দুটি উদ্বেগজনক খবর এ দেশের অর্থনীতিতে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে। প্রথম খবরটি হল, আগামী জানুয়ারি মাসে চিনে করোনার সংক্রমণ চরম পর্যায়ে পৌঁছবে এবং যার আঁচ প্রতিবেশী ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কম-বেশি পড়বে। দ্বিতীয় খবরটি হল, লন্ডন ভিত্তিক অর্থনীতির গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইকোনমিক্স এন্ড বিজনেস রিসার্চ ‘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব আরও কিছুটা খারাপ হবে, যার প্রভাব পড়বে কম-বেশি সব দেশেই। এই দুটো খবরই ভারতের মতো দেশের মানুষের কাছে বুকে কাঁপন ধরাতে শুরু করেছে।করোনার ভয়াবহ রূপটা কি হতে পারে সেটা এদেশের মানুষ দু’দফায় প্রত্যক্ষ করেছে। এটাও প্রত্যক্ষ করেছে করোনার থাবায় জাতীয় থেকে আঞ্চলিক অর্থনীতি কতটা বেসামাল হয় পড়তে পারে। এই দুটোর যুগলবন্দি সাধারণ মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্তি শোনা যাচ্ছে।
করোনার আতুর ঘর চিন কেন সংক্রমণকে ঠেকাতে পারল না সে নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে পৃথিবীর দেশে দেশে। যে দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অত্যন্ত কঠোর, সমস্ত প্রতিবাদী কন্ঠকে দলিত করতে অসম্ভব বেশি তৎপর, সে দেশের কেন এ অবস্থা সেটা আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনের সব খবর যথাযথভাবে বাইরে আসে না। তা সত্ত্বেও পশ্চিমী সংবাদ মাধ্যমের হাত ধরে যেসব খবর মিলছে তাতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে চিন সরকার বাস্তবিকই ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার দায় ঢাকতে লকডাউনের যাঁতাকলে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করার সব রকম চেষ্টা করেছে। যদিও মানুষ প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন এবং প্রতিবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ব্যবস্থাই নিয়েছে জিপিএ প্রশাসন। দেখা যাচ্ছে, চিনে বিভিন্ন কারণে নাগরিকদের মধ্যে যে অসন্তোষ রয়েছে তাকে দমন করার ক্ষেত্রে করোনাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে গিয়ে এখন এমন একটা অবস্থায় পৌঁছে গেছে যা গোটা পৃথিবীর কাছে ফের আতঙ্কের ছায়া ফেলছে। ভারতবর্ষে অবশ্য খুব শক্ত হাতেই করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে এবং দেশের জনজীবনকে ছন্দে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ফের সংক্রমনের ঘটনা আতঙ্কের ছায়া মেলায় সরকারি স্তরে মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালগুলোতে মহড়া শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনগুলোতে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী মাসগুলোতে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটা এখনও অনুমান নির্ভর হলেও জটিলতা যে বাড়তে চলেছে সে সম্পর্কে মোটামুটি আভাস মিলছে।
দু’দফায় করোনা সংক্রমণের ঢেউ এদেশে আছড়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষের আর্থিক স্থিতি এমন একটা পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যার রেশ রয়ে গেছে। কার্যত সাধারণ মানুষের সোজা হয়ে চলার ক্ষমতাটাই কেড়ে নিয়েছিল করোনার ঢেউ। বেকারি, কর্মহীনতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা সাধারণ মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। কতজন যে কত ভাবে বিপন্ন হয়েছে তার হিসেব পুরোটা এখনও পাওয়া যায়নি। আর্থিক মন্দায় দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট বেহাল হয়ে পড়েছিল। যদিও কর্পোরেট সেক্টরের কিছু এই অবস্থাকেই কাজে লাগিয়ে তাদের সম্পদের পাহাড়কে আরও স্ফীত করে তুলেছে। ব্রিটেনের আর্থিক পর্যবেক্ষকরা এই অবস্থায় আগামী বছর আর্থিক মন্দা আরো ব্যাপক হওয়ার যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে তার প্রেক্ষিতে এখনই জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিরোধমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া দরকার। ভারতবর্ষ ঐক্যবদ্ধ থেকে বিগত করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। গণসচেতনতাই মানুষের সহায়তা করেছে। আগামীতেও সচেতন থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তবে সাধারণ মানুষের রুজি রোজগারের জায়গা সুরক্ষিত রেখেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের কর্মসূচি প্রণয়ন প্রয়োজন। আম জনতার সতর্কতাও এ ক্ষেত্রে আবশ্যক।