অনলাইন ডেস্ক : হিংসাতপ্ত মণিপুরের পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হয়নি। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও বিক্ষিপ্ত হিংসার খবর মিলছে। আতঙ্কে রাজ্য ছেড়ে অসমে পালিয়েছেন প্রায় ১ হাজারেরও বেশি নাগরিক। শূন্য রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনা। সব মিলিয়ে এখনও আতঙ্কের চোরাস্রোত বইছে মণিপুর জুড়ে। বাতিল হয়েছে সমস্ত ট্রেন। সরকারি সূত্রে শনিবার জানানো হয়েছে গত কয়েকদিনের হিংসায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ২০। তবে সেনা ও অন্যান্য সূত্রে এ পর্যন্ত হিংসার বলির সংখ্যা ৫৪ বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, আতঙ্কে রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও অব্যাহত। তাছাড়া অনেককেই মারাত্মক বিভীষিকার মধ্যে দিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। শনিবার চুড়াচাঁদপুরে ৪ জনকে গুলি করে হত্যার পাশাপাশি হিংসার ঘটনায় ইম্ফলে নিহত হয়েছেন এক ট্যাক্স অ্যাসিস্ট্যান্ট। ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, নিরাপত্তা জওয়ানদের মোতায়েনের ফলে মানুষ বাড়ি থেকে প্রায় বেরোচ্ছেনই না। সন্ধ্যা ৭ টা মৈতেইদের একাংশকে নিরাপত্তাকর্মীরা শহর থেকে সরিয়ে নিতে চাওয়ার খবর চাউর হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়। শহরের প্রধান সড়ক তিদিম রোডে শুরু হয় মানুষের ব্যারিকেড। ব্যারিকেডের সামনে মহিলাদের রাখা হলেও নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালায় বলে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা। এতে চারজনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। ইম্ফলে আসাম রাইফেলসের জনৈক কর্মকর্তা জানান ,ব্যারিকেডের জন্য জমায়েতে ১০০ থেকে ২০০ জন জড়ো হন। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। এরপর গুলিতে চারজন মারা যান। আধিরিকটি আরও বলেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে লোকেদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। বিভিন্ন অংশে রাস্তা অবরোধও অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অপর এক সিনিয়র আধিকারিকও নিশ্চিত করেছেন যে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে গুলিতে চারজন মারা গেছেন, যদিও জেলার আরও একজন বরিষ্ঠ পুলিশ আধিকারিকের মতে মৃতের সংখ্যা তিন।
উল্লেখ্য, হিংসাদীর্ণ মণিপুরে ইতিমধ্যেই দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের ৮ জেলায় জারি করা হয়েছে কার্ফু। রাজ্য জুড়ে স্থগিত করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। সেনাবাহিনীর জনৈক মুখপাত্র জানান, বুধবার নাগা ও কুকি উপজাতিদের সংহতি মিছিলের পর হিংসা শুরু হয়। রাতে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের সব জেলাশাসক, সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নোটিশ ইস্যু করার কথা হয়েছে। রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ বলেই জানিয়েছেন মণিপুরের রাজ্যপাল। ইম্ফল উপত্যকায় মৈতেই জনজাতির তরফে দাবি তোলা হয়েছে, তাদের তফশিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। যদিও মৈতেইদের এই দাবি মানতে পারছেন না স্থানীয় কুকি সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা। তা থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। তার জেরে ক্রমেই ছড়াচ্ছে হিংসা।