অনলাইন ডেস্ক : অবৈধভাবে ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশের দায়ে মিজোরাম পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে মায়ানমারের ৩৯ জন সেনা জওয়ানকে। মায়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোৰ্চ (পিডিএফ)-এর সঙ্গে ওই দেশের সেনাবাহিনী জুন্টা-র তীব্র সংঘর্ষ চলছে। ইতিমধ্যে মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর সহ দুটি সেনা শিবির সম্পূর্ণ দখলে নিয়েছে সিএনএ এবং পিডিএফ।
চলমান সংঘর্ষের জেরে মিজোরামে পালিয়ে আসছেন মায়ানমারের সেনা জওয়ানরা। এঁদের মধ্যে ৩৯ জন জওয়ানকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে মিজোরাম পুলিশ। জানা গেছে, পিপলস ডিফেন্স ফোৰ্চ-এর তাড়া খেয়ে জুন্টা-র ওই সকল সেনা জওয়ান অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার অপরাধে আটক করা হয় তাদের। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, মায়ানমারের দুই আর্মি ক্যাম্পে প্রায় ৬০ জন জওয়ান ছিলেন। ওই দুই ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে মায়ানমারের জুন্টা সেনাবাহিনীর অধিকাংশ জওয়ানকে হত্যা করেছে পিডিএফ-সিএনএ। মায়ানমারের জুন্টা সেনা জেট যুদ্ধ বিমান এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করার পরও বিবদমান প্ৰতিপক্ষকে নিয়ন্ত্ৰণ করতে পারছে না। ইতিমধ্যে মিজোরামের চাম্পাই জেলার সীমান্ত-ঘেঁষা মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সহ শহরে অবস্থিত দুটি ক্যাম্প নিজেদের দখলে নিয়েছে সিএনএ এবং পিডিএফ।
এদিকে পড়শি দেশে লাগাতার চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আঁচ পড়ছে ভারতেও। মিজোরামে নেমেছে শরণার্থীর ঢল। উদ্বিগ্ন মণিপুরও। মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই কুকি-চিন গোষ্ঠীর মানুষ মণিপুরের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারেন বলে আশঙ্কা। এদের হাতিয়ার করতে পারে কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো, এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
মঙ্গলবার এই বিষয়ে মিজোরাম পুলিশের আইজিপি লালবিয়াকথাঙ্গা খিয়াংতে জানিয়েছেন, ‘মায়ানমার সীমান্তের দুই সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায় পিডিএফ। দখল করে নেওয়া হয় ওই ঘাঁটিগুলো। যার জেরে মায়ানমারের সেনা জওয়ানরা মিজোরামে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জন জওয়ান মিজোরাম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। আমরা সকলকে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। বর্তমানে মিজোরাম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করা মোট বার্মিজ সেনা জওয়ানের সংখ্যা ৪২। একই সঙ্গে মায়ানমারের প্রায় ৫ হাজারের উপর নাগরিক সীমান্তবর্তী দুই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২০ জন আহত ছিলেন। আহতদের আইজলে পাঠানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। সোমবার রাত থেকে সীমান্তে আর কোনও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আমরা জানি না মায়ানমারের সেনা আকাশপথে হামলা চালাবে কিনা। সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছি না।’ জানা গেছে, মিজোরাম সরকার আন্তর্জাতিক রীতি মেনে শরণার্থীদের রাজ্যের একাধিক আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই দিয়েছে। মণিপুরে জাতিদাঙ্গা শুরুর পর রাজ্যে একাধিক ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। প্রায় ৪০ হাজার মণিপুরবাসীকে আশ্রয় দেওয়া হয় তখন। সেই আশ্রয় শিবিরগুলির কয়েকটিতে মায়ানমারের শরণার্থীদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের দাবিতে উত্তাল মায়ানমার। দেশের উত্তর-পশ্চিমে সাগাইং প্রদেশে সরকারি বাহিনী ও পিডিএফের মধ্যে এই সংঘর্ষ বহুদিনের। পালটা ফৌজের নিপীড়নে প্রাণ হারিয়েছেন কয়েক হাজার গণতন্ত্রকামী। সেনাশাসন শেষ করতে তীব্র যুদ্ধ চালাচ্ছে বিদ্রোহী বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে বহু মানুষ ভারতে পালিয়ে আসছেন। মিজোরাম ও মণিপুরে আশ্রয় নিচ্ছে পালিয়ে আসা কুকি-চিন গোষ্ঠীর মানুষ।