অনলাইন ডেস্ক, করিমগঞ্জ : কল্যাণকামী রাষ্ট্রে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের স্বার্থে কাজ করা। কিন্তু অসমের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক তার উল্টো। বর্তমান সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করা। অসমের সংসদীয় এবং বিধানসভা এলাকা ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া নিয়ে বছরের প্রথম দিন এভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে বিঁধেছেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
২০০১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে সংসদীয় এবং বিধানসভা এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারন করতে চলছে সরকার। জারি হয়েছে নোটিফিকেশনও। ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে ২০২২ সালের শেষ দিনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাক উপত্যকার প্রশাসনিক স্তরে ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া। ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ায় কোনও অবস্থাতেই জেলার সীমানা লঙ্ঘন করা যাবে না। এটা মাথায় রেখেই অসম সরকার বছরের শেষ দিন কাছাড় জেলার পরিধি বাড়িয়ে নিয়েছে কৌশলে।
৩১ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার জেলার সংযোজন-বিয়োজনের কাজ সেরে ফেলেছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে ডিলিমিটেশনের ক্ষেত্রে। রবিবার এ ব্যাপার মুখ খুলেছেন কংগ্রেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। করিমগঞ্জের আবর্ত ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে কমলাক্ষ বলেন, অসমকে সুন্দরভাবে রূপ দেওয়ার ক্ষমতা নেই এই সরকারের। সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার করা। মানুষের স্বার্থে সপ্তাহে সপ্তাহে ক্যাবিনেট বৈঠক ডাকা হয়। একের পর এক ঘোষণা দেওয়া হলেও এর দশ শতাংশ পূরণ করা হয় না। ক্যাবিনেটের ৯৯ শতাংশ সিদ্ধান্ত এখন অবধি কার্যকর হয়নি। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে দিল্লিতে ক্যাবিনেট বৈঠক ডেকে বরাক উপত্যকার তিন জেলার প্রশাসনিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বছরের শেষ রাতেই সরকারের পক্ষ থেকে নোটিফিকেশন জারি করা হয়। অনেক ক্যাবিনেট বৈঠক হয়েছে, কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমন করে নোটিফিকেশন জারি হয়নি, বলেন তিনি।
কমলাক্ষ বলেন, ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে সবসময় একটা আতঙ্ক থাকত। বর্তমানে অসমের একই অবস্থা। প্রশাসনিক রদবদলের আগে কোনও ধরনের সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়নি। এমন-কি বদরপুর, হাইলাকান্দি, বজালি, তামুলপুর, হোজাই জেলার মানুষের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানা যায় না।
উল্লেখ্য, গতকাল বরাক উপত্যকায় প্রশাসনিক পরিবর্তন করতে অধিসূচনা জারি করা হয়েছে। এতে করিমগঞ্জ জেলা থেকে কাছাড় জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বদরপুর পুর এলাকা, বদরপুর টাউন চাপরা, আলাকুলিপুর (পার্ট), বদরপুর টাউন জুম পার্ট থ্রি, বদরপুর টাউন জুম পার্ট ফাইভ, বদরপুর টাউন জুম পার্ট সেভেন, পাহাড় কিত্তে সমাধার মোকাম (পার্ট) পাহাড় কিত্তে কুকিটিলা (পার্ট), চাপরা কিত্তে রেলসড়কের খাল, চাপরা কিত্তে বুন্দাশিল।
কাছাড় জেলা থেকে করিমগঞ্জ জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মাদারপুর, নিজ হরিটিকর পার্ট টু, হরিনগর পার্ট ওয়ান, হরিনগর পার্ট টু, হরিনগর পার্ট থ্রি, চণ্ডীনগর পার্ট টু, টুকরগ্রাম, চণ্ডীনগর পার্ট ওয়ান, লাঠিমারা, নাজাতপুর, করইকান্দি পার্ট টু, লোহামালি। হাইলাকান্দি জেলা থেকে কাছাড় জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাঁচগ্রাম, উত্তর বদরপুর, ঠাণ্ডাপুর, বদরপুর গ্রান্ট, উত্তর কাঞ্চনপুর, বক্রিহাওর পার্ট ওয়ান, দক্ষিণ বদরপুর। কাছাড় জেলা থেকে হাইলাকান্দি জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দুধপুর পার্ট টু, মহাদেবপুর (মোহনপুর), গণিরগ্রাম পার্ট ওয়ান, গণিরগ্রাম পার্ট টু, শ্রীপুর পার্ট টু।
যে পদ্ধতিতে জেলার বিভিন্ন অংশ সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, মূলত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি থেকে কেটে কাছাড়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাছাড়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা আবার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায়। এর ফলে আগামী দিনে কাছাড় পুরোপুরি হিন্দু অধ্যুষিত জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। (সংবাদ সংস্থা)