অনলাইন ডেস্ক : শনিবার সারা দেশের সঙ্গে চিরাচরিত উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় আবেগে বরাক উপত্যকার তিন জেলার ইসলাম ধর্মাবলম্বীরাও পালন করলেন খুশির উৎসব ঈদ উল ফিতর।একমাসের সিয়াম সাধনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিশ্চিত হবার পর যখন ঈদের ঘোষণা হয় তখন আকাশে মেঘের গর্জন দেখে বিভিন্ন ঈদগাহ ও মসজিদ কমিটির কর্মকর্তা ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদের নামাজ নিয়ে চিন্তান্বিত হলেও শনিবার সকালে আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে ঝরঝরা হলে আবাল বৃদ্ধ বনিতার মুখে হাসি ফোটে।সকাল থেকে সুন্দর সুন্দর জামা পরে ও মাথায় টুপি দিয়ে সবাইকে ঈদের জামাতে অংশ নিতে ঈদগামুখী হতে দেখা যায়।
শিলচর ইটখলা ঈদগাহ ময়দানে কাছাড় জেলার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ন’টায়। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এদিন বৃহৎ ঈদের জামাতে অংশ নিতে ধর্মপ্রাণ মানুষের স্ত্রোত বয়ে যায়। ইটখলা ঈদগাহে ঈদের নামাজ পরিচালনা করেন ঐতিহ্যবাহী শিলচর বড় মসজিদের প্রধান ইমাম মওলানা সাব্বির আহমদ লস্কর। নামাজের আগে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মওলানা সাব্বির আহমেদ শিলচর শহর সহ আপামর জেলাবাসীকে ঈদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে সুনাগরিক হয়ে হিংসা বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বলেন,দেশ যদি হিংসামুক্ত হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন হবে এবং বুনিয়াদ আরও শক্তিশালী হবে। তিনি আরও বলেন, ইসলাম ধর্ম দেশপ্রেমকে ইমানের অঙ্গ হিসেবে মনে করে । অতএব প্রত্যেক দেশবাসীকে এই দেশের সংহতি ও অখন্ডতা বজায় রাখতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যেতে হবে। ইমাম সাব্বির আহমদ মুসলিম যুবসমাজকে নেশা ও মাদক সেবন থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
নামাজ শেষে মওলানা সাব্বির আহমদ প্রত্যেক মুসলিমকে প্রকৃত ধর্মপ্রাণ হয়ে জীবনযাপন সহ শিলচর তথা দেশেরমঙ্গল সহ বিশ্বশান্তি কামনা করে পরম করুনাময়ের দরবারে দোয়া করেন।এরআগে ইটখলা ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মওলানা সাদিক আহমদ লস্কর রমজানের রোজা এবং ঈদ উল ফিতরের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন। মসজিদ কমিটির সভাপতি বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর ঈদের জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন,শিলচর শহরের অন্যতম প্রাচীন ইটখলা ঈদগাহ মসজিদের নতুন চারতলা বিশিষ্ট ভবনের কাজের সূচনা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণের ব্যাপারে তিনি আপামর জেলাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।ঈদের নামাজ শেষে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি ও মুসাফা করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এদিন শিলচর ইটখলা ঈদগাহে প্রতি বছরের মত এবারও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে জেলা শাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলাশাসক যুবরাজ বরঠাকুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন, এনসিসির কর্ণেল মোজাম্মিল সহ শহরের অমুসলিম সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত হন।একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ উপলক্ষে ইটখলা ঈদগাহ মসজিদ কমিটির উদ্যোগে এক মত বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শারদ উৎসব ও ঈদে শিলচরে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের এ সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। এই সংস্কৃতিকে আরও সুদৃঢ় করার ব্যাপারে সবাই গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবি-লেখক ইমাদ উদ্দিন বুলবুলের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় অনুষ্ঠান সন্চালনা করেন দৈনিক সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক তথা বিশিষ্ট নাগরিক তৈমুর রাজা চৌধুরী। এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক যুবরাজ বরঠাকুর বলেন, অসম হল শংকর ও আজানপীরের বিচরণভূমি। এখানকার মানুষ পরম্পরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। এই বন্ধন যাতে কোন স্বার্থান্বেষী মহল চিড় ধরাতে না পারে তার জন্য উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে তিনি সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। এনসিসির কর্ণেল মোজাম্মেলও সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত সেন বলেন,উৎসবে অবশ্যই আনন্দস্ফুর্তি করুন। তবে আনন্দ ফুর্তির নামে যুব সমাজ যাতে বেলেল্লাপনায় মেতে না উঠে সেদিকে নজর রাখতে অভিভাবকদের আহ্বান জানান।অন্যান্যদের মধ্যে নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের নেতা সাধন পুরকায়স্থ, বিডিএফ নেতা প্রদীপ দত্তরায়,কংগ্রেস নেতা সন্জীব রায়,সরিফুজ্জামান লস্কর, পুলক সোম,জয়দীপ ভট্টাচার্য, বদরুল হোসেন মজুমদার,শিক্ষাবিদ আব্দুর রহমান লস্কর প্রমুখ অনুরূপ বক্তব্য রাখেন। প্রতিবেশী অমুসলিম ভাইরা ঈদগায় এসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সভার সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল। মসজিদ কমিটির পক্ষে নেওয়ার হোসেন মজুমদার সবাইকে মিষ্টিমুখ করান। শিলচর ঈদগাহে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসন থেকে এই এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষী ও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
জেলার অন্যান্য যায়গা থেকেও এবার শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন করার খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই। গ্রাম শহরেও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ তোরণ ও আলোকমালায় সাজিয়ে তোলা হয়।