অনলাইন ডেস্ক : শিলচর জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রয়াত কর্নেন্দু ভট্টাচার্যের সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে, দলে তিনি ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠার সুযোগ দিতেন না। কেউ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেই তাকে দলের কোনও একটা পদ দিয়ে ঠান্ডা করতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। বর্তমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ পাল কর্ণেন্দু বাবুর পথ অনুসরণ করে ছাপিয়ে গেলেন তাকেও।
সবাইকে খুশি রাখতে ১৩২ জনের জেলা কমিটি গড়ে রেকর্ড করেছিলেন কর্ণেন্দুবাবু। এবার অভিজিৎ পালের নেতৃত্বে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গড়া হলো ১৪০ জনের কমিটি। এতে রাখা হয়েছে নবীন -প্রবীন সব বয়সী দলীয় কর্মকর্তাদের। তবে এরপরও ক্ষোভ- বিক্ষোভ পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব হয়নি। ব্যাপারটা অনুধাবন করে অভিজিৎ জানিয়েছেন, শীঘ্র আরও কয়েকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করা হবে আরও এক তালিকা।
প্রদেশ কংগ্রেসের অনুমোদনক্রমে নয়া কমিটির পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশের পর শুক্রবার জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ইন্দিরা ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নিযুক্তিপত্র। তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়া কমিটিতে প্রাক্তন জেলা সভাপতি তমাল কান্তি বণিকের নাম কার্যকরী সদস্যের তালিকায় থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ কেউই স্থান পাননি কমিটিতে, এমনকি নেই কিশোর ভট্টাচার্যের মতো দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া দলীয় কর্মকর্তার নামও। কমিটিতে সভাপতি অভিজিৎ ছাড়া রয়েছেন
২৭ জন সহ সভাপতি,৪৪ জন সাধারণ সম্পাদক, ৪৪ জন সম্পাদক, ২৩ জন কার্যকরী সদস্য এবং ১ জন কোষাধ্যক্ষ। এসব কোনও পদে কিশোর ভট্টাচার্যের স্থান না হলেও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে সাম্প্রতিককালে দলে প্রত্যাবর্তনকারী সূর্যকান্ত সরকার এবং পাপন দেবকে। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়েছে দলে নতুন করে যোগ দেওয়ার প্রাক্তন পুলিশকর্তা সুধাংশু দাসকে।
কমিটিতে কার্যকরী সদস্য হিসেবে পদাধিকার বলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন, প্রাক্তন জেলা সভাপতি, প্রাক্তন জেলা পরিষদ সভাপতি, এবং এ জেলার প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মকর্তারা। এদের পাশাপাশি রাখা হয়েছে অন্যান্য কয়েকজন বিশিষ্ট দলীয় কর্মকর্তাকেও। সেই হিসেবে পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন এবং প্রাক্তন জেলা সভাপতি তমালকান্তি বণিককে বাধ্যতামূলকভাবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তার ঘনিষ্ঠ কাউকে না রাখা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে শুরু হয়েছে ফিসফিসানি। এছাড়া সম্পাদক পদে আসীন কয়েকজন প্রকাশ্যেই জানিয়ে দেন, তারা এতে খুশি মন মোটেই। এতোদিন কংগ্রেস করার পর কমপক্ষে সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া উচিত ছিল তাদের।
সভাপতি অভিজিৎ বিক্ষুব্ধদের মনোভাব আঁচ পেয়ে আরও কিছু লোককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানালেও সঙ্গে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, পদ পেয়ে কেউ দলের কাজ না করে এমনিতেই বসে থাকলে তাকে হয় নিচু পদে নামিয়ে দেওয়া হবে বা করা হবে পদচ্যুত। সঙ্গে আরও জানান, কেউ পরপর তিনটি কার্যকরী সমিতির বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেই প্রথম শোকজ করে এরপরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এতো বড় কমিটি, এতে কি অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই প্রবাদ অনেক পুরনো, বর্তমান জমানায় খাপ খায় না। বর্তমান জমানায় সবাইকে নিয়ে চলাটাই সঠিক পন্থা। আর কংগ্রেসে পদ ভিত্তিক কাজ করার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। তাই বিশাল কমিটি গড়ায় দলের কার্যকারিতা আরও বাড়বে। এদিন নিযুক্তিপত্র তুলে দেওয়া হলেও কর্মকর্তাদের কার কি দায়িত্ব তা সমঝে দেওয়া হবে আগামী সোমবার।
অভিজিৎ আরও জানান, যে ১৪০ জনের কমিটি গড়া হয়েছে সেই কমিটির সব নাম তিনি প্রস্তাব করেননি। কিছু নাম তিনি প্রস্তাব করেছেন, আর বিভিন্ন বিষয় ভেবে কিছু নাম সংযোজন করেছে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি। সব জাতি গোষ্ঠী এবং এলাকার কথা মাথায় রেখেই কমিটি গড়া হয়েছে।