অনলাইন ডেস্ক : অতিবৃষ্টির জেরে শিলচর-শিলং রোডের বিভিন্ন জায়গায় ধস পড়ে বন্ধ হয়ে আছে যান চলাচল। রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন তুমুল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি আঁচ করে শিলচর-লামডিঙ রুটে একমাত্র দূরপাল্লার ট্রেন বাদে অন্য সব ধরনের রেল চলাচল স্থগিত রেখেছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল। এদিকে, উপত্যকার প্রতিটি নদীতে তরতরিয়ে বাড়ছে জল। সব মিলিয়ে কার্যত এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে বরাক। এমন পরিস্থিতিতে শিলচর-সহ উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় আনাজের বাজারে দেখা দিয়েছে হাহাকার। রেল ও সড়কপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিলচরে আনাজপাতি আসছে না। বাসি পুরনো সব্জি বিকোচ্ছে অগ্নিমূল্যে। সুযোগ বুঝে ইচ্ছে মতো দর হাঁকছেন বিক্রেতারা। বাজার দর নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নজরে পড়ছে না। বাজার ঘুরে জানা গিয়েছে, গত তিন-চার দিন ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাজারে। এরমধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে মঙ্গলবার। এদিন বাজার ফাটক বাজারের মতো শিলচরের সবচাইতে বড় বাজারেও সব্জির যোগান ছিল না বললেই চলে। এছাড়াও ন্যাশনাল হাইওয়ে পয়েন্ট বাজার, কলেজ রোড মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, সঞ্জয় মার্কেট, তারাপুর, ইটখলা বাজার সহ শহর এবং শহরতলীর প্রায় সব-কটি বাজারে দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য। দু-একজন বিক্রেতা বাসি পুরনো সব্জি নিয়ে বসলেও সেটা কিনতে গিয়ে হাত পুড়েছে ক্রেতার। জনৈক সব্জি বিক্রেতা জানিয়েছেন, এরকম চললে আগামীকাল বুধবার থেকে আরও অবনতি ঘটবে।পরিস্থিতির।
অবশ্য শিলচরে এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। ফি বছর বর্ষা মরসুমে বাজারে আনাজপাতির দাম বাড়ে। পকেট কাটা যায় উৎসবের মরসুমেও। এবারও যেন পুনরাবৃত্তি তারই। বর্ষায় আগুন ঝরাচ্ছে আনাজ। খুচরো বাজারে কাঁচা লঙ্কা বিকোচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে ! ১ কেজি আদার দামও ৩০০টাকা ! শুনে ক্রেতার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। ইতিমধ্যে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে ঝিঙে, পটল, বেগুন কাঁকরোল। একই পথে হাঁটছে শশা ও টমেটো। কুমড়োর দর কেজিপ্রতি ৮০টাকা ! সঞ্জয় মার্কেট সহ শিলচরের বেশ কয়েকটি বাজারে টমেটো বিকোচ্ছে ১০০ টাকা দরে।
লাউ, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়স, ডাঁটা, পুই সহ অন্যান্য শাকসবজিও মহার্ঘ। সবমিলিয়ে যেন চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন মধ্যবিত্তরা।
আনাজের বাজারে লাগাম টানতে পশ্চিমবঙ্গে প্রায়শই টাস্ক ফোর্স গঠন করে সে রাজ্যের সরকার। কিন্তু বরাক উপত্যকায় এখন পর্যন্ত এমন কোনও পদক্ষেপ নজরে পড়ছে না। এ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিভিন্ন ক্রেতা। তাঁদের অভিযোগ, আনাজ ব্যবসায়ীদের উপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে লাগামহীন হয়ে পড়ে দ্রব্যমূল্য। এবারও সর্বত্র নিত্যপণ্য সহ আনাজপাতির দাম আকাশছোঁয়া। নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন যেন কুম্ভনিদ্রায়। গ্রাহকেরা বলছেন, শিলচরের ফাটক বাজার নিউ মার্কেট-ই হোক কিংবা রাঙ্গিরখাড়ি সঞ্জয় মার্কেট বা অন্যকোনও বাজার— সবখানেই সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। অনেকের অভিযোগ পাইকারি মূল্যের দ্বিগুণ দামে আনাজপাতি বিকোচ্ছে খুচরো বাজারে। তাঁদের প্রশ্ন, বাজারের উপরের সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই কেন? প্রশাসনও কী চোখ বন্ধ করে আছে ? তথ্য বলছে, গণ-বণ্টণ বিভাগের অধীনে নেই সবজি বাজার। কৃষি বিভাগেরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে পোয়াবারো হয়েছে সিন্ডিকেটের। ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, টমেটো, কাকরুল, মিষ্টি কুমড়ো ইত্যাদি সবজির বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। বাজারে খারুপেটিয়া, শিলং ও ত্রিপুরা থেকে সবজি আসে। স্থানীয় স্তরে পরিকল্পনা মাফিক সেই সবজির মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন ভুক্তভোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে সরকার প্রদত্ত পাইকারি ও খুচরা মূল্যের তালিকা জনসমক্ষে আসা উচিত বলে মনে করছেন জনগন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন সবাই।