অনলাইন ডেস্ক : কর্তব্যরত চিকিৎসককে চড়, লাথি মারার মতো এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে জালালপুর হাসপাতালে। ঘটনাটি নিয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক জিপি সিং। মামলা করেছেন প্রহৃত চিকিৎসকও। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় কালাইন পুলিশ। তবে এনিয়ে কাছাড়ের চিকিৎসক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ঘটনাটি শনিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটে কালাইন থানাধীন জালালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। তখন হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন ডাঃ রোহিত দাগা। একদল লোক তখন হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ওই চিকিৎসকের উপর চড়াও হন। এক ব্যক্তি পরপর ডাঃ রোহিতকে চড়, লাথিও মারেন। ঘটনাটি তৃতীয় ব্যক্তির কল্যানে ক্যামারাবন্দি হওয়ায় তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সমূহ ঘটনা জনসমক্ষে চলে আসে। কোনও এক ইস্যু নিয়ে প্রথমে তর্কাতর্কি এবং পরেই চিকিৎসকের উপর শারিরীক আক্রমণ ঘটে। গুমড়া, কুশিয়ারকুল এলাকার পরিচিত একদল তথাকথিত সমাজসেবীর নেতৃত্বে ওই শারীরিক আক্রমণ চলে বলে অভিযোগ। এনিয়ে কালাইন থানায় মামলা করেন নিগৃহীত চিকিৎসক ডাঃ রোহিত দাগা। এতে সুধির দাস নামের একজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, অন্যান্য সঙ্গীর প্ররোচনায় সুধীর চিকিৎসকের উপর হাত তোলার সাহস জোগায়। ঘটনাটি সোস্যাল মিডিয়ায় চাউর হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশের উর্ধতন মহল। অসম পুলিশের মহানির্দেশক জিপি সিং জালালপুরের চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে ট্যুইট করেন। তিনি তাঁর অফিসিয়াল ট্যুইটার হেন্ড্যাল থেকে জানান, জালালপুর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রোহিত দাগার উপর শারিরীক আক্রমণকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ এনিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। খবর মতে, ডিজিপি জিপি সিঙের ট্যুইটের পর নড়েচড়ে বসে কালাইন পুলিশ। তারা কুশিয়ারকুল এলাকার কনক নাথকে থানায় নিয়ে আসে। চালায় জিজ্ঞাসাবাদ। তবে বিকেলে কনকবাবুকে বাড়ি যেতে দেয় পুলিশ। কনক নাথ কুশিয়ারকুল জিপি সভানেত্রী মিতা নাথের স্বামী।
এদিকে শনিবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানালেন চিকিৎসক ডাঃ রোহিত দাগা। তিনি সাময়িক প্রসঙ্গ-কে জানান, ওই রাতে তিনি হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। তখন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টা বাজে। একজন রোগীকে ওই সময় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তিনি চিকিৎসা করছিলেন। এমন সময় একদল লোক এসে চড়াও হয়। যারা ওই রোগীর কেউ ছিলেন না। কনক নাথ, সুধীর দাসের নেতৃত্বে আসা লোকরা জানতে চায়, হাসপাতালের গেটের সামনে ব্যাডমিন্টন খেলা কেন হচ্ছে? এতে হাসপাতালে প্রবেশে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে। এঁদের জবাব দিতে গিয়ে ডাঃ রোহিত বলেন, গেটের বাইরে ব্যাডমিন্টন খেলার বিষয়টা তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে। হাসপাতালের ভেতর খেলা হলে তিনি হস্তক্ষেপ করতে পারতেন। গেটের বাইরে স্থানীয় কিছু যুবক, ব্যবসায়ী মিলে বেডমিন্টন খেলেন। এনিয়ে যখন কথা কাটাকাটি চলছিল, তখন সুধীর দাস নামের লোকটি ডাঃ রোহিতকে স্বজোরে লাথি মারে। কিছু সময় পর চিকিৎসককে ফের চড় কষায় সুধীর। ডাঃ রোহিত বলতে থাকেন, বিষয়টি তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের এসডিএমও ডাঃ সুমন ভৌমিককে জানিয়ে তাকে রক্ষা করতে আর্জি রাখেন। এর কিছু সময় পর হাসপাতালে হাজির হয় চিকিৎসক। বর্তমানে ডাঃ রোহিত বাড়িতে আছেন। কিন্তু রোগী দেখার মতো মানসিক অবস্থায় নেই বলে জানালেন।
জানা গেছে, এনিয়ে রবিবার জালালপুর হাসপাতালে এক সভাও হয়। সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। তারা পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা যায়। তাছাড়া জুনিয়র ডক্টররা ঘটনাকে মোটেও খাটো করে দেখছেন না। প্রশাসনিক পদক্ষেপ আশানুরূপ না হলে তারা আন্দোলনে যেতে পারেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এদিকে কালাইন থানার ওসি বিপুল বিশ্বাস জানান, অভিযুক্ত সুধীর দাসকে গ্রেফতার করতে তল্লাশি চলছে। তাছাড়া থানায় নিয়ে আসা কনক নাথকেও যেতে দেওয়া হয়েছে। কনকবাবুকে আটক বা গ্রেফতারও করা হয়নি। উল্লেখ্য, পুলিশ প্রধান জিপি সিং এনিয়ে তৎপরতা দেখানোয় কালাইন পুলিশ খুব গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে রবিবার সন্ধ্যা রাতে অভিযুক্ত সুধীর দাসকে তারা পাকড়াও করতে সক্ষম হয়।