সাময়িক প্রসঙ্গ, শিলচর, ৩১ ডিসেম্বর : আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে বরাক উপত্যকায় “হাতে হাত জুড়ো যাত্রা” শুরু করছে কংগ্রেস। উদ্দেশ্য মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বন্যা সমস্যা, সীমান্ত সমস্যা ইত্যাদির “ভয়ংকর চিত্র”বরাকবাসীর সামনে তুলে ধরা। শুক্রবার শিলচর জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেন বরা। তিনি যেন ২৮ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে উপত্যকার এক একটি বিধানসভা এলাকায় হবে যাত্রা। প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় গড়ে ১১ কিলোমিটার করে এই যাত্রা পরিক্রমা করবে মোট ১৬৫ কিলোমিটার পথ। এরমধ্যে দুদিন এই যাত্রায় শামিল হবেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিংও।
২৮ জানুয়ারি যাত্রা শুরু হবে কাছাড়ের ধলাইয়ের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। এবং শেষ দিনে যাত্রা হবে করিমগঞ্জ জেলার ভারত বাংলা সীমান্তবর্তী, মালেগড়ে। সভাপতি বরা বলেন, দলীয় বিধায়করা বিধানসভায় সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে চাইলেও সরকারের এসবে কান দিতে রাজি হয় না। তাই এবার তারা “হাতে হাত জোড়ো যাত্রা”র মাধ্যমে জনগণের দরবারে তুলে ধরবেন বিভিন্ন সমস্যার কথা। প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মেঘালয়ে কয়লা খনন রুখতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও অসমে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। অসমের জিওলজি এন্ড মাইনিং ডিপার্টমেন্টের এ নিয়ে যেন কোনোও নড়াচড়াই নেই । এবার অসাম সরকার এক্ষেত্রে উদ্যোগী না হলে কংগ্রেস আদালতের দ্বারস্থ হবে ।
দলের বিধান পরিষদীয় দলের নেতা দেবব্রত শইকিয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি করেন অসম অর্থনীতি, পরিকাঠামোগত সুবিধা, কৃষি, আইন-শৃঙ্খলা সহ অন্যান্য বহু ক্ষেত্রেই দেশের মধ্যে রয়েছে একেবারে পিছনের সারিতে। কিন্তু নানাভাবে ভুল তথ্য তুলে ধরে দাবি করা হয়ে থাকে রাজ্য সরকার খুবই সফল। এর সূত্র ধরে তিনি আরও বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা বিধানসভায় ও নানা ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন, যা এক অমার্জনীয় অপরাধ। শইকিয়া ডি-লিমিটেশন প্রক্রিয়া নিয়ে, ২০২৬-এ গোটা দেশে হবে এই প্রক্রিয়া। এর আগে এই মুহূর্তে অসমে ডি-লিমিটেশন করা হলে পরবর্তীতে হয়তো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
দলের অন্য কর্মকর্তা রকিবুল হোসেন বলেন, সরকার যখন ডি লিমিটেশন নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে তখন কংগ্রেস এতে অবশ্যই সহায়তা করবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের উচিত এ নিয়ে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা। তিনি বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ডিলিমিটেশন নিয়ে সবাইকে ব্যস্ত রেখে সরকার এই কাজ করে নিয়েছে। যাতে করে বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধি নিয়ে সরব হবার অবকাশ কেউ না পান। তাঁর কথায়, আসলে বিজেপি সরকারের “পলিসিই” এমন। হঠাৎ করে কোনো সামনে এনে সবাইকে সেদিকে ব্যস্ত রেখে যেন তার মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গার মতো কোনোও কাজ করে নেওয়া।
প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বোধহয় বরাকবাসীকে মূর্খ ভেবে থাকেন। বরাকের যুবাদের চাকরি ক্ষেত্রে বঞ্চনা করে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরে এই প্রসঙ্গ চাপা দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু কি তাই, কাছাড়ের সরকারি স্কুল মিজোরাম দখল করে নিলেও মুখ্যমন্ত্রী বলছেন হয়নি কিছুই।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মকর্তা অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য, দুই বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর ও খলিল উদ্দিন মজুমদার, প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিংহ, প্রদেশ কংগ্রেসের উপ-সভাপতি শরিফুজ্জামান লস্কর, শিলচর জেলা কংগ্রেস সভাপতি তমালকান্তি বনিক প্রমুখ।