অনলাইন ডেস্ক : পথ ঘাট। অলিগলি। বাদ যায়নি স্কুল চত্বরও। কালবৈশাখীর বজ্রআটুনি এবং ধারা বর্ষণে নাজেহাল অবস্থা রংপুরবাসীর। মাস্টার ড্রেনেজ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতির বন্যায় আজ দুর্গতির কাঁটাতার অতিক্রম করে অবহেলিত অঞ্চলটির পিঠ দেওয়ালে গিয়ে ঠেকেছে।
বছরের এই সময়টাতে তেমন একটা বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। কাল বৈশাখীর ঝড়ে গাছ গাছালির নৃত্যঙ্গনে আমরা সুর ধরি – ‘ এসো হে বৈশাখ।’ বায়ুদেবতাও এই আহ্বানে আসেন আবার নিজের সাধ্যমত শক্তির প্রদর্শন করে চলেও যান। এই ট্রেডিশনটা বছর বছর ধরে সমানতালে চলছে। কিন্তু এবারের চিত্রটা সামান্য ভিন্নতর। সময়ের আগেই ধারাবর্ষণের ‘ ধারা ‘ আছড়ে পড়েছে এই অঞ্চলে। ফলে প্রকৃতির হুঙ্কার এবং আবহাওয়া বিভাগের সাবধানবাণীর মেলবন্ধনে দুর্গতি, বিড়ম্বনা এসব বিশেষণ মিলেমিশে একাকার। গত এক সপ্তাহের রাতের ধারা বর্ষণে পথ ঘাট আর চেনার উপায় নেই। প্রকৃতির বারিধারায় রাস্তাঘাট, নালানর্দমা সবকিছু মিলেমিশে একাকার। রংপুরের সবচেয়ে বড় স্কুল ঐতিহ্যেবাহী বি সি রায় একাডেমির চত্বর জলমগ্ন। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায় হাঁটু জল। যারদরুণ শিক্ষক শিক্ষিকাদের পাশাপাশি পড়ুয়াদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এরকম যদি বর্ষণ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীদিনে স্কুল বন্ধের ঘোষণা করতে হবে কতৃপক্ষকে। তেমনি ব্যাংক সংলগ্ন টেগোর স্কুলে যেতেও হাঁটু জলের বাধা ডিঙিয়ে যেতে হচ্ছে। তেমনি রাজপথ সংলগ্ন এডিসি গলি, নরসিং পাড়া, শান্তি পাড়া, গঙ্গাপাড়া, করাতিগ্রাম, বারোঘর, শিমুলতলা এলাকার প্রত্যেক গলি কিংবা বাড়ি এই মিনি বন্যায় আক্রান্ত। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের আগুন পুঞ্জীভূত হচ্ছে।
রংপুর অঞ্চলে জমাজলের সমস্যাটা নতুন কিছু নয়। শহরতলি এলাকাটা পুরসভা অঞ্চলের অন্তর্গত হলেও অনেক আগে থেকেই তাদের উধারবন্দ বিধানসভা আসনে ভোট দিতে হয়। আগে দীর্ঘদিন কংগ্রেস শাসনে অবহেলার শিকার হতে হয় অঞ্চলটাকে। এই সময়টায় শুধু প্রতিশ্রুতির অলীক স্বপ্নে রংপুরবাসীর রাতদিন কেটেছে। রাজপথ লাগোয়া রোডে ড্রেন তৈরি করা হয়েছিল বটে। কিন্তু দুর্নীতির বোঝাটা এতই ভারী ছিল যে সেই ড্রেনের ঠিকাদারকে শেষ অবধি কালো তালিকাভুক্ত হতে হয়। এরপর সরকার এবং ঠিকাদার বদল করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাজপথ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভের সুরেই বলেন, বৃষ্টির দিন আসলেই তাদের আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে যায়। এই ড্রেনের কাজ এতই নিম্নমানের হয়েছিল যে ড্রেন দিয়ে জল যাওয়া তো দূরের কথা উল্টো অল্প বৃষ্টিতেই নালা নর্দমার জল বাড়িতে প্রবেশ করে বলে অভিযোগ তাদের।
নরসিং আখড়া কিংবা করতিগ্রামের পিছনের মাঠ অঞ্চলে জমা জলের পরিমাণ এতই বেশি যে দেখে বোঝার উপায় নেই আপনি রংপুরে রয়েছেন নাকি শনবিলে নৌকা বিহারে এসেছেন। বিভাগীয় স্লোইচ গেটগুলি অনেকদিন ধরেই কাজ করছে না। বৃষ্টির দিন আসলেই সামান্য হেলদোল দেখা যায় এই জলসম্পদ বিভাগের কর্মীদের। এরপর যেইসেই। বাকিটা সময় আরাম কেদারায় বেতন গুনেই কেটে যায়। এক্ষেত্রে মাস্টার ড্রেনেজই শেষ বিকল্প বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়টাও প্রতিশ্রুতির বাক্যে সীমাবদ্ধ। কংগ্রেস তো করেই নি। বিজেপিরও একই হাল। ভুললে চলবে না রংপুর বিজেপির অন্যতম গড় বলে পরিচিত। এলাকার প্রায় আশি শতাংশের ভোট পদ্ম চিহ্ন -এর পক্ষে কথা বলে। বিধায়ক মিহির কান্তি সোম নিজের নির্বাচনী প্রচারে এসে করাতিগ্রাম এবং গঙ্গাপাড়ায় মাস্টার ড্রেন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন টালাবাহানায় আজও সেই ড্রেন প্রকল্প ‘ বিশ বাও জলে রয়েছে। ‘ আর সেই পথ ধরেই জমছে দুর্গতির পাহাড়। সবে তো শুরু। বর্ষা এখনও বাকি। তাই ঈশ্বরই ভরসা।