অনলাইন ডেস্ক : অসম সরকার কর্তৃক সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলা সহ রাজ্যের ১৪টি জেলার সীমা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও কাছাড় জেলা প্রশাসন কর্তৃক জমি কেনার ক্ষেত্রে ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে বুধবার শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় কমিটি, আসাম এর পক্ষ থেকে গণ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভে সিআরপিসিসি-র আহ্বানে কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস, এসইউসিআই (কমিউনিস্ট), আম আদমি পাৰ্টি, বিডিএফ প্রভৃতি রাজনৈতিক দল সহ ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি, নারী মুক্তি সংস্থা, বরাক হিউম্যান রাইটস প্রটেকশন কমিটি, সুরমা ভ্যালি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, কাটিগড়া নাগরিক মঞ্চ, যুবশক্তি ক্লাব, কাটিগড়া, জনতা ইউথ ক্লাব, এআইডিএসও ইত্যাদি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিরা সামিল হন।
বিক্ষোভস্থলে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কার্যকরী কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অরুণাংশু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, অসম সরকার গত ৩১ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কেবিনেট বৈঠকে রাজ্যের চারটি জেলা যথাক্ৰমে বিশ্বনাথ, হোজাই, বজালি ও তামুলপুরকে বিলুপ্ত করার পাশাপাশি রাজ্যের ১৪টি জেলার ভৌগোলিক সীমা জনমতকে গুরুত্ব না দিয়ে পরিবৰ্তন ঘটিয়েছে। ভারতের নির্বাচন আয়োগ কর্তৃক অসম বিধানসভার ১২৬টি ও রাজ্যের লোকসভার ১৪টি আসনের ‘ডিলিমিটেশন’ প্ৰক্ৰিয়া শুরুর ঠিক একদিন পূর্বে বিধানসভায় কোনও আলোচনার সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ কেবিনেট বৈঠক ডেকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্ৰিক ও সংকীৰ্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জেলাগুলোর ভৌগোলিক সীমা পরিবৰ্তন করে দেয়। বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ জেলা থেকে বদরপুরকে ও হাইলাকান্দি জেলার পাঁচগ্রামকে কেটে কাছাড় জেলার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া, কাছাড় জেলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কাটিগড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তৰ্ভুক্ত ১৭টি রাজস্ব গ্রামকে কেটে পূর্ব দিকের ৫টিকে হাইলাকান্দি জেলার সঙ্গে ও বাকী ১২টিকে করিমগঞ্জ জেলার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে দু’টো জেলার জনগণকে নিজ নিজ জেলা সদরে যেতে হ’লে বরাক নদী পার হতে হবে, অথচ বহু স্থানে নদী পারাপারের ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নেই। এভাবে জেলাগুলোর ভৌগোলিক সীমা পরিবর্তনের ফলে জেলা সদরের দূরত্ব বহু বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পূর্বের চেয়ে বহু বেশি টাকা খরচ করে সেখানে পৌঁছাতে হবে, যা সাধারণ জনসাধারণের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।তিনটি জেলার কিছু কিছু এলাকার জনসাধারণকে কাৰ্যত বিচ্ছিন্নভাবে জেলার বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করা হবে।
সংগঠনের সহ সভাপতি শিহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর কাছাড় জেলা প্রশাসন জমি কেনার ক্ষেত্রে সবাইকে ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকার প্রতিলিপি প্রদানের নির্দেশ জারি করেছে। অথচ ভারতের কোন আইন অনুসারে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার কোনও উল্লেখ নেই। এর থেকে স্পষ্ট যে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার চক্রান্ত স্বরূপ এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তিনি এই নির্দেশিকা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জোরালো দাবি উত্থাপন করেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিএম জেলা সম্পাদক দুলাল মিত্র, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি শান্তি কুমার সিংহ, এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক শ্যামদেও কুর্মী, শিলচর টাউন কংগ্রেসের সভাপতি অতনু ভট্টাচার্য, আম আদমি পাৰ্টির আহ্বায়ক আনর লস্কর, বিডিএফ-এর জয়দীপ ভট্টাচার্য, কাটিগড়া নাগরিক মঞ্চের শ্যামসুন্দর চৌধুরী, সুরমা ভ্যালি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি আমজাদ হোসেন বড়ভূইয়া, আশিক উদ্দিন চৌধুরী, বদরপুর নাগরিক মঞ্চের মইনুল হক, বিশিষ্ট লেখক আবিদ রাজা মজুমদার, ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি’র পক্ষে প্রদীপ নাথ, পাব্লিক ভিউ-এর কনক পাল প্রমুখ।
বিক্ষোভ শেষে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্হের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসক মারফত একটি স্মারকপত্র আসামের রাজ্যপালের কাছে প্রদান করেন। স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয় যে আসাম সরকারের চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে নেওয়া জেলার সীমা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও কাছাড় জেলা প্রশাসন কর্তৃক জমি কেনার ক্ষেত্রে জারি করা বেআইনি নির্দেশনা প্ৰত্যাহার করতে হবে। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে প্ৰতিটি রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সচেতন নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামীতে আসাম সরকারের চরম জনবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিবর্তনে বাধ্য করাতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। বিক্ষোভকালে উপস্থিত ছিলেন লুৎফর রহমান বড়ভূইয়া, নির্মলকুমার দাস, হিল্লোল ভট্টাচার্য, গৌরচন্দ্র দাস, অজয় রায়, ভবতোষ চক্রবর্তী, সুব্রতচন্দ্র নাথ, স্নিগ্ধা নাথ, সীমান্ত ভট্টাচার্য, হানিফ আহমেদ বড়ভূইয়া, কমল চক্রবর্তী, নেহারুল আহমেদ মজুমদার, ঋষিকেশ দে, ফারুক লস্কর প্রমুখ।