অনলাইন ডেস্ক : হাইলাকান্দিতে মুখ্যমন্ত্রীর হাতধরে উন্মোচিত হলো প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রতিমূর্তি। বৃহস্পতিবার হাইলাকান্দিতে বাজপেয়ীর পূর্ণ দৈর্ঘের প্রতিমূর্তি উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথমবারের মতো হাইলাকান্দিতে এসে এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। হাইলাকান্দি শহরের পানীয়জল সরবরাহের জন্য বরাদ্ধ ৬০ কোটি টাকা। নতুন আবর্ত ভবন ও রণটিলায় স্মারক নির্মাণ করার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো হাইলাকান্দি আসেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। হাইলাকান্দিতে এসে পুরসভার উদ্যোগে কলেজ রোডে নির্মিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রতিমূর্তি উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। পাশাপাশি এই রোডকে অটল স্মৃতি স্মরণী নামে নামাঙ্কীত করেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এরপর স্থানীয় পুরাতন হাস্পাতাল রোডে হাইলাকান্দি ধোয়ারবন্দ সড়কের শিলান্যাস করেন তিনি। শেষে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। জনসভায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্য শুরু করেন হাইলাকান্দির এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে৷ তিনি বলেন ১৯৮৯ সালের ১ অক্টোবরের হাইলাকান্দি জেলা হিসেবে ঘোষণা হয়। এখানে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন জাতি উপজাতির মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করছে। তিনি বলেন ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সঙ্গেও এই জেলার সম্পর্ক রয়েছে। বরাকের সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম সংঘর্ষের সাক্ষী এখানকার রণটিলা। তিনি বলেন এখানের অনেক যুবক বৃটিশের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। মহাত্মাগান্ধীর অহিংস আন্দোলনেও এই জেলার সক্রীয় ভূমিকা ছিল। তিনি বলেন আজ দেশের আরও এক সৈনিক প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রাতিমূর্তি হাইলাকান্দিতে উন্মোচন করা হয়েছে। হাইলাকান্দি পুরসভার উদ্দ্যোগে এই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়াত অটল বিহারি বাজপেয়ীর হাত ধরেই নতুন ভারতের নির্মান কাজ আরম্ভ হয়েছিল । তার উদ্দ্যোগেই ডোনার মন্ত্রক স্থাপন হয়েছিল। শিলচর থেকে সৌরাষ্ট্র অবধি ইষ্ট ওয়েষ্ট করিডোর নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়েছিল। এছাড়াও সর্ব শিক্ষা অভিযান, আরটিআই, এমনকি বর্তমানে চলা জল জীবন মিশনের সূচনা বাজপেয়ী সরকারের আমলে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অটল বিহারি বাজপেয়ী পোখরানে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করে ভারতবর্ষকে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন ও কাউকে ভয় না করা দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি উত্তর পূর্বের উন্নয়নের জন্য দেশের বাজেটের ১০% উত্তর পূর্বের খাতে বরাদ্ধ করে বিকাশের পথ খুলে দিয়েছিলেন বলেও এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এদিন হাইলাকান্দি জেলার উন্নয়ন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় হাইলাকান্দিতে আসরে পারেননি৷ কিন্তু এখানে না এলেও এই জেলার বিকাশের যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, আজ অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রতিমূর্তি স্থাপনের পাশাপাশি শেষাবাড়ী – হাইলাকান্দি ধোয়ারবন্দ সড়কের কাজের শিলান্যাস করেছেন। ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই পথ নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে কাটাখাল নদীর উপর আরও একটি সেতু নির্মাণ হবে৷ আর আগামী ২ বছরের ভেতরে কাজ সম্পূর্ণ হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে রাজ্যে ডিলিমিটেশন হয়েছে। আর এই ডিলিমিটেশনের ফলে হাইলাকান্দির দুটি আসনেই বিজেপি প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন। তিনি বলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই রাজ্যেও আগামী ৩০ বছর পর্যন্ত বিজেপি সরকার থাকাটা প্রায় নিশ্চিত। কাজেই হাইলাকান্দির বিকাশের জন্য প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপি পক্ষে ভোটদেওয়ার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি গত বারের মতো এবারো করিমগঞ্জ লোকসভা থেকে বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় বিজেপি নেতারা হাইলাকান্দি শহরের পানীয়জল ও নিকাশি ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন হাইলাকান্দি শহরের পানীয়জল প্রকল্পের জন্য ৬০ কোটি টাকার অনুদান ঘোষণা করেন। লালা শহরেও এধরণের একটি পানীয়জল প্রকল্প চালু করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, হাইলাকান্দির উন্নয়নের জন্য অনেক টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা জেলার উন্নয়নে না গিয়ে বিধায়কদের পেটে চলে গেছে৷ তাই তিনি সরাসরি হাইলাকান্দির রাস্তা নির্মাণের জন্য ২০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এছাড়াও হাইলাকান্দির জেলা গ্রন্থাগারের অডিটোরিয়ামের জন্য ১০ কোটি ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ষ্টেডিয়ামের জন্য ১০ কোটি টাকা ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি রণটিলায় একটি স্মারক নির্মাণ ও নতুন আবর্ত ভবন নির্মাণের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এছাড়াও আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজ্য পুলিশে ৫০০০ নিয়োগ ও অন্যান্য পদে আরও ২২ হাজার নতুন চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন নিজের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী আগামী দুর্গাপূজার সময় হাইলাকান্দিতে আসার প্রতিশ্রুতিও দেন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।