অনলাইন ডেস্ক : শিলচর পুর নিগমে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার সূত্রে জারি করা স্থগিতাদেশ বাতিল করে দিলো গৌহাটি হাইকোর্ট। এতে পুরনিগমের নির্বাচনের পথে দূর হলো এক বড় বাধা।
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশীষ বরুয়া এই মামলার শুনানি গ্রহণ করে আগে জারি করা স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেন। শিলচর পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ১ এপ্রিল। এর পরবর্তীতে পুরসভাকে পুরনিগমে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর পুরনিগমে উন্নীত করার জন্য আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। পুরনিগমের এলাকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় শহর সংলগ্ন বেশ কিছু জিপিকে। যদিও তোপখানা, দুধ পাতিল, মাছুঘাট, কনকপুর ও উত্তর কৃষ্ণপুর ইত্যাদি জিপি এলাকা থেকে এ নিয়ে আপত্তি উঠে। প্রশাসনিক স্তরে শুনানিতে আপত্তি জানিয়েও যখন আপত্তি গ্রাহ্য হয়নি তখন হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়। এই মামলার ভিত্তিতে ২০২২ সালের ১৯ জুন হাইকোর্ট এসব এলাকাকে পুরনিগমে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করে। এরপর সবকিছু বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখার পর মঙ্গলবার ফের শুনানির দিনে পূর্বে জারি করা স্থগিতাদেশ নাকচ করে দেওয়া হয়।
আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন সব মিলিয়ে আবেদন জমা পড়েছিল পাঁচটি। এর ভিত্তিতে মামলা নথিভুক্ত করে শুনানি গ্রহণ করা হয়। চৌধুরী জানান, এদিন আদালত স্থগিতাদেশ নাকচ করে দেওয়ায় এসব এলাকাকে নিয়ে পুরনিগমের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আর কোনও আইনি বাধা রইলো না।
জানা গেছে পাঁচটি আবেদন যারা করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন তোপখানা জিপির প্রাক্তন সভাপতি মিয়া খান এবং উত্তর কৃষ্ণপুর জিপির মুসাব্বির আলী লস্কর এবং অন্যান্য জিপি এলাকার আব্দুল হান্নান লস্কর, মোস্তফা আহমদ চৌধুরী ও হিরন্ময় দাস সহ তাদের সঙ্গীরা।
মুসাব্বির আলী লস্কররা উত্তর কৃষ্ণপুর জিপির ১,২,৩ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডকে পুরনিগমে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মিয়া খান জানিয়েছেন, মাসিমপুরে সেনা ছাউনি থাকার দরুন তোপখানা জিপিতে নিরাপত্তার কথা বলে উঁচু ভবন তৈরির অনুমতি দেওয়া হয় না। এই পরিস্থিতিতে এলাকা নিগমের অন্তর্ভুক্ত হলে বর্তমান পরিকাঠামো নিয়ে অনেকেই বর্ধিত কর মেটাতে পারবেন না। তাই তিনি নিগমের অন্তর্ভুক্তির আগে তোপখানা জিপিতে উঁচু ভবন তৈরীর ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা না মেলায় নিগমে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলে দারস্থ হন আদালতের।
আইনজীবী চৌধুরী জানান, পাঁচটি জিপিরই কিছু কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। উপযুক্ত পরিকাঠামো ও সুবিধা প্রদানের আগে নিগমে অন্তর্ভুক্ত হলে বর্ধিত করের যাতাকলে
পিষ্ট হবেন এলাকার বাসিন্দারা। মূলত এটাই ছিল আবেদনকারীদের অভিযোগ। তবে সবকিছু বিচার বিবেচনা করে আদালতের কাছে এসব অভিযোগ গ্রহণযোগ্য মনে না হওয়ায় বাতিল করে দেওয়া হয়েছে আগে জারি করা স্থগিতাদেশ।
এদিন আদালত স্থগিতাদেশ বাতিল করে দেওয়ায় সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী। দীপায়ন জানান, এদিন বিকেলে তাকে প্রথম খবরটা দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এই মামলার ক্ষেত্রে সরকার নথিপত্র পেশ করে আদালতের সামনে বাস্তব চিত্র তুলে ধরায় স্থগিতাদেশ বাতিল হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি এর জন্য ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। দীপায়নও বলেন, এবার আর নিগমের নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা রইল না। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, আইনি বাধা দূর হওয়ার পর আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই হতে পারে নির্বাচন।