অনলাইন ডেস্ক : ১৯৫১ নয়, অসমে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ বহু প্রতীক্ষিত রায়ে ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকেই বহাল রেখেছে। পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের শুধু একজন বিচারপতি জে বি পাদ্রিওয়ালা ৬(এ)-কে অসাংবিধানিক বলেছেন। বাকি চার সদস্য প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সূর্যকান্ত, বিচারপতি এম এম সুন্দরেশ এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র এক সুরেই ১৯৭১-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
১৯৫১ না ১৯৭১ কোনটা হবে এই রাজ্যে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ, তা নিয়ে রাজনৈতিক আঙিনায় বিবাদের সুর বহুদিন ধরেই চড়া। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিভিন্ন সময়ে ১৯৫১-র পক্ষে সওয়াল করেছেন। ১৯৫১-র পক্ষ নেওয়া মহলের বক্তব্য, ১৯৭১-কে ভিত্তিবর্ষ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের কৃষ্টি-ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আঘাত নেমে এসেছে। ১৯৫১ থেকে ১৯৭১, এই কুড়ি বছরের অভিবাসীদের চাপে বিপন্ন হয়েছেন অসমিয়ারা। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, স্রেফ একটা ভিন্ন জনগোষ্ঠীর উপস্থিতির জেরে ভাষিক ও সাংস্কৃতিক সুরক্ষার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় না। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৫১-র পক্ষের আবেদনকারীরা এটা প্রমাণ করুন যে, একটি জনগোষ্ঠী অন্য একটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে পারছে না। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসী সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান ছিল অসম চুক্তি। কিন্তু ৬(এ) ছিল এর আইনি সমাধান। পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠের অভিমত, ওই বিধান রচনার ক্ষেত্রে আইনগত যোগ্যতা আছে সংসদের। এও মনে করছেন তাঁরা, মানবিক উদ্বেগের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রাখার জন্যই ৬(এ) -তে আইনি সিলমোহর বসানো হয়েছিল। পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত আছে অসমের।তাই অন্যান্য সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যের তুলনায় অসমে স্থানীয় মানুষের মধ্যে অভিবাসীদের শতাংশ অনেক বেশি। অসমে ৪০ লক্ষ অভিবাসীর প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ৫৭ লক্ষ অভিবাসীর থেকে বেশি। তার কারণ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অসমের ভূমির এলাকা অনেকটাই কম। এ কথা বলে প্রধান বিচারপতি কার্যত অসম আন্দোলনকে বৈধতা দিয়েছেন বলে মনে করে ছাত্র সংগঠন আসু। সব মিলিয়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে প্রধান বিচারপতি সহ চার সদস্য সাফ বলেছেন, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের ভিত্তিবর্ষ যুক্তিসংগত। ওই তারিখেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল।
৬(এ) ধারা সংবিধানকে লঙ্ঘন করছে, আবেদনকারীদের এই যুক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত। তিনি পরিষ্কার জানান, অভিবাসীদের জন্য অসমিয়া সংস্কৃতি ও ভাষার ওপর প্রভাব পড়েছে এমন কোনও দৃষ্টান্ত দেখতে পারেননি আবেদনকারীরা। বরং ৬(এ) বলেছে, ১৯৭১-এর পরে অসমে প্রবেশ করা অভিবাসীদের আটক করে বিতাড়ন মরতে হবে।
৬(এ) নিয়ে উপসংহার টেনে বিচারপতি সূর্য কান্ত জানান—–১) ১৯৬৬-র ১ জানুয়ারির আগে অসমে আসা অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ধরা হবে।২) ১৯৬৬-এর ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের মধ্যে অসমে প্রবেশ করা অভিবাসীরা যোগ্যতার শর্ত পূরণ করলে ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবি করতে পারবেন। ৩) ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর অসমে যাঁরা প্রবেশ করেছেন তাঁদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে ঘোষণা করে বিতাড়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেছেন, সর্বানন্দ সোনোয়ালের মামলার রায়ে অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিতকরণ ও বিতাড়ন নিয়ে যে রায় দেওয়া হয়েছিল তা রূপায়ণ করতে হবে।