অনলাইন ডেস্ক : তিন বছরের কন্যা সন্তান, স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মা-বাবাকে ছেড়ে আলফায় যোগ দিলেন অসমের ডিব্রুগড় জেলার এক সাংবাদিক। বিদ্যুৎ মহন্ত নামের সাংবাদিক গুয়াহাটির একটি সংবাদপত্রে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। তিনি দীর্ঘদিন রাজ্যের জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে বহু সংবাদ পরিবেশন করেছেন এবং একসময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় আলফা (স্বাধীন)-য়ের প্রধান পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে। পুলিশের ধারণা, এই সূত্র ধরেই জঙ্গি সংগঠনের যোগ দিয়েছেন বিদ্যুৎ। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার পর ফেসবুকে মা-বাবার উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘মা, বাবা আমাকে ভুল বুঝবে না, তোমরা হয়তো ভাবতে পারো আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে এসেছি, তবে এটা ঠিক নয়। আমি পরিবার, ঘর, জীবিকা এবং নিজের শহর সব ছেড়ে এসেছি শুধুমাত্র অসমের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে। আমাদের এই দেশকে ভারত থেকে স্বাধীন করতে হবে এবং এই সংগ্রামে যোগ দিতে পারায় আমি গর্বিত। এই সংগ্রামের জন্য আমি আমার ছোট্ট শিশুকেও বলিদান দিতে প্রস্তুত।’ বিদ্যুৎ মহন্তের পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয় রাজ্যের পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন এবং তার পরিবারের লোকেদের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেছেন রাজ্যের সংবাদ মহলের অনেকেই। তাদের মতে, সাংবাদিকদের বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং এই পরিস্থিতিই হয়ত বিদ্যুতকে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিতে বাধ্য করেছে। তাদের মতে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
সেপ্টেম্বর মাসে পর পর দুই ঘটনায় আলফা (স্বাধীন) তাদের চারজন সদস্যকে মায়ানমারে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং এরা প্রত্যেকেই ছিলেন অসমের বাসিন্দা। তাদের মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আলফার উদ্দেশ্যে আবেদন জানিয়েছিলেন ডিজিপি জ্ঞানেন্দ্র প্রতাপ সিং। সঙ্গে, তিনি অসমের যুব প্রজন্মকে বলেছিলেন, তারা যেন ‘বিশ্বাসঘাতক’ জঙ্গি সংগঠনে যোগ না দেয়। যদিও এরপরে এক যুবক আলফায় যোগ দিয়েছিল। তবে এরপর অন্তত চার জন আলফা স্বাধীন ক্যাডার মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে অসমে পুলিশের কাছে অস্ত্রশস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এবছর এখন পর্যন্ত আলফা (স্বাধীন)-য়ের মোট ১১জন সদস্য অসম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পাঁচবার পুলিশের মুখোমুখি হয়েছে আলফা জঙ্গিরা এবং এতে তাদের ১৬ জন সদস্য ধরা পড়েছে। এনকাউন্টারে একজন আলফার মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক মাসে আরও আলফা ক্যাডারদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে অসম সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আলফা সদস্যদের পরিবারের লোকেদের আলোচনার জন্য থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় তাদের জন্য বৈঠক রাখা হয়েছে এবং বৈঠক শেষে পরিবারের লোকেরা সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন। পরিবারকে লোকেরা বলেন, ‘এখন অসমের পরিস্থিতি আগের মত নেই, সরকার প্রতিটি মানুষের কথা শুনছে এবং জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে যারা বেরিয়ে এসেছে তাদের স্বসম্মানে সমাজে স্থান দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এই শুভ প্রচেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে তোমরা বাড়ি ফিরে এসো।’