অনলাইন ডেস্ক : কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অসুবিধা বা সমস্যার কথা বলা হয়েছে ঠিক। তবে সমস্যা বা অসুবিধার কথা উত্থাপন করেও প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি জানাননি কেউ। সবার মুখেই শোনা গেছে এক কথা-শিলচরের যানজট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে “ফ্লাইওভার” বা “এলিভেটেড রোড” চাই-ই-চাই।
শিলচরের যানজট সমস্যার সমাধানে রামনগর আইএসবিটি থেকে তারাপুর হয়ে ক্যাপিটাল মোড় এবং ক্যাপিটাল মোড় থেকে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ মোড় পর্যন্ত দুটি ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড রোড গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে অনেকদিন। মাঝে মাঝে এনিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপও চোখে পড়েছে। এবার ফ্লাইওভার গড়ে তোলার জন্য শিলান্যাসের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার শিলচরে জেলা কমিশনারের কার্যালয়ে শহরের বিশিষ্টজন সহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাদের ডেকে এনিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
দুই মন্ত্রী কৌশিক রায় ও কৃষ্ণেন্দু পাল, দুই বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী ও নীহার রঞ্জন দাস, জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব এবং পুলিশ সুপার নূমল মাহাতো, পূর্ত (সড়ক) বিভাগের কার্যাবাহী বাস্তকার অনিরুদ্ধ নাগদের উপস্থিতিতে মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে সবাই ফ্লাইওভার গড়ে তোলার পক্ষে একযোগে মত ব্যক্ত করলেও কেউ কেউ কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হতে পারে বলে মত ব্যক্ত করে তুলে ধরেন সেসব। প্রশ্ন তোলা হয় , সংকীর্ণ সেন্ট্রাল রোডের উপর দিয়ে ফ্লাইওভার তৈরি কতখানি সম্ভব। আমাকে শিলচরের ঐতিহ্যবাহী এই অংশ নিচে পড়ে যাবে, যা শোভনীয় হবেনা মোটেই, এমনও অভিমত ভক্ত করেন কেউ কেউ। তাই সেন্ট্রাল রোডকে বাদ দিয়ে ফ্লাইওভার গড়ে তোলা যায় কিনা এ নিয়ে প্রস্তাব করা হয়। এসবের মাঝে কেউ কেউ এমনও বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায় শিলচরের জন্য কোনও বড় প্রকল্প ঘোষনার পর নানা জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় প্রকল্প। এবার মুখ্যমন্ত্রী আগ্রহী হয়েছেন, তাই যতই বাধা বা সমস্যা হোক না কেন ফ্লাইওভার তৈরি করতেই হবে। এবার আটকে গেলে ভবিষ্যতে আর কোনওদিন হবে না তা।
সভায় ফ্লাইওভার তৈরির সময় শহরবাসীর চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তার যাতে ব্যবস্থা করা হয় এ নিয়েও মত ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া একইসঙ্গে দুটি ফ্লাইওভারের কাজ হবে না পর্যায়ক্রমে একটির পর অন্যটির কাজ হবে এ নিয়েও প্রশ্ন উঠে। এতে কেউ কেউ কাজের সময় শহরবাসীর সমস্যা যাতে তুলনামূলকভাবে কম হয় এর জন্য পর্যায়ক্রমে একটির পর অন্যটির কাজ করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেন।-
বৈঠকের পর সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মন্ত্রী কৌশিক রায় জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। ফ্লাইওভার
যাতে দ্রুত বাস্তবায়িত হয় এনিয়ে সবাই সহমত ব্যক্ত করেছেন। কৌশিক জানান দুটি ফ্লাইওভার গড়ে তোলার জন্য সবমিলিয়ে ১১০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন যত শীঘ্র সম্ভব ফ্লাইওভার এর কাজ শুরু করতে। তিনি আরও জানান, ফ্লাইওভার গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে ডিপিআর তৈরি করা হয়েছে । এর জন্য খুব বেশি জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। অনেক জমি জবরদখল হয়েছে। জবরদখল মুক্ত করলেই ফ্লাইওভার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে মহাসড়ক থেকে দুধ পাতিল হয়ে রামনগর আই এস বি টি পর্যন্ত রিংরোড তৈরিরও পরিকল্পনা করেছে। রিংরোড হয়ে গেলে এমনিতেই শহরের উপর যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে।
কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন নাগরিকদের মতামত থেকে যেসব তথ্য উঠে এসেছে পূর্ত বিভাগ এবং রাইটস সেসব পর্যালোচনা করবে। সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানানো হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, শিলচরের যানজট সমস্যা সমাধান এক বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে। এবার সবার সহযোগিতা কাম্য। এছাড়া রাইটস যে রিপোর্ট বানিয়েছে সে অনুযায়ী সেন্ট্রাল রোডে রাস্তার পরিসর কম হলেও সেখানে দিয়ে ফ্লাইওভার এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি। সঙ্গে এও জানান মুখ্যমন্ত্রী ফ্লাইওভারের কাজ দ্রুত শুরু করতে আগ্রহী।
বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চাইছেন ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর জন্য শীঘ্র শিলান্যাস করতে। এদিন সভায় কেউ কেউ পর্যায়ক্রমে একটির পর একটি ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর পক্ষে মত ব্যক্ত করলেও শিলচরকে সাজিয়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী একই সঙ্গে দুটির কাজ শুরু করতে আগ্রহী। তিনি আরও জানান, এ দিনের বৈঠকে শহরের বিশিষ্টজনেরা যেসব মতামত তুলে ধরেছেন দুই মন্ত্রী ও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে গিয়ে সেসব সম্পর্কে তাকে অবহিত করবেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি জেলা সভাপতি রূপম সাহা,দুই প্রাক্তন জেলা সভাপতি উদয় শঙ্কর গোস্বামী ও বিমলেন্দু রায়, শিলচর ডি এস এর সভাপতি শিবব্রত দত্ত, কংগ্রেস কর্মকর্তা তমাল কান্তি বনিক, বিজেপি কর্মকর্তা অভ্রজিত চক্রবর্তী, মূলচান্দ বৈদ, নীলাভ মজুমদার, অসিত দত্ত, অংশু কুমার রায়, রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত, দেবজ্যোতি স্বামী ও মনতোষ দে প্রমুখ।