অনলাইন ডেস্ক : পুলিশি হেফাজতে বন্দির মৃত্যুর মামলায় যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনালো হলো কালাইন পুলিশ পেট্রোল পোষ্টের (বর্তমানে থানা) প্রাক্তন ইনচার্জ অবসরপ্রাপ্ত এসআই নারায়ন তামুলিকে । সোমবার কাছাড়ের অ্যাডিশনাল সেশন জাজ (ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) এন উপাধ্যায়ের আদালত মতাহির আলী তাপাদার নামে ওই বন্দীর মৃত্যুর মামলায় নারায়ন তামুলিকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শুনিয়ে সঙ্গে জরিমানা করেছে ১০ হাজার টাকা। জরিমানা অনাদায় তাকে ভোগ করতে হবে আরও ৩ মাসের কারাদণ্ড।
মতাহির আলী ছিলেন কালাইন ভাটগ্রামের বাসিন্দা। প্রতিবেশী সাহাবউদ্দিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মারপিটের ঘটনায় ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পুলিশ মতাহির আলীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু ঘটে। মতাহির আলীর মৃত্যু নিয়ে তার পত্নী আলিমুননেছা দায়ের করেন এজাহার। এতে তিনি অভিযোগ করেন নারায়ণ তামুলি সহ কালাইন পুলিশ পেট্রোল পোষ্টের অন্য কয়েকজন পুলিশ কর্মী মিলে অত্যাচার চালিয়ে মেরে ফেলেছেন মতাহির আলীকে।এই মামলায় গত ২৭ আগস্ট আদালত নারায়ণ তামুলিকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপর সোমবার ঘোষণা করা হয় সাজা।
এদিন সাজা ঘোষণার সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন মতাহির আলীর পত্নী আলিমুন নেছা ও বড় ছেলে সলমান আহমদ তাপাদার। যাবজ্জীবন সাজার কথা শুনে সলমান আদালতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন,এই রায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়ে তুলবে। কথা বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠে সলমান বলেন, যখন বাবার মৃত্যু ঘটে তখন তার বয়স সাত। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। ঘটনার সময় তার সবচেয়ে ছোট ভাইয়ের জন্মই হয়নি। সে ছিল মায়ের গর্ভে। তার শৈশবকালে পুলিশ এভাবে বাবাকে মেরে ফেলায় তাদের জীবন যেন অথৈ জলে পড়ে যায়। মা অনেক কষ্টে তাদের বড় করে তুলেছেন। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার বাবা ছিলেন নিতান্তই নিরীহ প্রকৃতির লোক। সামান্য মারপিটের ঘটনায় পুলিশ যখন বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন মায়ের সঙ্গে মিলে তিনিও অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের কোনও কথাই শুনেনি। গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর অত্যাচার চালিয়ে মেরে ফেলা হয় তার বাবাকে।
তবে এবার ঘাতকের সাজা হয়েছে, এটাই তার প্রাপ্তি। এই মামলায় আইনজীবী ইমাদ উদ্দিন বুলবুল শুরু থেকেই তাদের অনেক সাহায্য করেছেন বলে জানিয়ে সলমান তাকেও ধন্যবাদ জানান। এছাড়া কালাইন ধূমকর এলাকার ফারুক উদ্দিন সহ অন্যান্যরা এতদিন ধরে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ধন্যবাদ জানান তাদেরও ।
আদালত সাজা ঘোষণার পর সন্তোষ ব্যক্ত করেন আইনজীবী ইমাম উদ্দিন বুলবুলও। তিনি জানান এই মামলায় এজাহার লিখা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। সরকারি আইনজীবীর পাশাপাশি মতাহির আলীর পরিবারের হয়ে সওয়াল করেছেন তিনিও।
ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান মামুলি মারপিটের ঘটনায় মতাহির আলীকে গ্রেফতারের পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তৎকালীন কালাইন পেট্রোল পোস্টের ইনচার্জ নারায়ন তামুলি ১০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। মতাহির আলীর পত্নী টাকা দিতে পারেন নি। তাই অত্যাচার চালিয়ে মতাহির আলীকে মেরে ফেলা হয়। আদালত এবার নারায়ন তামুলিকে কারাদণ্ড দেওয়ায় পুলিশের এধরনের অত্যাচার কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।