অনলাইন ডেস্ক : ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষা এখনও শুরু-ই হয়নি। অথচ গত কয়েকদিনের মাঝারি বৃষ্টিতে-ই জলে ভাসছে শিলচরের এক বড় অংশ। যদি এখনই এই হাল তবে ভরা বর্ষায় কী ঘটতে পারে, সেটা ভেবে এখন থেকেই শিউরে উঠছেন অনেকে।
গত রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাতের বর্ষণের পর সোমবার সকালে শহরের ব্যস্ততম ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট, ইন্দিরা সরণি, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সোনাই রোড, নাগাটিলা, উত্তর কৃষ্ণপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। জলে ডোবা রাস্তায় যানবাহন ফেঁসে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। চরম ভোগান্তির শিকার হয় শহরের জনজীবন। এরপর অতিবাহিত হয়েছে চারদিন। কিন্তু ভোগান্তির চিত্রে আসেনি কোনও বদল। সোনাই রোড, নাগাটিলা, উত্তর কৃষ্ণপুর ও ন্যাশনাল হাইওয়ে এলাকায় সড়কের ওপর এখনও হাঁটু জল।
শহরে জমা জলের সমস্যা নতুন কিছু নয়। গত তিন-চার দশক ধরে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সমস্যাটি। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, আগে শহরের কয়েকটি বিশেষ জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল জমা জলের সমস্যা। বর্তমানে সম্প্রসারিত হতে হতে নাগাটিলা, উত্তর কৃষ্ণপুর এলাকায় গিয়ে পৌছেছে এই সমস্যা। গত কয়েক বছরে ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট সহ গোটা নিউ শিলচর এলাকায় জমাজলের প্রকোপ বেড়েছে কয়েকগুণ ! খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, এর পেছনে রয়েছে অতীত ও বর্তমান সরকারের গাফিলতি, সঠিক পরিকল্পনা এবং সদিচ্ছার অভাব।
শহরের এই জলছবি বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার দিকটি ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সামনে চলে এসেছে পুরসভার ব্যর্থতা। নাগরিকদের অভিযোগ,শহরের নিকাশি নালাগুলোর বেহাল অবস্থার জন্য ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঝারি বৃষ্টিতেই যেভাবে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য এবার বর্ষায়ও শহরের সিংহভাগ এলাকার বাসিন্দাদের থাকতে হবে জলবন্দি হয়ে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা, সুপরিচিত সমাজকর্মী সাধন পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, আগে কনকপুর, পেশকারের জাঙ্গাল, নাগাটিলা, উত্তর কৃষ্ণপুর ইত্যাদি এলাকার জল বেরিয়ে যেত বাচৈ খাল হয়ে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ওইসব এলাকায় জনবসতি গড়ে ওঠায় জল গিয়ে বাচৈ খালে পড়তে পারছে না। গতিপথ পাল্টে সেই জল চলে আসছে নিউ শিলচর এলাকায়।
এদিকে, ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট সংলগ্ন লঙ্গাই খাল দিয়ে এত জল বেরিয়ে যাওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কারণ, দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে ধুঁকতে থাকা লঙ্গাই খালে আবর্জনা জমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, ওই নালা দিয়ে জল কাটতেই পারছে না। তাছাড়া, খালের মাঝখানে তৈরি হওয়া প্রতিটি কালভার্টের পরিসর এতই ছোট যে, সেটাও জল বেরিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এ-ই নয়, কালভার্ট-এর নিচ দিয়ে জলের পাইপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই পাইপের কারণে আবর্জনা আটকে তা জলের স্রোতের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করছে। সব মিলিয়ে বৃহত্তর সোনাই রোড সহ নিউ শিলচর এলাকায় জমাজলের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধনবাবু বলেছেন, জমা জলের সমস্যা নিরসনে জলের গতিপথ বিভাজিত করে একটা অংশকে নিয়ে ফেলতে হবে বাচৈ খালে। সঙ্গে লঙ্গাই খালের খনন এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রতিটি কালভার্ট পুনর্নির্মাণ করতে হবে। খালের ডাউন স্ট্রিম-এও একইভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। কারণ, পুরসভা দিয়ে এ সমস্যা সমাধান হবে না। এজন্য পদক্ষেপ করতে হবে জলসম্পদ বিভাগকে। এবং সেটা করতে গেলে প্রকল্প তৈরি করে সে অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ করতে হবে সরকারকে।
বছর কয়েক আগে তৎকালীন জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন শহর বাসীর মনে আশার সঞ্চার করেছিলেন। পুরসভার সহযোগিতায় রাঙ্গিরখাঁড়ি নালায় বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছিল জবরদখল মুক্ত করার অভিযান। কিন্তু রাঙ্গিরখাঁড়ি শিবকলোনি থেকে সুভাষনগর, কলেজরোড হয়ে সৎসঙ্গ আশ্রম রোডে গিয়েই মুখথুবড়ে পড়ে সেই অভিযান।নিকাশি নালার ডাউন-স্ট্রিম-এ কার্যত হাতই দেওয়া হয়নি। ফলে জমাজল সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধান হাতের কাছে এসেও থেকে যায় অধরা।অথচ সূত্রের খবর,ওই সময় উচ্ছেদ অভিযানের জন্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্যসরকার।
কিন্তু জমাজল সমস্যা?
এ যেন থোড় বড়ি খাড়া,খাড়াবড়ি থোড়। জলে ভেসেছে সোনাইরোড,লিঙ্করোড সহ বৃহত্তর নিউশিলচর এলাকা। ভোগান্তির চরমেও এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকেরা কাদা ছুড়েছেন বিরোধী শিবিরে। কিন্তু যে যাই বলুন, সমস্যার তিমিরেই রয়ে গিয়েছে এই শহর।