অনলাইন ডেস্ক : বেতন বৃদ্ধির পর স্বাভাবিকভাবেই খুশিতে ডগমগ করছিলেন গৃহরক্ষী জওয়ানরা। কিন্তু বর্তমানে এই বেতন বৃদ্ধিই যেন উল্টে কাল হয়ে উঠেছে তাদের জীবনে। বেতন বৃদ্ধির দরুন ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে তাদের কাজের ক্ষেত্র। এবং কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন একের পর এক জওয়ান।
গৃহরক্ষীরা কাজের বিনিময়ে যে অর্থ পেয়ে থাকেন তাকে বেতন বলা ঠিক হবে কিনা এনিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়ে থাকে দৈনিক কাজের হিসেবে। একদিন কাজে না গেলে কেটে নেওয়া হয় সেদিনের পারিশ্রমিক। তবে এই প্রশ্ন দূরে সরিয়ে রেখে হিসেব কষলে দেখা যায় গৃহরক্ষীরা আগে যেখানে দৈনিক ৩০০ টাকা হারে ৩০ দিনের মাসে পেতেন ৯ হাজার টাকা, সেখানে বর্তমানে দৈনিক ৭৬৭ টাকা হারে পেয়ে থাকেন ২৩ হাজার ১০ টাকা।৩১ দিনের মাস হলে বেড়ে যায় একদিনের টাকা। আর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ বা ২৯ দিনের হলে সেই হিসেবে কিছুটা কমে যায় প্রাপ্য।
২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্দেশ জারি করে এই বেতন বা মজুরি বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির পর জওয়ানদের জীবনে এসে গেছে নতুন এক মোড়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জওয়ানদের নাম নিবন্ধিত থাকে বিভাগীয় কমান্ডেন্টের কার্যালয়ে। কোনও বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিরাপত্তা জনিত কারণে গৃহরক্ষীদের নিয়োগ করতে চাইলে যোগাযোগ করা হয় কমান্ডেন্টের কার্যালয়ে। এরপর কমান্ড্যান্টের কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষিত জওয়ানদের মধ্যে থেকে পর্যায়ক্রমে নিয়োজিত করা হয় সেই বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানে। এর জন্য বেতন দিতে হয় সেই বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে।
শুধু বরাক উপত্যকার তিন জেলার গৃহরক্ষীদের সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে সে অনুযায়ী, বেতন বৃদ্ধির পর ইতিমধ্যে কাজ হারিয়েছেন ১২৩ জন। আগামী জুলাই মাসের পর হারাতে চলেছেন আরও ৩০ জন।সাত মাস আগে ২০২২ এর ১৯ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির পর এপর্যন্ত শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাটাই করা হয়েছে ৫০ জনকে। মেডিকেলে নিয়োজিত ছিলেন ১০০ জন, বর্তমানে রয়েছেন শুধু ৫০ জন। লক্ষীপুরের বড়থল বাগানে ছিলেন ৮ জন, ছাঁটাই করা হয়েছে সবাইকে। একইভাবে রামনগরে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের রিজার্ভার থেকে ১২ জন, কাটিগড়ার জালালপুর বাগান থেকে ৮ জন, কুম্ভিরগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ৭ জন, করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতাল থেকে ৬ জন, হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতাল থেকে ৬ জন, শিলচরের অবজারভেশন হোম থেকে ৬ জন, শিলচর মেহেরপুরের মেট্রোলজিক্যাল বিভাগের কার্যালয় থেকে ৪ জন, এবং বদরপুর ঘাটের পাওয়ার গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৬ জনকে ছাটাই করা হয়েছে। এছাড়া আগামী জুলাই মাসের পর পাওয়ার গ্রিডের শ্রীকোনা সাবস্টেশন থেকে ছাটাই করা হবে আরও ৩০ জনকে। ইতিমধ্যে চিঠি লিখে ব্যাপারটা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গৃহরক্ষী বিভাগের কমান্ডেন্টকে। এভাবে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে গৃহরক্ষী জওয়ানদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গৃহরক্ষীদের ছাঁটাই করে কাজে লাগানো হচ্ছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার গার্ডদের। কিছু কিছু বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তাদের বক্তব্য, গৃহরক্ষী জওয়ানদের বর্তমানে আগের তুলনায় বেশি বেতন দিতে হয়। তাই খরচ কমাতে গৃহরক্ষীদের স্থলে নিয়োজিত করা হচ্ছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার গার্ডদের। যাদের বেতন দিতে হয় তুলনামূলকভাবে কম। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পেছনে অন্য রহস্যও লুকিয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। কারণ বেতন বৃদ্ধির আগে থেকেই বিভিন্ন বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানে গৃহরক্ষীদের বদলে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার গার্ডদের নিয়োজিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। আর এবার বেতন বৃদ্ধি হয়তো ব্যাপক হারে এমনটা করার সুযোগ এনে দিয়েছে।
গোটা বরাক উপত্যকায় গৃহরক্ষীদের নিবন্ধন এবং চাহিদা অনুযায়ী নিয়োজিত করা হয়ে থাকে কাছাড়ের বিভাগীয় কমান্ডেন্টের কার্যালয় থেকে। এ নিয়ে কমান্ডেন্ট রবি শংকর ডেকাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এভাবে কাজের সুযোগ সংকোচিত হতে থাকায় ক্রমেই বেকার হয়ে পড়ছেন জওয়ানরা। অনেক জওয়ানই তাদের নিয়োজিত করার জন্য তার কাছে এসে অনুনয় বিনয় করে থাকেন। কিন্তু তার করার থাকে না কিছুই। সবকিছু জানিয়ে তিনি ইতিমধ্যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
ডেকা এর চেয়ে বেশি কিছু না বললেও কার্যালয়ের অন্য এক সূত্র জানান, কমান্ডেন্টের কার্যালয়ের অধীনে বর্তমানে নিবন্ধিত রয়েছে ৩২৩৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জওয়ানের নাম। এর মধ্যে কাছাড়ের ১৩৯৯, করিমগঞ্জের ১১৬০, এবং হাইলাকান্দির রয়েছেন ৬৭৬জন। এদের মধ্যে তিন জেলা মিলিয়ে পুলিশের অধীনে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। আর অন্যান্য বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন আরও ৩৮৪ জন(কাছাড়ের-১৬০, করিমগঞ্জের-১০৫ এবং হাইলাকান্দির-১১৯ জন)। সব মিলিয়ে নিয়োজিত রয়েছেন ৭৩৪ জন। বাকিরা সবাই বেকার। এদিকে হোমগার্ডদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে তাদের মধ্যে থেকে নিয়োজিত করাটা বাধ্যতামূলক করা হোক। এতে কিছুটা হলেও বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ।