অনলাইন ডেস্ক : বিস্মিত হয়ে পড়েন অতিথি হিসেবে উপস্থিত জেলাশাসক রোহন কুমার ঝা ও পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো। দুজনেই বলে উঠেন, এ-তো নেহাত কোনও প্রতিযোগিতা নয়, যেন ছবি আঁকার মেলা। পুলিশ সুপার সঙ্গে এও বলে ওঠেন, গোটা উত্তর পূর্বে এত বড় মাপের প্রতিযোগিতা চোখে পড়েনি তাঁর। বিস্মিত হওয়ারই কথা, এক ছাদের তলায় বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে একসঙ্গে ছবি আঁকলো বিভিন্ন বয়সী ১৭৬০ জন পড়ুয়া। নেতাজি মূর্তি নবনির্মাণ ও স্থাপনা কমিটির উদ্যোগে রবিবার শিলচর ইন্ডিয়া ক্লাবের ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় এভাবে চিহ্নিত হয়ে থাকল এক নজির হিসেবে।
শহরের রাঙ্গিরখাড়ি রোটারিতে বর্তমানে থাকা নেতাজি মূর্তির স্থলে বসানো হবে আরও বড় মাপের মূর্তি। এর জন্য বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির এই বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয়েছে কেজি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের নিয়ে। এত বিশাল সংখ্যক প্রতিযোগী, তাই কানায় কানায় ভর্তি স্টেডিয়াম জুড়ে শুধু চোখে পড়তে থাকে আর্ট পেপারে তুলির আচড়ে নানা ছবি ফুটে ওঠার দৃশ্য।
প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চার অধ্যাপক নির্মল কান্তি রায়, গণেশ নন্দী, সদয় চন্দ্র দাস এবং দেবাশিস চক্রবর্তী। বিচারকের ভূমিকায় থাকলেও নিজের বিষ্ময় লুকিয়ে রাখতে পারেননি গণেশ নন্দীও। উত্তর পূর্বাঞ্চলে সবচেয়ে বড় বসে আঁকো প্রতিযোগিতা কিনা এই বিতর্কে না গেলেও গণেশবাবু বলেন, এত প্রতিযোগী, ব্যাপারটা অবশ্যই বরাক উপত্যকায় নজিরবিহীন।
এদিন এই প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের আগমনকে ঘিরে একসময় ইনডোর স্টেডিয়ামের আশপাশ এলাকায় রাস্তার পাশে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় যানবাহনের। কচিকাঁচা পড়ুয়াদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরাও উপভোগ করেছেন এমন ব্যতিক্রমী প্রতিযোগিতা। তাদের অনেকের মুখেও শোনা গেছে বিস্ময় সূচক প্রতিক্রিয়া। আর এমন প্রতিযোগিতায় তাদের সন্তানদের শরিক হবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন আয়োজকদের।
প্রতিযোগিতায় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য নির্ধারিত “গ” বিভাগে-ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা অবলম্বনে ছবি আঁকার কথা বলা হয়েছিল। আর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের জন্য নির্ধারিত “ঘ ” বিভাগে -“তুমি আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিব”-নেতাজির এই ঐতিহাসিক আহ্বানের ভাবনাকে বলা হয় ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে। স্বাভাবিকভাবেই এই দুই বিভাগের প্রতিযোগিদের তুলিতে ফুটে উঠতে থাকে নেতাজির বিভিন্ন ছবি। আর কেজি থেকে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত “ক” বিভাগের পড়ুয়াদের কোনও বিষয়বস্তু না দিয়ে বলা হয় যেমন খুশি আঁকতে। এবং দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের “খ ” বিভাগে বিষয় হিসেবে বেঁছে দেওয়া হয়- মানুষ এবং পশু সহ গ্রামের একটি নিসর্গ চিত্র।
কমিটির সহ আহ্বায়ক উত্তম কুমার সাহা বলেন, নেতাজি মূর্তি যে স্থাপিত হতে চলেছে এই বার্তা সহ নেতাজির আদর্শকে ছড়িয়ে দিতেই এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে থাকছে অন্যান্য কার্যসূচিও। আহ্বায়ক বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী জানান , আগামী ২৫ আগস্ট রাঙ্গিরখাড়ি রোটারিতে থাকা নেতাজির পুরনো মূর্তি সরিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে নতুন মূর্তি। এই অনুষ্ঠানে আসার কথা রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা ও মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংহের। এদিন প্রতিযোগিতার মাঝেই মূর্তি স্থাপনের জন্য কমিটির কর্মকর্তাদের হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন শিলচর বিলপার এলাকার বাসিন্দা ঋদ্ধি বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী রঞ্জিত দেব।