অনলাইন ডেস্ক : উধারবন্দের পাথর বাণিজ্যে এবার হাতে হাত মিলিয়েছে মহালদার ও বনবিভাগ! এর ফলে গড়ে উঠেছে নতুন এক ব্যবস্থা। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাথর উত্তোলন ও পাচারে এবার অতীতের সব অবৈধ পন্থা যেন ম্লান হতে বসেছে। এমনই তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, পাথরের অবৈধ কারবারের সুবিধায় মহালদার ও বনবিভাগ অর্ধশত বছরের পুরনো মধুরা বিট অফিসকে স্থানান্তর করেছে। সিন্ডিকেটের জন্য ‘সুবিধাজনক’ স্থান চন্ডীঘাটের নগর তেমাথায় বিট অফিস নিয়ে আসা হয়েছে। আর বিট অফিস স্থানান্তর করায় মধুরা, ডরা নালা ও থাইকুল নালাকে একত্রিত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে খোদ বনবিভাগ। এনিয়ে রাজ্যের পরিবেশ ও বনবিভাগের পিসিসিএফ সহ শীর্ষ পর্যায়ে অভিযোগ জমা পড়েছে।
জানা গেছে, বনবিভাগ চণ্ডীঘাট মাইনর মিনারেল ইউনিট নামে একটি খাদান গড়ে তোলার পর এই পরিস্থিতির সূত্রপাত। সাত বছরের জন্য এই খাদানটির বরাত দেওয়া হয়েছে, নিয়োগ করা হয়েছে মহালদারও। পিসিসিএফের কাছে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, চণ্ডীঘাট নামে পাথরের মহাল গড়া হলেও এখানে কোনও নদী নেই। চণ্ডীঘাটে একটি ক্ষুদ্র জলধারা রয়েছে। যা কোনওভাবেই পাথর উৎপাদনকারী নয়। চণ্ডীঘাট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ঐতিহাসিক খাসপুর রাজবাড়ি রয়েছে। কিন্তু এই চণ্ডীঘাটকেই ইউনিট বানিয়ে নগর তেমাথায় বিট অফিস নিয়ে আসা হয়েছে। অফিসের পাশেই রয়েছে মহালদারের অফিস। এতে মধুরা, ডরা এবং থাইকুল নালা একাকার হয়ে গেছে। অর্থাৎ মহালদারের কাছে সরকারিভাবে একটি খাদান রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তারা উপভোগ করছে আরও তিনটি খাদান! বনবিভাগের এই পদক্ষেপে এক লপ্তে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার, এমনটাই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
বস্তুত, মধুরা কোয়ারিতে প্রচুর পরিমাণে পাথর উৎপাদন হলেও বনবিভাগ তা কাউকে লিজ বা বরাত দিতে পারে না। এতে গৌহাটি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবশ্য সরকারি কাজের বিপরীতে বনবিভাগ পার্মিট ইস্যু করতে পারবে। ক’বছর আগে কাছাড় বন ডিভিশন মধুরার উজানে ডরা নালা এবং কাছাড়-ডিমা হাসাও সীমান্তের থাইকুল নালা থেকে পাথর উত্তোলনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। শাসক দলের কিছু লোক তাতে যোগ্য প্রতিপন্ন হন। এবার চণ্ডীঘাট নাম দিয়ে মধুরা, ডরা ও থাইকুলের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব একইভাবে শাসক দলের কিছু লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আসলে চণ্ডীঘাট থেকে যে পরিমাণ পাথর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বাস্তবে এর সিকি পরিমাণ পাথর ওখানে উৎপাদিত হয় না। কিন্তু নগর তেমাথায় বিট অফিস স্থাপনের ফলে মধুরা পাথর কোয়ারি কেন্দ্রিক যে নজরদারি ব্যবস্থা ছিল তা শূন্যে নেমে এসেছে। এখন একটি টিপার পাথর ভর্তি করে বেরোতে চাইলেই মহালদার তা আটকে দেবে। কিন্তু টিপার ভর্তি পাথরের গায়ে তো লেখা থাকবে না যে এটা মধুরা, ডরা না থাইকুলের পাথর। অথচ, মহালদার শুধু চণ্ডীঘাটের। সেই সুযোগ ও ব্যবস্থা করে দিয়েছে খোদ বনবিভাগ।
এনিয়ে উধারবন্দের বাবলু দাস ও অন্যরা দু’দফায় কাছাড়ের ডিএফও ও উধারবন্দের রেঞ্জারের কাছে স্মারকপত্র দিয়েছেন। কিন্তু তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। গত ২ জুন রাজ্যের পরিবেশ ও বনবিভাগ এক আদেশে তেজস মারিস্বামীর স্থলে পালভে বিজয় ট্রিম্বার্ককে কাছাড়ের ডিএফও হিসেবে বদলি করেছে। অভিযোগ, মধুরা কেন্দ্রিক ওই পাথর বাণিজ্য নিয়ে মারিস্বামীর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, বিজয় ট্রিম্বার্কের ক্ষেত্রে তার কোনও পরিবর্তন নেই। অভিযোগকারীরা জানান, প্রতিদিন যদি মধুরা কোয়ারি থেকে ১০০ টিপার পাথর ভর্তি করে বেরোয় এবং প্রতি টিপারে নুন্যতম ১০ সিএম পাথর থাকে, তাহলে শুধু সিন্ডিকেটের পকেটে রোজ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঢুকবে। মাসে যা ৭৫ লক্ষ টাকা। মধুরা কোয়ারিতে কোনও কোনও দিন ৫০০ থেকে ৬০০টি টিপারও লোড নেয়। আর এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে পূর্বতন ডিএফও তেজশ মারিস্বামী কাছাড় বন ডিভিশন থেকে রাজেন ভট্টাচার্য নামের এক বনকর্মীকে গত ৯ জুন সদর রেঞ্জে বদলি করেন। রাজেনের হাতে গুরুত্বপূর্ণ এফটিসি (ফরেস্ট অ্যান্ড ট্রি কভার), এফআরসিসি (ফরেস্ট রয়েলটি ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট), গভট ওয়ার্কস পার্মিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রয়েছে। কিন্তু নয়া ডিএফও দায়িত্ব নিয়েই ১৭ দিনের মাথায় তাঁকে ফের ডিভিশনে নিয়ে গেছেন। এর নেপথ্যে পাথর সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী হাত কাজ করে থাকতে পারে বলে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছেন।