অনলাইন ডেস্ক : কিছুদিন আগে অন্নপূর্ণা ঘাটে চালু হয়েছে নতুন সেতু। এবার মালুগ্রাম হয়ে দুধপাতিলের সঙ্গে শিলচরের সরাসরি যোগাযোগ গড়ে তুলতে বরাক-মধুরা নদীর সংযোগস্থলের আশেপাশে আরও একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। শুক্রবার থেকে মালুগ্রামের গান্ধীঘাট এলাকায় ‘সাব সয়েল ইনভেস্টিগেশন’ (এসএসআই) শুরু করেছে পূর্ত বিভাগ। এদিকে মাটি পরীক্ষা শুরু হওয়া জায়গা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গত ৯ বছর ধরে পড়ে আছে করাতিগ্রাম—মধুরামুখ সেতু।
তথ্য বলছে, ২০১৪ সালে কাজ শেষ হয়েছে করাতিগ্রাম—মধুরামুখ সেতুর। শুধু অপেক্ষা ছিল নদীর এপার-ওপার মিলে দু’টি অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলার। কিন্তু বিভাগীয় উদাসীনতা-ই হোক, কিংবা অন্য কোনও কারণ, গত ৯ বছরেও দুই দিকের দু’টি অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি ! মাঝখান থেকে পড়ে পড়ে সেতুর বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল ধরেছে। নদীভাঙনে পাইলিং ক্ষয়ে নিচের দিকে বেশ কয়েক ইঞ্চি বসে গিয়েছে পিলার। সব মিলিয়ে প্রায় বাতিলের দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে করাতিগ্রাম—মধুরামুখ সেতু। এতে সরকারি তহবিলের প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা বরবাদ হয়েছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একটা সেতুকে ঝুলিয়ে রেখেই সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গান্ধীঘাটের আশেপাশে নতুন সেতুর পরিকল্পনা করছে সরকার। অথচ সেতুটি সময়ে চালু হয়ে গেলে দুধপাতিল সহ ওই এলাকার অন্তত ১০টি রাজস্ব গ্রাম শহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেত এতদিনে। লাভবান হতেন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। কিন্তু কোনও এক অদৃশ্য কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। ২০০৮ সালে রংপুরের করাতিগ্রাম হয়ে মধুরা নদীর মোহনার কাছাকাছি একটি সেতু বানানোর প্রকল্প চূড়ান্ত করে তৎকালীন রাজ্য সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেসময় বরাদ্দ হয় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। প্রায় ছ’বছরের মাথায় কাজ সম্পন্ন-ও হয়। কিন্তু শবরীর প্রতীক্ষা শেষ হয় না দুধপাতিলবাসীর।
বাসিন্দারা জানান, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি প্রার্থী কিশোর নাথ। ভোটে জয়ী হয়ে পাঁচ বছর বিধায়কও ছিলেন। কিন্তু অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, গত নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের প্রার্থী মিসবাহুল ইসলাম লস্কর বলেছেন, করাতিগ্রাম-মধুরামুখ সেতুর অ্যাপ্রোচ গড়ে তোলা তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে। কেননা, তাদের সরকার থাকা অবস্থায় সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু প্রাক্তন বিধায়ক রুমি নাথের ব্যর্থতার জন্য অ্যাপ্রোচ গড়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে বিজেপির সরকারও কাজটি করেনি। তবে এবার তিনি সরকারের কাছে লাগাতার দাবি জানাবেন এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজটি সম্পন্ন করবেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনিও বেমালুম ভুলে গিয়েছেন তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা।
এসব কথা উল্লেখ করে বাসিন্দারা জানান, ঠিকঠাক সময়ে শিলচরের দিকে ২০০ মিটার এবং দুধপাতিলের দিকে ৪৫০ মিটার অংশে অ্যাপ্রোচের কাজ হয়ে গেলে সেতুটি চালু হয়ে যেত। কাছাড়ের তৎকালীন জেলা শাসক বর্ণালী শর্মার নেতৃত্বে একটি দল এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়েছিল অ্যাপ্রোচের কাজ শুরু হবে। কিন্তু কোনও অজানা কারণে সেটিও ভেস্তে যায়। এদিকে, সম্প্রতি যখন অ্যাপ্রোচের জন্য তহবিল বরাদ্দ করে সরকার, দেখা যায়, এতদিনে শিলচরের দিকে (করাতি গ্রামের অংশে) নদীভাঙ্গনের জেরে ২০০ মিটার অংশটির পরিসর বেড়ে দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়েছে। পাইলিং ধসে সেতুটি চলে গিয়েছে প্রায় বাতিলের খাতায়।
এদিকে পূর্ত বিভাগের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুটিকে নবজীবন দিতে গোটা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুধপাতিল অংশে জমি অধিগ্রহণ করে অ্যাপ্রোচ সম্পন্ন করা হয়েছে। নদী ভাঙনের জন্য কাজ থমকে আছে শিলচরের করাতি গ্রাম অংশে। এই সমস্যার সমাধান সূত্র খুঁজতে দিসপুরের নির্দেশে শিলচর এনআইটির কাছে প্রকৌশলগত পরামর্শ চেয়েছে পূর্তবিভাগের শিলচর ডিভিশন। সবকিছু খতিয়ে দেখার পর প্ল্যান ইস্টিমেট নতুন করে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছে শিলচর এনআইটি। সূত্রটি জানিয়েছেন, সেতুর পাইলিং ধসে যাওয়া খুঁটিতে জ্যাক লাগিয়ে তোলা এবং নদী ভাঙ্গন অংশে মাটি ভরাট করে জ্যাকেটিং করার পক্ষপাতী নয় বিভাগ। কারণ, এটা হবে ক্ষণস্থায়ী সমাধান। তাই বিশেষজ্ঞরা চাইছেন, ঠিক মধ্যস্থল থেকে শিলচরের দিকের পুরনো অংশটিতে ২০-২৫মিটার দৈর্ঘ্যের আরও একটি নতুন স্প্যান বসিয়ে তা পরিবর্ধন করার। এটি হয়ে গেলে ভাঙ্গন স্থল নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবে সেতুর অ্যাপ্রোচ। এই নতুন নকশা অনুমোদনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েও দিয়েছে শিলচর ডিভিশন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরেই অনুমোদন এসে যাবে নতুন নকশার।
কিন্তু গত ৯ বছর ধরে বহু আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গিয়েছে এই সেতুটিকে ঘিরে। সেতুর কাজ শুরুর সময় যে ছিল কোলের শিশু, সে আজ প্রাপ্ত বয়স্ক ! এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে আসছে, আদৌ কী ‘শবরীর প্রতীক্ষা’য় অবসান ঘটবে দুধপাতিল-করাতিগ্রাম বাসীর !