অনলাইন ডেস্ক : কর্মীদের দুর্নীতির দরুন ডুবেছে কাগজ কল। শাসকদলের একাংশ কর্মকর্তা সুযোগ পেলেই এমন অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সিবিআই ১১ জন রাঘববোয়ালের নামে চার্জশিট পেশ করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দেখেশুনে মনে হচ্ছে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে এদের আড়াল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল কাছাড় ও নগাঁও কাগজ কলের জয়েন্ট অ্যাকশন কোর্ডিনেশন কমিটি অব রিকগনাইজড ইউনিয়নস (জাক্রু)।
কমিটির সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা রবিবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেন, কাগজ কলের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সি বিআই চার্জশীট পেশ করেছে । এতে অভিযুক্ত করা হয়েছে হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন লিমিটেডের অবসরপ্রাপ্ত সিএমডি এম ভি এন রাও, অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর (অপারেশন) এসএন ভট্টাচার্য, প্রাক্তন ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) অমিতাভ ব্যানার্জি, কোম্পানি সেক্রেটারি এল আর একনাথ, অবসরপ্রাপ্ত চিফ এক্সিকিউটিভ প্রতাপ গোস্বামী, চিফ এক্সিকিউটিভ টি আর গৌড়া, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম ওমেনমেন, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (কমার্শিয়াল) মুরলিধরন পি কে, সিনিয়র ম্যানেজার (ফিন্যান্স) এস দাস মহাপাত্র, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম (কমার্শিয়াল) বি ডি মজুমদার ও বাঁশ সরবরাহের বরাতপ্রাপ্ত হিল ট্রেড এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আর এস গান্ধীকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনোও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ কর্মচারী সংগঠনগুলো কাগজ কল নিয়ে কোনও আওয়াজ উঠালেই শাসকদলের একাংশ কর্মকর্তা উল্টে সেই কর্মচারীদের দিকেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে পাল্টা সরব হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায় শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়কে। যদিও রাজদীপবাবু বা শাসকদলের অন্য কোনও কর্মকর্তা সিবিআইর চার্জশিটে অভিযুক্ত রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে আজ পর্যন্ত টু শব্দটি করেননি। তাদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে কর্মচারীদের দোষারোপ করে খেলাটা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে তারা চাইছেন এই রাঘববোয়ালদের আড়াল করে রক্ষণাবেক্ষণ দিতে।
মানবেন্দ্রবাবুরা বলেন, শাসকদলের এসব নেতৃবৃন্দের কার্যকলাপ থেকে তারা যা বুঝার বুঝে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সিবিআইর চার্জশীটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহ তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আর্জি জানিয়ে এদিনই তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে এক স্মারকপত্র প্রেরণ করেছেন। তারা আরও বলেন, কর্মচারীদের দুর্নীতির দরুন কাগজ কল বন্ধ হয়েছে শাসকদলের একাংশ কর্মকর্তার এমন মিথ্যা বয়ানের দরুন সামাজিকভাবে অপদস্ত হতে হচ্ছে কর্মচারী ও তাদের পরিবারের লোকেদের। অথচ সিবিআই অভিযুক্ত করার পরও শাসকদলের এই কর্মকর্তারা রাঘববোয়ালদের নিয়ে সম্পূর্ণ চুপ ।
মানবেন্দ্র বাবুরা রাজদীপ রায় সহ শাসকদলের একাংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরব হলেও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার। বলেন কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের সংগ্রামের জেরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা উদ্যোগী হয়েছেন। এবার কাছাড় কাগজ কল পুনরুজ্জিবীত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যখন নিযুক্তি হবে তখন স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্যতায় জাক্রু গড়ে তুলবে বৃহত্তর আন্দোলন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, কাগজ কলকে ঘিরে রাঘব বোয়ালরা দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন এতে শাসক এবং বিরোধী সব পক্ষের কিছু কিছু নেতা জড়িত রয়েছেন। আরও বিস্তারিত তদন্ত হলে অবশ্যই বেরিয়ে আসবে সবার নাম। রাজদীপ রায়দের উচিত এক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়া। অন্যথায় ধরে নিতে হবে তারা আড়াল করছেন দুর্নীতিবাজদের।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে জাক্রুর অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মনিলাল জায়গীরদার, সুশান্ত সাগর দে, দেবেন্দ্র চক্রবর্তী ও ফনীভূষণ দাস প্রমুখ।