অনলাইন ডেস্ক : মর্তের আরশি নগরে এখন শিউলির সুবাস। পাহাড়ের বুকে সারি সারি কাঁশবন ছড়াচ্ছে স্নিগ্ধতা। তাই তো মা আসছেন বলে সাজো সাজো একটা ভাব ভুবনজুড়ে। যে যার মত করে তৈরি মায়ের আবাহনের আগমনী গান গুনগুন করবে। গৌরবের ১০৪ তম বছরে প্রতিষ্ঠা, ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানাকে পুঁজি করে এবারও শারদীয়ার ঝর্নাস্রোতে গা ভেজাতে এক পায়ে খাড়া অম্বিকাপুর পূর্বপাড়া ও হাসপাতাল রোড দুর্গাপূজা কমিটি।
শিলচর শহরের বারোয়ারি পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম প্রাচীন এই অম্বিকাপুর পূর্বপাড়া ও হাসপাতাল রোডের পুজোটি। এক দুই দশক নয়। হাসপাতাল রোড ত্রিমুখীর পুজোর অভিষেকের পর আস্ত একটা শতক পেরিয়ে গেছে। এবার তাদের পুজোর ১০৪ বছর হবে। সংকুচিত জায়গার জন্য মণ্ডপ এবং অলোকসজ্জায় তেমন একটা জোর দিতে পারছে না এই কমিটি। ফলে সাত্বিকতা এবং সাবেকিয়ানাকে মূলধন করেছে এই পুজো কমিটি। তবে ভিন্নতা রয়েছে প্রতিমায়। সোনার পাতায় মোড়া প্রতিমা দিয়ে আকর্ষণের সেতু তৈরী করছে এই ঐতিহ্যবাহী কমিটি। অসুর এবং ঠাকুরের বাহনদের ছাড়া মূর্তিগুলি থাকবে সোনার পাতায় মোড়া। হয়ত ভাবছেন নকল সোনার পাতা দিয়ে মূর্তি রেপারিং করা হবে?? একদমই না। ২৪ ক্যারাটের সোনা দিয়ে মোড়া হচ্ছে প্রতিমা। আয়োজক কমিটির সদস্যরা আসল সোনার সার্টিফিকেটও দেখান। প্রতিমা তৈরি করছেন পয়লাপুলের ড. নবেন্দু চক্রবর্তী এবং পূর্ণাঙ্গ রূপটা দেবেন কলকাতার সুকুমার মন্ডল। আর প্রতিমায় সোনায় মোড়ার কাজটা করছেন সুদূর রাজস্থানের এক মুসলিম যুবক। ‘ ধর্ম যার যার, উৎসব সবার ‘ এই মতবাদে বিশ্বাসী পূর্বপাড়া পুজো কমিটিতে ৪০ গ্রাম ওজনের প্রায় ১২০০ সোনার পাতা দিয়ে প্রতিমা মোড়ার কাজটা করছেন রাজস্থানের শিল্পী মোহাম্মদ সৈদ খান।
এখানেই শেষ নয়। এন্টারটেইনমেন্টের কম্বো নিয়ে আসছে শান্তিনিকেতনের ঢাকীর দল। মায়ের পুজো অর্চনায় শুধুমাত্র ঢাক বাজিয়েই ক্ষান্ত থাকবে ওঁরা। বিভিন্ন দেবদেবীর পোশাক পড়ে ঢাকের তালে তালে নৃত্য করবে। আবার দিনের আলো নামতেই এই ঢাকীর দলই দেখাবে ভুতের নাচ। শিশুদের মনোরঞ্জনে পরিবেশিত হবে ম্যাজিক শো। শেষমুহূর্তে কোনও হেরফের না ঘটলে পঞ্চমীর দিন প্রখ্যাত কমেডিয়ান আসরানী মণ্ডপের উদ্যোধন করবেন। তাছাড়া ইন্ডিয়ান আইডলের গায়ক গায়িকাদের দিয়ে অনুষ্ঠান করানোর ইচ্ছে রয়েছে আয়োজকদের। এর পাশাপাশি মহালয়ার দিন সকালে দলছুট ছাড়াও স্থানীয় শিল্পীরা অনুষ্ঠান করবেন বলে জানান কমিটির সাংস্কৃতিক শাখার আহ্বায়ক শম্পা বণিক।
মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে সাত্বিকতার উপরও নজর রয়েছে তাদের। আগের প্রথা মেনেই নবমীর দিন পালকিতে করে এনে কুমারী পূজা করা হবে। এছাড়াও পুজোর তিনদিন দুপুর এবং রাতে প্রসাদ বিতরণের পাশাপাশি দশমীর দিন শোভাযাত্রায় রাস্তায় থাকা দর্শনাত্রীদের মিষ্টিমুখ করানো হবে বলে জানান পুজো কমিটির সম্পাদক শেখর পাল। পুজোর মোট বাজেট ১১ লক্ষ। রাস্তার উপরে পুজো হচ্ছে, তাই ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা রাতদিন থাকবেন বলে জানান অন্যতম সদস্য রাজা পালচৌধুরী। কমিটির সভাপতি এবং চেয়ারম্যান হলেন যথাক্রমে তমাল বণিক এবং ড. অনিরুদ্ধ বিশ্বাস। অন্যান্যদের পাশাপাশি সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কার্যকরী সভাপতি শান্তুনু স্বরূপ রায়, অনিমেষ ভট্টাচাৰ্য, সন্দীপ চন্দ, কোষাধক্ষ সুনির্মল পাল বেদব্রত ব্যানার্জী প্রমুখ।