অনলাইন ডেস্ক : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দলের অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আজ সোমবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এবং তা বাতিল করার দাবিতে ১০ ঘণ্টার অনশনে বসেছেন রাজ্যসভার সদস্য তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব। সকালে শিবমন্দিরে পুজো দিয়ে মধ্য সহরের মাঠে তিনি অনশন অবস্থান করছেন। সুস্মিতা সহ তাঁর দলের অন্য নেতা-কর্মীরা কালো পোশাক পরে বসেছেন অনশন কর্মসূচিতে।
অনশন কর্মসূচি সম্পর্কে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে সাংসদ তৃণমূল নেত্রী দেব বলেন, ‘অগণতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। অন্য দল বা সংশ্লিষ্ট কারোর সঙ্গে কোনও পরামর্শ ছাড়াই নির্বাচন কেন্দ্রের সীমানা নির্ধারণের প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছে ইএসআই। বলতে দ্বিধা নেই, ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি পক্ষের চাপে কাজ করছে।’ সুস্মিতার প্ৰশ্ন, ‘আমাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কেন পুরনো আদমশুমারি ২০০১-কে ভিত্তি করে ডিলিমিটেশনের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে? কেন ২০১১ সালকে নেওয়া হয়নি?’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘এনআরসি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি বলে ২০০৮ সালে ডিলিমিটেশনের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছিল, তা-হলে এখন কার তাগিদে তড়িঘড়ি এর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে?’
তিনি বলেন, ‘বরাক উপত্যকার ভোটার সংখ্যা যখন বেড়েছে, তখন বিধানসভায় ১৫ আসন থেকে ১৩-য় নামিয়ে আনা হয়েছে কার উদ্দেশ্য সার্থক করতে?’ সাংসদ বলেন, ২০২৬-এর পর যদি এই সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হতো, তা-হলে সামগ্রিকভাবে আসন সংখ্যা বাড়ানো যেত। কিন্তু এখন তা করতে গিয়ে বরাক উপত্যকায় দুটি আসন কমানো হয়েছে, খেদ ব্যক্ত করেন তিনি। তাই ভারতের নির্বাচন কমিশনের জারিকৃত ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রস্তাব কোনও ভাবেই তিনি বা তাঁর দল মানবে না, সাফ জানিয়েছেন রাজ্যসভার সদস্য সুস্মিতা দেব। অসন্তোষ প্রকাশ করে সুস্মিতা দেব বলেন, অসিআই কর্তৃক প্রকাশিত ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রস্তাব সম্পর্কে উদ্বেগ ব্যক্ত করে গত ৭ জুলাই কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়ালের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ওই চিঠিতে তিনি অসমে ১৯৭৬ সাল থেকে ৪৭ বছর পর শুরু হয়েছে। কিন্তু তা তৈরি করা হয়েছে ২০২১ সালের আদমশুমারির পরিবর্তে ২০০১ সালের আদমশুমারিকে ভিত্তি করে। এ সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি তাঁর আপত্তি জানিয়েছেন।
সাংবিধানিক বিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে, সুস্মিতা দেব ভারতীয় সংবিধানের ৮০ এবং ১৭০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধি সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ওই অনুচ্ছেদ বলছে, ২০২৬ সালের পর প্রথম আদমশুমারি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত সংসদীয় ও বিধানসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস অপ্রয়োজনীয়। এ প্ৰসঙ্গে তিনি অসমে সীমানা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া শুরু করার পিছনে যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। আবারও বলেন, ২০২৬ সালের আদমশুমারি না হওয়া পর্যন্ত, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে নিৰ্বাচন কেন্দ্ৰের সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। তাঁর যুক্তি, আদমশুমারির জন্য ভিত্তিবর্ষকে আপ-টু-ডেট করতে ২০১১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে করা উচিত ছিল ইসিআই-এর।
সুস্মিতা দেব বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের নির্বাচন কমিশনের দল যখন গুয়াহাটিতে এসেছিল, তখন বিরোধী দলগুলির উত্থাপিত আপত্তি তাঁদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি নির্বাচন কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আগামী ১১ জুলাই তাঁরা আবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে লিখিতভাবে প্রকাশিত ডিলিমিটেশনের খসড়া প্রস্তাবের কুপ্রভাবের বিষয়ে জানিয়ে তা বাতিল করার দাবি জানাবেন। আপত্তি করবেন প্রকাশিত খসড়া প্রস্তাবের। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ২০ জুন অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি, সীমানা সংক্রান্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিয়ন (এনআরসি) এবং অসম চুক্তি বাস্তবায়নকে উপেক্ষা করে সরকারের উদ্দেশ্য সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।