অনলাইন ডেস্ক : একদিকে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে চলছে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। আর সেই সময়েই কিনা বিনা মেঘে বজ্রপাত ! যাত্রা শুরুর পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এবার প্রশাসনের বুলডোজারের মুখে শিলচরের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংস্থা গণসুর-ও ! শুধু এ-ই নয়, উচ্ছেদ হলে মাথার ওপর থেকে ছাদ সরে যাবে ক্লাব ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা গণসুর সাংস্কৃতিক সংস্থার ভ্রাতৃপ্রতিম সংস্থা, ক্রীড়া সংগঠন ক্লাব ওয়েসিস-এরও। সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনও আগাম নোটিশ না দিয়েই উচ্ছেদের ফরমান জারি করেছে প্রশাসন। এই ঘটনায় শিলচরের সাংস্কৃতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভের।
মঙ্গলবার ক্লাব ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে গণসুর-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্লাব ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে তাঁরা শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় সহ কথা বলেছেন বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর সঙ্গে। ই-মেইল যোগে স্মারকপত্র পাঠিয়েছেন জেলাশাসককে-ও। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। ফলে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন গণসুর সাংস্কৃতিক সংস্থা ও ক্লাব ওয়েসিস-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সবাই।
এদিন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ক্লাব সভাপতি বিজয় খান সহ অন্যান্য পদাধিকারীরা এটা স্পষ্ট করে দেন যে, কোনও ভাবেই শিলচরের উন্নয়নের বিরোধী নন তাঁরা। প্রয়োজনে ক্লাব ভবনটি নিজেরাই গুঁড়িয়ে দিতে প্রস্তুত। তবে উচ্ছেদ যদি করতেই হয়, সেটা হতে হবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যে। যা এই ক্ষেত্রে হচ্ছে না। ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, রাঙ্গিরখাড়ি লক্ষ্মীনারায়ণ বিবাহ ভবন ও পাব্লিক স্কুল রোডের সংযোগ স্থল থেকে সঞ্জয় মার্কেট সংলগ্ন তারকনাথ মন্দির পর্যন্ত নিকাশি নালা নির্মাণ করে তা রাঙ্গিরখালের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে পুরনো পরিকল্পনায় আনা হয়েছে পরিবর্তন। এতে হাসপাতাল রোড থেকে সোজা এসে হঠাৎ করে পাবলিক স্কুল রোড থেকে সঞ্জয় মার্কেট সংলগ্ন তারকনাথ মন্দির পর্যন্ত নালার গতিপথ ইংরেজি ‘ডি’ অক্ষরের মতো বাঁক নেবে। এই বাঁকের কারণে-ই ভাঙ্গা পড়বে ঐতিহ্যবাহী গণসুর এবং ক্লাব ওয়েসিসের বহু পুরনো ভবনটি। সম্প্রতি প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল এসে ঘোষণা করে গিয়েছেন সেই কথাই।
এ প্রসঙ্গে ক্লাবের কর্মকর্তা আশিষ ভৌমিক, জয়ন্তকিশোর দাস, রথীন্দ্র নারায়ণ বিশ্বাস, গোরাচাঁদ রায়,অঞ্জন স্বামী, বিভাস রায় সহ অন্যান্য সদস্য সদস্যদের পাশে বসিয়ে সভাপতি বিজয় খান আরও বলেন, উচ্ছেদ নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি প্রশাসন। জানা যায়নি, কেন পুরনো পরিকল্পনা পাল্টে দেওয়া হল, নতুন পরিকল্পনাই বা কতটা যুক্তিযুক্ত কিংবা শুধুমাত্র এই এলাকায় কেন নালার গতিপথ পাল্টে দেওয়া হল ! নাট্যকর্মী সুব্রত রায় (শম্ভু) বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণসুর। ক্লাব ওয়েসিস-এর জন্ম ১৯৭৮ সালে। জন্মলগ্ন থেকেই বরাক উপত্যকার ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অবদান রেখে আসছে ক্লাব দু’টি। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দশকের পর দশক ধরে যুবসমাজকে গঠনমূলক কাজে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে। অথচ সেই ক্লাবকেই কি-না ভাঙার পরিকল্পনা করা হচ্ছে !
ক্লাবের সদস্যরা জানান, এলাকায় নালার কাজ বহুদিন ধরেই হচ্ছে, একদিকে পাবলিক স্কুল রোডের সামনে একটা জায়গায় শেষ হয়েছে। অন্যদিকে তারকনাথ মন্দিরের সামনে এ পর্যন্ত একটা কাজ করে বাকিটা অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। যদি ওই দুই পয়েন্টকে সরাসরি জুড়ে দেওয়া হয় তাহলে ক্লাব ভবনটি ভাঙ্গা পড়বে না। তবে হঠাৎ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবার আরেকটি নালা বানানো হবে এবং সেটা একটু বাঁকা হয়ে যাবে। তবে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে শুধু একটা জায়গায় বাঁকা হবে যার ফলে কয়েকটি দোকান আর আমাদের ক্লাব ভাঙ্গা পড়বে। আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই হঠাৎ করে কেন এই পরিবর্তন করা হলো, কেনই বা শুধুমাত্র আমাদের এলাকার নালার ম্যাপ পরিবর্তন হয়েছে, তারা কেন আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না?
ক্লাবের সদস্যরা এ-ও আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন যে, এসবের পেছনে রয়েছে কোনও প্রভাবশালী মহলের ষড়যন্ত্র। তারা বলেছেন, ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি রয়েছেন। তাইবলে ক্লাব ঘরে রাজনীতির চর্চা হয় না। সবাই মিলে সংস্কৃতি চর্চা করেন। এ প্রসঙ্গে পাবলিক স্কুল রোডের প্রাক্তন পুর কমিশনার গৌরা রায়, ক্লাবের কর্মকর্তা বিধান রায়-রা জানান, আগেও এধরনের চেষ্টা হয়েছে। তখন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু এবার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে ক্লাবের বিরুদ্ধে। এদিন ক্লাবের কর্মকর্তারা এ-ও জানিয়ে দেন, বুলডোজারের সামনে আন্দোলন হয় না। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সংস্থার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলবে। এটাই হবে তাঁদের প্রতিবাদ।