বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ জেলাশাসকের কার্যালয়ে যান সৌম্যব্রতর হাতে তুলে দিতে। আর দুর্নীতি দমন শাখার কর্মী -আধিকারিকরা সাদা পোশাকে ওৎ পেতে থাকেন আশেপাশে। সাহু টাকা সৌম্যব্রতর হাতে তুলে দিতেই দুর্নীতি দমন শাখার কর্মী আধিকারিকরা ধরে ফেলেন তাকে। সৌম্যব্রতকে ধরার পর অবশ্য তিনি গা বাঁচাতে টাকা হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেন নিচে মেঝোয়। টাকা ছুঁড়ে ফেলে দিলেও রাসায়নিকের প্রভাবে পরবর্তীতে প্রমাণ হিসেবে তার হাত জলে ডুবালে সেই জল লাল হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন শাখার এক সূত্র। এদিন সৌম্যব্রতকে ধরার পাশাপাশি কাঁঠাল রোডে তার বাড়িতে গিয়েও তল্লাশি চালানো হয় বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত সৌম্যব্রত জেলা প্রশাসনিক কর্মচারী সংস্থার কাছাড় জেলা কমিটির সহ-সভাপতি পদেও রয়েছেন।
অভিযোগকারী রাধেশ্যাম সাহু জানিয়েছেন, তিনি জমি কিনেছিলেন প্রায় তিন বছর আগে। জমি তার নামে পঞ্জিকরনের প্রক্রিয়া চলার মধ্যে হঠাৎ করে জানতে পারেন একজন নাকি আপত্তি জানিয়েছেন। এনিয়ে শুনানি প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায় আপত্তি জানানো লোকটি গরহাজির থাকছেন প্রতিদিনই। প্রায় তিন বছর ধরে একের পর এক শুনানির দিনে তিনি হাজির হলেও আপত্তি জানানো লোকটির দেখা মেলেনি। আর প্রত্যেক শুনানির দিনেই সৌম্যব্রত তাকে টাকা দিতে বাধ্য করেছেন।
এভাবে প্রত্যেকদিন দিতে দিতে তিনি গুনে দিয়েছেন প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এধরনের ক্ষেত্রে যদি অভিযোগকারী লাগাতার কয়েকদিন শুনানিতে গরহাজির থাকেন, এবং তার তরফে কিছু জানানো না হয় তবে অন্য পক্ষকে একতরফা রায় দিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু সৌম্যব্রত এমনটা ঘটা সত্বেও সেই ব্যবস্থা না করিয়ে, শুধু শুনানির তারিখ ধার্য করতে থাকেন। আর প্রতিদিন তার কাছ থেকে আদায় করতে থাকেন অর্থ। এভাবে চলতে চলতে একসময় তিনি বুঝে যান, সৌম্যব্রত দীর্ঘ সময় ধরে তার কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তালে রয়েছেন। তাই তিনি দ্বারস্থ হন দুর্নীতি দমন শাখার।
সাহু এদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনও সন্দেহ করে ব্যক্ত করেন যে, সৌম্যব্রতই হয়তো ভুয়ো কোনও লোকের নামে আপত্তি করিয়েছেন। যাতে করে দীর্ঘদিন ধরে এর সূত্রে তিনি তার (সাহুর) কাছ থেকে আদায় করতে পারেন অর্থ। বাস্তবে হয়তো লোকটির সঙ্গে তার কেনা জমির কোনও সম্পর্কই নেই। তাই বারবার বলা সত্ত্বেও সৌম্যব্রত আপত্তি জানানো লোকটির পরিচয় খোলসা করেননি।