অনলাইন ডেস্ক : এবার মনিপুরেও অস্তিত্ব সংকটের মুখে অ-মনিপুরিরা। গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক নোটিফিকেশন জারি করে মনিপুরে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) চালু করেছে সে রাজ্যের এন বীরেন সিংহ নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। সঙ্গে আদি বাসিন্দার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, মনিপুরে বসবাসকারী অ-মনিপুরি, যাদের ১৯৬১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগের নথি নেই, তাদের সে রাজ্যের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে তারা যদি মনিপুরে বসবাস করতে চান, নিতে হবে ইনার লাইন পারমিট। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মনিপুর সরকার ঘোষিত আদি বাসিন্দার তালিকায় নেই শিখ, মারোয়াড়ি, বাঙালি, বিহারি সহ সে রাজ্যে বসবাসকারী বহু জনগোষ্ঠীর নাম। এমনকি বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরিদেরও রাখা হয়নি তালিকায়। ফলে মনিপুরের জনসংখ্যার এক বড় অংশ ভুগছেন অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কায়। এই আবহে শঙ্কার পারদ আরও কয়েক ধাপ চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ। দিন কয়েক আগে তিনি ঘোষণা করেছেন, ১৯৬১ সালের ১ জানুয়ারিকে ভিত্তিবর্ষ ধরে মনিপুরেও শুরু হবে এনআরসি। এ-ও প্রচার হচ্ছে যে, সরকারি কর্মচারিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খতিয়ে দেখবেন ১৯৬১ সালের নথিপত্র। নথিহীন বাসিন্দাদের কেড়ে নেওয়া হবে সকল নাগরিক সুযোগসুবিধা। এতে স্বাভাবিকভাবেই সে রাজ্যে অ-মনিপুরিদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ত্রাস। প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অসমের বরাক উপত্যকায়ও। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে উপত্যকার বেশ কয়েকটি সংগঠন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক ছত্রছায়ায় এসেছে সিআরপিসি, আমরা বাঙালি, বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, অবিসা, ইয়াসি সহ একটি ছাত্র সংগঠন। গতকাল বুধবার মনিপুরের ‘অল মনিপুর বেঙ্গলি স্টুডেন্টস ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিলচরে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন সংগঠনগুলির পদাধিকারীরা। এর ঠিক পরদিন বৃহস্পতিবার শিলচর পেনশনার্স ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তাঁরা জানিয়েছেন, মনিপুর সরকারের এহেন একপেশে নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী সালমান খুরশিদ, ফুজাইল আহমেদ আয়ূবি সহ গৌহাটি হাইকোর্টের বরিষ্ট আইনজীবী হাফেজ রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে। পাশাপাশি তৈরি করা হচ্ছে আন্দোলনের রূপরেখা-ও। ইয়াসির কর্মকর্তা সঞ্জীব রায়, সিআরপিসির আলি রাজা ওসমানী, অবিসার বাহারুল ইসলাম বড়ভূইয়া, বিডিএফ কর্মকর্তা হৃষিকেশ দে, অধ্যাপক নিরঞ্জন দত্তদের পাশে বসিয়ে মনিপুর সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন আমরা বাঙালির কর্মকর্তা সাধন পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, এনআরসি হচ্ছে পুরোপুরি কেন্দ্রসরকার নিয়ন্ত্রাধীন একটি প্রক্রিয়া। কোনও রাজ্যে এনআরসি হবে কি-না, হলে এর মডালিটি কী হবে, সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্র। সেই জায়গায় মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী একজন রাজ্যপ্রধান হয়ে কীসের ভিত্তিতে এনআরসি ঘোষণা করলেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাধনবাবু। এ-ও বলেন, ইনার লাইন পারমিট চালু করতে পারে না মনিপুর সরকার। কারণ, মনিপুর কোনও পাহাড়ি রাজ্য নয়। কিন্তু দেড়শো বছর আগের ব্রিটিশ প্রবর্তিত আইন ‘বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন, ১৮৭৩’ -কে হাতিয়ার করে আইএলপি চালু হয়েছে মনিপুরে। এর কোনও যৌক্তিকতা নেই। তিনি বলেন, মনিপুর সরকারের আইএলপি-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন আমরা বাঙালির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে বকুলচন্দ্র রায়। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। অথচ মনিপুরে আবারও নয়া ফরমান জারি হয়েছে। তিনি বলেন, একদিকে কেন্দ্র সরকার ‘এক দেশ, এক নীতি’-র আহ্বান জানাচ্ছে। অপরদিকে, একই দলের সরকার মনিপুরে বিভাজন তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্লু-প্রিন্ট। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে উপত্যকার বিভিন্ন সংগঠন।