অনলাইন ডেস্ক : ডিলিমিটেশনের খসড়াকে ঘিরে কাছাড় সহ গোটা বরাক বিজেপি-র অন্দরে যে ক্ষোভ আছে,সেটা কার্যত উচ্চকণ্ঠেই গত কয়েকদিন ধরে বলা হয়েছে।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একেবারে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, অনুযোগ কোথায় উল্টে বরাকের বি জে পি নেতারা তো খসড়া নিয়ে খুশি।তাই তাঁকে বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন বরাকের সংসদ,মন্ত্রী,বিধায়করা।রবিবার রাতে সংসদ রাজদীপ রায়,মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য,বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও মিহির সোম,কাছাড় বি জে পি-র সভাপতি বিমলেন্দু রায়,দলের জেলা কমিটির দুই সাধারণ সম্পাদক এবং চার মন্ডল সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী।রাত প্রায় সাড়ে বারোটা অবধি চলে এই বৈঠক।আজ,সোমবার মুখ্যমন্ত্রী জানান বরাকের বি জে পি নেতারা তাঁকে বারবার ধন্যবাদ দিয়েছেন।”তবে আমি ওঁদের বলেছি,আমাকে নয় ধন্যবাদ দিতে হলে নির্বাচন কমিশনকে দিন।ডিলিমিটেশনের খসড়া ওরা বানিয়েছে,আমি কাজটা করিনি,বা আমার সেই এক্তিআরও নেই”,মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। আবার একাংশ সংবাদ মাধ্যম বলছে,বরাকের বি জে পি নেতাদের রীতিমতো ধমকেছেন মুখ্যমন্ত্রী।তবে সংসদ রাজদীপ বলেন,এটা ডাহা মিথ্যে কথা ।তাঁদের সব কথাই শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত মুখ্যমন্ত্রীর ধমক দেওয়ার খবর কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে সংশয় আছে। কিন্তু জানা গেছে,বি জে পি নেতারা খসড়া প্রকাশের পর যেভাবে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট। অনেক নেতাই প্রকাশ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রের সীমানা কাটাকুটি, নাম বদল নিয়ে আপত্তি দর্শিয়েছেন।এতেই মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে।কারণ দলের মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করাই যদি ক্ষোভ জাহির করেন তাহলে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। এক সূত্রে বলা হয়েছে,ঠিক এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।এর থেকে বেশি কিছু নয়।
রবিবার রাতের বৈঠক সম্পর্কে রাজদীপ রায় ,পরিমল শুক্লবৈদ্য,বিমলেন্দু রায়রা জানিয়েছেন,তাঁদের কথা মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে তুলে ধরা হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস দিয়ে বলেছেন।নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তিনি এসব নিয়ে আলোচনা করবেন। সাংসদ রাজদীপের কথায়”ডিলিমিটেশনের খসড়া নিয়ে আমাদের পর্যালোচনা আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।কিছু কেন্দ্রের সীমানা বিন্যাস সহ আরও কিছু বিষয় তাঁর কাছে তুলে ধরা হয়েছে।করিমগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র সম্পর্কে বলেছি যে,আন্তর্জাতিক সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় সমস্যা থাকবে।”একই কথা বলেছেন পরিবহন মন্ত্রী পরিমল ।তাঁর বক্তব্য,মুখ্যমন্ত্রীর দিক থেকে বহু বিষয়েই সদর্থক আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে।করিমগঞ্জ লোকসভা আসন নিয়েও তাঁদের অবস্থান মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।তাঁর মন্তব্য”আমরা আমাদের কথা বলেছি।মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,কতটা কী করা যায় দেখবেন তিনি।কাছাড় বি জে পি -র সভাপতি বিমলেন্দুবাবু বলেন,মুখ্যমন্ত্রীকে সবই জানান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রশ্ন হলো,বি জে পি নেতাদের এক সুরের বক্তব্যে এটা অন্তত পরিষ্কার যে,এতদিন ধরে খসড়ায় উল্লেখিত কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের স্থিতিই মুখ্যমন্ত্রীর সামনে স্পষ্ট করা হয়েছে।যার সারমর্ম দাঁড়ায়, কিছু আপত্তির জায়গা যে আছে সেটাই জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী একেবারে ডেটেই বলেছেন,বরাকের বি জে পি নেতারা তো তাঁকে ধন্যবাদই দিয়েছেন।বিশেষ করে রাজদীপ ধন্যবাদ জানিয়ে কূল পাননি।”এমনকি রাজদীপ আমাকে বলেন,দাদা বাঁচিয়ে দিলেন”। এ নিয়ে কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার ভাষ্য,মুখ্যমন্ত্রী যদি এ-কথা বলে থাকেন তাহলে তো ঠিকই আছে।শুধু বিমলেন্দুবাবু বলেছেন,কাছাড়ে ছয়টি এবং সামগ্রিকভাবে বরাকে নয়টি আসন তাঁদের জন্য নিশ্চিত হবে।এর জন্যই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা ধন্যবাদ দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জোর দিয়েই বলেছেন,ডিলিমিটেশন নিয়ে বরাকে কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।বরাকে যাঁরা ভারতীয় হিসেবে বেঁচে থাকতে চান তাঁরা সবাই আনন্দিত।বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাস দেখা যাচ্ছে বরাকে। হাইলাকান্দি,করিমগঞ্জের অনেকেই তাঁকে হোয়াটস এপে মেসেজ দিয়ে খুশি ব্যক্ত করেছেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।”হাইলাকান্দির মানুষ আমাকে বলছেন,স্যার ,বাঁচিয়ে দিলেন আমাদের। জেলার তিন বিধায়কই অন্য রাস্তায় যাচ্ছিলেন।এখানে একটি আসন কমলো এই জেলার”,বলেন মুখ্যমন্ত্রী।আগামীকালের বরাক বনধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য,অন্য দল এই বনধ ডেকেছে। কিন্তু যাঁরা ভারতীয় হিসেবে বাঁচতে চান তাঁরা বেজায় খুশি। শিলচর লোকসভা কেন্দ্র তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কথা হলো,এস সি,এস টি সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাগাভাগি করলে জাতি বাঁচবে কী করে! আর তাছাড়া এস সি -দের জন্য আসন বাড়লে একে খোলা মনেই সমর্থন করা উচিত।নইলে অন্যরা সেই আসনগুলো নিয়ে নেবে।