অনলাইন ডেস্ক : হয়তো কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে দলের সাফল্যের জের, বুধবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরার সফরকে ঘিরে শিলচর জেলা কংগ্রেসের “টিউনিং”-ই যেন বদলে যায় অনেকটা। রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে অনেকটাই চেতনাহীন ও নিরুৎসাহী হয়ে পড়া দলীয় কর্মীরা উৎসাহে ফুটতে থাকেন টগবগ করে। আর অনেকে দলে যোগও দেন নতুন করে। সবকিছু মিলিয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে তালে তাল মিলিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও কেন্দ্র এবং রাজ্যের মসনদ থেকে বিজেপিকে হটিয়ে ফের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখান কর্মীদের। এভাবে স্বপ্ন দেখিয়ে ঐক্যের উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি সঙ্গে দলের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ নিয়েও কথা বলেন চড়াসুরে।
পার্ক রোডে রাজীব ভবনে শিলচর জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে জেলা কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ পালের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত এদিনের কর্মীসভা ও যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভূপেন বরা বলেন, বিজেপির কার্যকলাপে রাজ্য তথা দেশবাসী বর্তমানে বীতশ্রদ্ধ, সবাই চাইছেন বিকল্প। এই পরিস্থিতিতে ভরসা অর্জনে দলীয় নেতাকর্মীদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় হয়ে ময়দানে নেমে আমজনতার পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু দলে এমন কিছু লোক রয়েছেন যারা ভাবছেন তারা বিদ্রোহ করলে ডুবে যাবে কংগ্রেস। একথা বলে তিনি আরও উল্লেখ করেন-“বন্ধু, এমনটা ভাবার কোনও মানে নেই। শরদ পাওয়ার থেকে ধরে পি এ সাংমা বা গেগং আপাংদের মতো তাবড় তাবড় নেতারাও বিদ্রোহী হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও তাদের রাজ্যে দলের পতাকা উড়েছে পত পত করে। কংগ্রেস এক মহাসাগর, এই দলে কে এলো আর কে গেল তা কোনও ব্যাপার নয়। দল টিকে থাকবে যথারীতি।”
শিলচরে এসে দলীয় সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির চড়াসুরে পেশ করা এমন বক্তব্য নিয়ে সভাস্থলে চর্চা শুরু হয়ে যায়, তবে কি তিনি নিশানা করেছেন সদ্য প্রাক্তন হয়ে দল থেকে দূরে অবস্থানকারী দলের জেলা সভাপতি তমাল কান্তি বনিক ও তার কয়েকজন সঙ্গী সহ তাদের “মেন্টর” হিসেবে পরিচিত প্রদেশ কংগ্রেসেরই কার্যকরী সভাপতি কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থকে। বন্ধু সম্বোধন করে বিদ্রোহীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে কোনও একজনকে কারও ভালো না লাগতেই পারে। কিন্তু সেই লোকটি যদি দলের জন্য কার্যকরী হয়ে থাকেন তবে তাকে সুযোগ দিতেই হবে। এর সূত্র ধরে বর্তমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ পালের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তাকেও কাজ করতে হবে একই মনোভাব নিয়ে। তিনি আরও বলেন, দলে যারা নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলবেন না তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যে সময় অন্যান্য দল বিজেপিকে হটাতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই চালাতে এগিয়ে আসছে, তখন দলের কেউ বসে থাকলে তা বরদাস্ত করা হবে না মোটেই।
এরপর শিলচর পুরনিগমের নির্বাচনের প্রসন টেনে বলেন, এই নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য এক বড় পরীক্ষা। যোগ্য প্রার্থীরা যাতে কোনওভাবে বঞ্চিত না হন সেদিকে নজর রাখতে হবে দলের নেতৃত্বকে। তৃণমূল স্তরে দলকে শক্তিশালী করে তোলার উপর জোর দিয়ে তিনি শীঘ্রই সবকটি বুথ কমিটি গঠনের কথা বলেন। এরপর ইঙ্গিত দেন, দলে নতুন, পুরানো বলে কিছু নেই। যাকেই যোগ্য মনে করা হবে তাকেই দলীয় কাজে দেওয়া হবে প্রাধান্য।
নিজের দলের আভ্যন্তরীণ এসব বিষয়ের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজেপি এবং এআই ইউ ডি এফ- এর সমালোচনায়ও মুখর হন। বলেন ওই দুই দল মিলে সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিয়ে ঘৃন্য রাজনীতি করছে। বিজেপি সরকার সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ব্যর্থতা চাপা দিতে ওই দল ধর্মের নামে বিভাজন সৃষ্টি এবং ভুয়ো প্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বিজেপির এসব কার্যকলাপে সাধারণ মানুষ বিতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তাই দলে দলে লোক বর্তমানে সামিল হচ্ছেন কংগ্রেসে।
এদিন অনুষ্ঠানে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ কারী সূর্যকান্ত সরকার এবং পাপন দেবের দলে প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি যোগ দেন এ আই ইউ ডি এফ এর কর্মকর্তা তোপখানা জিপির প্রাক্তন সভাপতি নুর আহমদ বড়ভূঁইয়া , ক্রিকেটার বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য সহ মোট ১৫১ জন। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এরা এসেছেন এনপিপি, বিজেপি, অগপ যুব পরিষদ ও এ আই ইউ ডিএফ ইত্যাদি দল থেকে। তিনজন যোগ দেন এনএস ইউ আই -এ। দাবি করা হয়েছে এই তিনজন এসেছেন অন্য ছাত্র সংগঠন এবিভিপি থেকে। এদের সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান ভূপেন বরা সহ দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তথা জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অরুন দত্ত মজুমদার। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক খলিল উদ্দিন মজুমদার, প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝার ভূঁইয়া,কাটিগড়া ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি হোসেন আহমদ, তাপাং ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি কুলেন্দ্র দাস, জেলা কংগ্রেসের মাইনোরিটি বিভাগের চেয়ারম্যান আনসার হোসেন বড়লস্কর, প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শরিফুজ্জামান লস্কর, দলের জেলা ওবিসি সেলের চেয়ারম্যান গুরুদাস সিংহ, মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী বিদ্যাপতি রবিদাস, হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সামস উদ্দিন বড়লস্কর, দলে প্রত্যাবর্তনকারী পাপন দেব, যুব কংগ্রেসের সভাপতি রনজিত দেবনাথ সহ অন্যান্যরা। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সীমান্ত ভট্টাচার্য।
উপস্থিত ছিলেন হাইলাকান্দির প্রাক্তন বিধায়ক আনোয়ার হোসেন লস্কর, মনিকান্ত সিনহা, ঝন্টু সরকার, বিশাল সরকার, সেবা দলের আব্দুল রেজ্জাক প্রমূখ।
এদিন কর্মীসভার আগে ভূপেন বরা শিলচর (কুম্ভিরগ্রাম) বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিশাল মিছিলে তাকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসা হয় শহরে।
কর্মীসভার পরবর্তীতে তিনি বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় যোগ দেন। এরপর রাতেই ট্রেনে রওয়ানা হয়ে যান গুয়াহাটির উদ্দেশ্যে।