অনলাইন ডেস্ক : ত্রিপুরায় ভোটের রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। সোমবার রাজ্যে জনসভা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন সভা থেকে রাজ্যের বিরোধী দলকে আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি সরকারের ‘দু’নম্বর’। শাহের মূল নিশানায় ছিল বাম-কংগ্রেস জোটই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিন অমিত-ভাষণে শোনা যায়নি তৃণমূল কংগ্রেসের নাম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একসময় ত্রিপুরা উগ্রপন্থীদের আখড়া ছিল। গত পাঁচ বছরে বিজেপির দুই মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যকে আমূল বদলে দিয়েছেন।
বস্তুত, বিরোধী দলকে আক্রমণের পাশাপাশি উন্নয়নের তাসও খেলতে চেয়েছেন তিনি। তাই ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার আসায় কতটা উন্নতি হয়েছে, তা বারবার বোঝাতে চেয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন দুপুরে খোয়াই এলাকার শান্তিরবাজারের এক জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘বামেদের আমলে উগ্রবাদের দখলে চলে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। বিজেপির সুশাসনই ফের উন্নয়নের হাইওয়েতে নিয়ে এসেছে ত্রিপুরাকে।’ এই রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন শাহ। তাঁর দাবি, সমস্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভাবনীয় উন্নয়ন নিয়ে আসার পণ নিয়েছেন মোদি। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্র-রাজ্য মিলে কাজ চলছে। গত পাঁচ বছরে তার নমুনা দেখেওছেন ত্রিপুরাবাসী। এবার ফের একবার সুযোগ দিলে এই রাজ্যের ব্যপক উন্নতি ঘটবে।
এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের সদিচ্ছার কথা ঘুরেফিরে শোনা গেছে এদিন শাহের ভাষণে। তাঁর মন্তব্য, এখানে উগ্রপন্থা মেটানোর লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগে উত্তর পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীদের গুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যেত। এখন বিমান এবং রেলের ইঞ্জিনের শব্দ শোনা যায়। শাহের বক্তব্য, জনজাতিদের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে বিজেপি সরকার। ব্রু শরণার্থী সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দেওয়া। সমৃদ্ধ ত্রিপুরাকে ভোট দেওয়া। তাই ত্রিপুরায় দ্বিতীয়বার বিজেপি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাম-কংগ্রেস আমলে ত্রিপুরায় ঘটা হিংসার কথাও বলেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘সিপিএম জিততে পারবে না জেনেই কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধেছে। তিপ্রামথার সঙ্গেও গোপন সমঝোতা করেছে তারা। শাহের অভিযোগ, বাম-কংগ্রেস জোটকে ভোট দেওয়া মানেই ত্রিপুরায় ফের হিংসার পরিবেশ তৈরি করা। সন্ধ্যার পরে আগরতলা শহরে এক বড় রোড শো করেন অমিত শাহ। সেখানে বিজেপির প্রচুর নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।ভিড় দেখে শাহের দাবি, ত্রিপুরায় বিজেপির ফের ক্ষমতা দখল ইতিমধ্যেই নিসছিত হয়ে গেছে। এদিন শাহের সফরের মাঝেই আগরতলায় পা রাখেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিকেলে উদয়পুরের মাতাবাড়ি পরিদর্শনে যান তিনি। মঙ্গলবার আগরতলায় পদযাত্রায় অংশ নেবেন মমতা। কিন্তু এই আবহে অমিত শাহ তৃণমূলের কথা মুখেই আনেননি। রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দলের অস্তিত্বই কার্যত এড়িয়ে গেছেন। এর ফলে ত্রিপুরায় বিভিন্ন রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘অমিত শাহ কার নাম নেবেন এটা একান্তই বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে এটা ঠিক এখানে বিজেপির গত পাঁচ বছরের অপশাসনের ফলে এদিন একেবারেই ভঙ্গুর ভাষণ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।’ এর পাশাপাশি তৃণমূলের দাবি, ত্রিপুরার মানুষ এবার বিজেপিকে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাইছেন।