সাময়িক প্রসঙ্গ , গুয়াহাটি, ২ ডিসেম্বর : ২০১১-র আদমসুমারি দেখাচ্ছে, রাজ্যে সংখ্যালঘু বা মুসলমানদের জনসংখ্যার হার না বাড়লেও কমেনি। এই হার দাঁড়িয়ে আছে ২৯ শতাংশে। অন্যদিকে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার হার হ্রাস পেয়েছে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। এই অবস্থায় জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজ্যে ডিলিমিটেশন হলে লোকসভা এবং বিধানসভা কেন্দ্রগুলোর ছবি কেমন হতে পারে, সেটা মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শৰ্মা বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন হওয়া উচিত নয়।
নতুন বছরের সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে নতুন দিনের আলাপে বসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বিকাশের স্বার্থে-যাঁরা সন্তান জন্ম হারে বাঁধ দিয়েছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন হলে তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। তাই ভবিষ্যতে কেন্দ্র পুনর্নির্ধারণ হওয়ার সময় সংসদে এই বিতর্ক হওয়া উচিত যে, ভারত সরকারের জনসংখ্যা নীতি যাঁরা মানলেন, তাঁদের শাস্তি না পুরস্কার দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ভারত সরকার বলেছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ‘হাম দো হামারা দো’ নীতি মেনে চলতে বলা হয়েছিল। একটা সম্প্রদায় সেটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ মানেননি। অবাধে সন্তান জন্ম দেওয়া হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, এমন এক পরিস্থিতিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ডিলিমিটেশন হতে পারে কি? সেরকম হলে তো যাঁরা সরকারের নীতি মেনেছেন, তাঁদের শাস্তি দেওয়া হবে, আর যাঁরা মানেননি, তাঁরা পুরস্কৃত হবেন। ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছিল ভারত সরকার। সেটা যাঁরা করেছেন, এখন তাঁদের সঙ্গেই অন্যায় হচ্ছে। আমি মনে করি পরবর্তী ডিলিমিটেশনের সময় সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক হবে যে, যাঁরা জনসংখ্যা নীতি মেনেছেন, তাঁদের শাস্তি না পুরস্কার কোনটা প্রাপ্য’, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, ডিলিমিটেশনে জনসংখ্যা মাপকাঠি হতে পারে না। তবে এবার ডিলিমিটেশন জনসংখ্যার ভিত্তিতেই হচ্ছে। সারা দেশে যেহেতু ২০০১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী ডিলিমিটেশন হয়েছে, তাই অসমেও সেটাই হবে। সামগ্রিকভাবে এই পরিপ্রেক্ষিতটাকে মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোনও এলাকা থেকে তো আর জনসংখ্যা কমানো যাবে না। ধুবড়ি জেলায় বাঙালি মুসলমানরা যেমন আছেন, তেমনই থাকবেন। বরাক উপত্যকায় হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যার হার পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। সেই হিসেবে কেন্দ্রগুলোতে এর ছাপ পড়বেই। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, যা বাস্তব সেটা তো আর পাল্টানো যাবে না। সেজন্যই রাজ্য বিধানসভার বর্তমান ছবিটা অক্ষুণ্ণ থাকলেই হবে। এবং এটাও ঠিক যে, জাতির সুরক্ষায় নিশ্চয়ই চেষ্টা করে যেতে হবে।
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্য জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মুখে পড়েছে কিনা সেটা বোঝা যাবে ২০২১-এর আদমসুমারির পর ২০১১-র আদমসুমারি এই ছবিই যে, একটি সম্প্রদায়ের জনসংখ্যার হার বাড়তির দিকে। অন্য সম্প্রদায়ের হার একই আছে, ২৯ শতাংশ। বাড়েনি, কমেওনি। তবে হ্যাঁ, জনবিন্যাসগত পরিবর্তন তো হচ্ছেই। এনআরসি করার সময়ই সেটা স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে। তবে জনবিন্যাসগত এই পরিবর্তনের তীব্রতা কতটা, সেটা বোঝা যাবে ২০২১-এর আদমসুমারির পর।