অনলাইন ডেস্ক : গত প্রায় এক পক্ষ কাল ধরে বাড়ছিল দর, তবে পুজোর কদিনে একেবারে সের্গেই বুবকার ঢংয়ে এক লাফ দিয়ে চড়ে গেছে অনেকটাই। আনন্দময়ীর আগমনকে ঘিরে কয়েকদিন আনন্দে মেতে থাকার পর এবার পেঁয়াজের এমন দ্রুতগতির মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অনেক ক্রেতাকে।
একপক্ষ কাল আগে শিলচরের ফাটক বাজারে খুচরো প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আর বর্তমানে তা গিয়ে পৌঁচেছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো, পুজোর দুই -একদিন আগেও কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে গড়পড়তা ৫০ টাকায়। আর পূজো পর্ব পার হতেই, কিভাবে বেড়ে গেল এতোটা, এ নিয়ে খুচরো বিক্রেতাদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে, তাই তারাও বাধ্য হচ্ছেন চড়া দামে বিক্রি করতে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, নাসিক, ইন্দোর, পটনা ইত্যাদি যেসব স্থান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন সেসব এলাকার সরবরাহকারীরাই। তাই তারাও বাধ্য চড়ামূল্যে বিক্রি করতে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরো বাজারে।
শিলচর ফাটক বাজারের পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইন্দ্র কুমার পালের ম্যানেজার দীপক নাগ জানান, পেঁয়াজ উৎপন্ন হওয়া স্থান ও মানের ভিত্তিতে দর কিছুটা হেরফের হয়ে থাকে। তবে সব কিছু মিলিয়ে বর্তমানে শিলচরের পাইকারি বাজারে লাল পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি ৫২০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত। নাগ বাবু আরও জানান, নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত
কমবে না দর।
ফাটক বাজারের পেঁয়াজের অন্যএক পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বিবি রায় এন্ড কোম্পানির ম্যানেজার মধু রায় জানান, তাদের কাছে কিছু পুরানো স্টক রয়ে গেছে। তাই তারা কুইন্টাল প্রতি বিক্রি করছেন ৪২০০ টাকা থেকে ৪৪০০ টাকায়।
এদিকে শিলচর ফুড গ্রাইন্স মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর পক্ষ থেকে গত ২৫ অক্টোবর বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির ক্ষেত্রে দর বেঁধে দিয়ে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, এতে পাইকারি হারে পেঁয়াজের (পটনা) দর নির্ধারিত হয়েছে ৪৩০০ টাকা থেকে ৪৪০০ টাকা। খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ৫১ থেকে ৫২ টাকা।এবং পাইকারি হারে পেঁয়াজ (সাদা)-এর ক্ষেত্রে কুইন্টাল পিছু দর ৫২২৭ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা। খুচরো বিক্রির ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৬৩ টাকা। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ বিভাগের অনুমোদনক্রমে এই তালিকা তৈরি করা হয়। যদিও দেখা গেছে এই তালিকায় যে দর নির্ধারিত রয়েছে, খুচরো বাজারে বিক্রির ক্ষেত্রে তা মোটেই প্রতিফলিত হচ্ছে না। লাল, সাদা, পটনা, নাসিক, রাজস্থান কোথা থেকে কোন পেঁয়াজ এসেছে সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে এর ভেদাভেদ বুঝে ওঠা সম্ভব নয় মোটেই। ফাটকবাজারেই দেখা গেছে, খুচরো বিক্রেতাদের কাছে যখন ক্রেতারা যাচ্ছেন তখন অবলীলায় দর হাঁকা হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ টাকা। যা শুনে ভিরমি খাচ্ছেন অনেক ক্রেতাই।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের হিসেব অনুযায়ী কুইন্টাল প্রতি সর্বোচ্চ ৫৫০০ দরই যদি স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যায়, তবে তো ৭০ টাকা হারে বিক্রিতে ক্রেজি প্রতি লাভ থেকে যাচ্ছে ১৫ টাকা। এটা কি চূড়ান্ত পর্যায়ে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না। এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে খুচরো ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, তারা যখন পাইকারি দোকান থেকে পেঁয়াজ কিনে আনেন তখন প্রতি বস্তায় ২-৩ কেজি করে পচা বেরিয়ে যায়। এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয় না, আর হলেও বিক্রি করতে হয় ন্যূনতম মূল্যে। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীদের তো ভাল- খারাপ সব মিলিয়ে গুনে দিতে হয় পুরো টাকাই। তাই ক্ষতি এড়াতে তারা এভাবে কেজি প্রতি ১৫ টাকা করে মুনাফা বাধ্য হচ্ছেন। কয়েকজন খুচরো ব্যবসায়ীতো, এমনও অভিযোগ করেন যে, পাইকারি বড় ব্যবসায়ীরা সরকারিভাবে যে দর বলে থাকেন বা বোর্ডে লিখে রাখেন বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় আরও কিছুটা বেশি। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই, পাইকারি ব্যবসায়ীরা যে দর হেঁকে থাকেন তাদের কিনে আনতে হয় সেই দরেই।
এদিকে ফাটক বাজারের এমন চিত্রের পাশাপাশি এদিন বিভিন্ন পাড়ার কিছু ছোট ছোট দোকানে আবার দেখা গেছে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আসলে এরা পাইকারি দোকান থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করে এনেছিলেন, দিন কয়েক আগে। তখন দর ছিল তুলনামূলকভাবে কম, পুজোর কদিনে যে হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর যে এতোটা লাফিয়ে উঠেছে, তা জানতে পারেননি পাড়ার এই দোকানীরা। তবে যারাই জানতে পারছেন, তারাই সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে দিচ্ছেন দর। সব মিলিয়ে পকেট কাটা যাচ্ছে সেই সাধারণ ক্রেতাদেরই।