অনলাইন ডেস্ক : খুব শীঘ্রই দুল্লভছড়া-শিলচর রুটে চলাচল করবে অসম রাজ্য পরিবহণ নিগম (এএসটিসি)-এর যাত্রীবাহী বাস। আশ্বাস দিয়েছেন নিগমের চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাস।
করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্গত দুল্লভছড়ায় শিলচরগামী যাত্রী-ভিড় দেখে গতকাল রাতে এএসটিসি-র চেয়ারম্যান মিশনরঞ্জন দাসের কাছে ওই রুটে অন্তত একটি বাস চালানোর ব্যবস্থা করতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্জি জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট নাগরিক শোভন দাস। ফোনে তাঁর আর্জি শুনে তৎক্ষণাৎ এই দাবি পূরণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন মিশন।
দুল্লভছড়ার বিশিষ্ট নাগরিক শোভন দাস এএসটিসি-র চেয়ারম্যানকে জানান, কয়েক দশক আগে দুল্লভছড়া-শিলচর রুটে একটি বাস যাতায়াত করত। প্রতিদিন সকালে বাসটি দুল্লভছড়া স্টেশন রোড থেকে ছেড়ে হাইলাকান্দি, মাটিজুরি, আইরংমারা, আরইসি (অধুনা নিট শিলচর) এবং শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শহরে প্রবেশ করত। অজ্ঞাতকারণে বেশ কয়েক বছর ধরে ওই রুটে এএসটিসির বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বিগতদিনের চেয়ে যাত্রীদের ভিড় বহুগুণ বেড়েছে। তাই বৃহত্তর জনতার স্বার্থে একই রুটে ফের এএসটিসি-র বাস চালাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি মিশন দাসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
মিশনের কাছে শোভন দাসের আরও আর্জি ছিল, যে বাস চালানো হবে, তা যেন পূর্ববৎ হাইলাকান্দি, মাটিজুরি, আইরংমারা, নিট এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শিলচর শহরে প্রবেশ করে। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। বলেন, এতে দুল্লভছড়া, আনিপুর, রামকৃষ্ণনগর প্রভৃতি এলাকার বহু রোগীর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে সুবিধা হবে।
সব শুনে এএসটিসি-র চেয়ারম্যান দাস শোভন দাসকে জানান, ইতিমধ্যে তাঁর (মিশন) জন্য দুটি নতুন বাস মঞ্জুর করেছে সরকার। এ থেকে একটি খুব শীঘ্রই দুল্লভছড়া-শিলচর রুটের জন্য দেবেন এবং তিনি (শোভন) যে রুটে বাসটি যাতায়াত করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন, তা পূরণ করার চেষ্টা করবেন, আশ্বাস দিয়েছেন মিশন দাস।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, শোভন দাসের বাবা, সাংবাদিক শরদিন্দু দাসের (প্রয়াত) অদম্য প্রচেষ্টায় ১৯৮৭ সালে দুল্লভছড়া-শিলচর রুটে এএসটিসি-র একটি লাল বাস চালু হয়েছিল। তখন শিলচরে যাতায়াতের জন্য স্থানীয়দের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হত। তা দেখে বছরের পর বছর করিমগঞ্জের তদানীন্তন জেলাশাসক, মন্ত্রী, বিধায়কের কাছে চিঠি লিখেছেন শরদিন্দু দাস।
তাঁর ওই সব চিঠি বহন করে যথাস্থানে পৌঁছাতেন তাঁরই সাংবাদিক-ভ্রাতুষ্পুত্র। হাল ছাড়েননি শরদিন্দুবাবু। সাংবাদিক-ভ্রাতুষ্পুত্রের সঙ্গে একদিন তিনি সশরীরে যান শিলচরের হাইলাকান্দি রোডে (অধুনা নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউ) এএসটিসি-র রিজিওনাল দফতরে। সেখানে রিজিওনাল অফিসারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বহুক্ষণ কথা বলে এ সম্পর্কিত একটি স্মারকপত্র তুলে দেন তিনি।
এরই মধ্যে একদিন রিজিওনাল অফিসার এলাকার ফিজিবিলিটি দেখতে শিলচর থেকে সাংবাদিক-ভ্রাতুষ্পুত্রকে নিয়ে দুল্লভছড়া যান। সেদিন তাঁর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল শরদিন্দু দাসের বাড়ি ‘সারদা ভবন’-এ। ওই দিনই তিনি কথা দিয়ে যান, এক সপ্তাহের মধ্যে দুল্লভছড়ার যাত্রীদের জন্য একটি বাস চালু করবেন। যথারীতি বাস চালু হল।
প্ৰসঙ্গত, দুল্লভছড়া–শিলচর রুটে একটি বাসের জন্য তদানীন্তন স্থানীয় বিধায়ক কুমারী রবিদাসের সঙ্গেও শরদিন্দুবাবুর বহুবার উষ্ণ বাক্য ব্যয় হয়েছে। দুল্লভছড়ায় এএসটিসি–র একটি যাত্রীবাহী বাসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত বহু প্রতিবেদন শিলচর থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রান্তজ্যোতি এবং গতি পত্রিকায় লিখেছেন শরদিন্দু কুমার দাস।
কিন্তু ১৯৯৮ সালে শরদিন্দু দাসের প্রয়াণের পর ওই রুটে আচমকা লাল বাসের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য কয়েক বছর পর স্থানীয়দের দাবির ভিত্তিতে এএসটিসি-র বাস পুনরায় চালু হয়। কিন্তু আবারও বাসের অভাব সহ নানা অজুহাতে তা বন্ধ করে দেয় এএসটিসি কর্তৃপক্ষ।