অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে শিলচর এনআইটিতে প্রত্যাহার হলো পড়ুয়াদের আন্দোলন। দীর্ঘ সাড়ে ১০৯ ঘণ্টা ধরে “সত্যাগ্রহ” চালিয়ে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষের তরফে আশ্বাস পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ পড়ুয়ারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে হোস্টেলে ফিরে যায়।
পড়ুয়াদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টায়। আন্দোলনের চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার পঞ্জীয়ক কে এল বৈষ্ণব পড়ুয়াদের কাছে এক নোটিশ পাঠিয়ে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে পরোক্ষভাবে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন। তবে এদিন ডিরেক্টর দিলীপ কুমার বৈদ্যের আগমনের পর এই কড়া মনোভাব ১৮০ ডিগ্রী পাল্টে ডিন বিনয় কৃষ্ণ রায়কে অপসারণ সহ পড়ুয়াদের প্রায় সবকটি দাবিই মেনে নেন কর্তৃপক্ষ। এতে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আন্দোলন প্রত্যাহার করে পড়ুয়ারা ফিরে যায় হোস্টেলে।
শেষ পর্যন্ত এভাবে পড়ুয়ারা আন্দোলন প্রত্যাহার করায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে নেমে এসেছে স্বস্তির হওয়া। যদিও তা এতো সহজে হয়ে উঠেনি। কলকাতায় নিয়োগ সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর ডিরেক্টর বৈদ্য এদিন ফেরেন শিলচরে। ক্যাম্পাসে পৌঁছে রেজিস্টার কে এল বৈষ্ণব সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ তিনি জিমখানা পার্কের বিপরীত দিকে থাকা নিউ গ্যালারিতে অবস্থানরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ডিন (একাডেমিক) বিনয়কৃষ্ণ রায়কে দুদিনের মধ্যে সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে ডিরেক্টর আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আন্যান্য বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর কুজ বোকার নামে পড়ুয়া হোস্টেলে আত্মঘাতী হওয়ার পর ডিরেক্টর খোঁজ নিতে যাননি, অন্যান্য কর্মকর্তারাও পৌঁছেছেন অনেক বিলম্বে। এসব কথা বলে পড়ুয়ারা
ক্ষোভ উগরে দিলে ডিরেক্টর বলেন ওইদিন তিনি বিশেষ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যান্য যেসব কর্মকর্তা হোস্টেলে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তদারকি করেছেন সবকিছুর। তবে এরপরও তার সশরীরে হাজির না হওয়ার জন্য পড়ুয়ারা যদি মনে দুঃখ পেয়ে থাকে তবে তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। হাতজোড় করে তিনি একথা বলেন। পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে, এবার প্রশ্ন উত্তাপন করা হয় ১৫ সেপ্টেম্বর কুজ আত্মঘাতী হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ঘিরে দায়ের করা এজাহারে কি নির্দিষ্টভাবে কোনও পড়ুয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর জবাবে ডিরেক্টর বলেন, এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই দায়ের করতে হয় এজাহার। কিন্তু এতে নির্দিষ্টভাবে কোনও পড়ুয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পড়ুয়ার বিরুদ্ধে যাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, এনিয়েও দাবি উত্থাপন করে পড়ুয়ারা। ডিরেক্টর সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা মোটামুটিভাবে তাও মেনে নেন। এভাবে প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট ধরে আলোচনা চলার পর পড়ুয়ারা জানায়, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সন্তুষ্ট। তবে লিখিতভাবে এসব প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কারণ বিগত দিনে অনেক মৌখিক প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি। কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, মৌখিক প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট, তাই পড়ুয়াদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। একথা বলে ডিরেক্টর সহ অন্যান্য কয়েকজন পড়ুয়াদের ফলের রস খাওয়াতে যান। তবে পড়ুয়ারা এতে রাজি হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ডিরেক্টর সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তখনকার মতো সেখান থেকে চলে যান। তবে যাওয়ার আগে বলে যান পড়ুয়ারা যেন সব কিছু ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখে।
দুপুরের এই অধ্যায়ের পর রাত ৯টা নাগাদ ডিরেক্টর সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ফের হাজির হন পড়ুয়াদের সামনে। এবার কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর পড়ুয়ারা লিখিত প্রতিশ্রুতি বিনেই আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি হয়। তাদের ফলের রস খাওয়ানোর পর আন্দোলন প্রত্যাহার করে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ পড়ুয়ারা ফিরে যায় হোস্টেলে।
আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ঋষিকান্ত নামে এক পড়ুয়া সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ডিরেক্টরের কথায় তাদের ভরসা রয়েছে। তবে এদিন তারা অর্ধেক ন্যায় পেয়েছেন। কুজ বোকারের আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলেই, পূর্ণ ন্যায় মিলবে। ঋষিকান্তরা আরও জানান, কুজ বোকারের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ন্যায়ের জন্য পরিবারের লোকেরা যে পদক্ষেপই নেবেন, তারা এর সঙ্গে থাকবেন।
এদিকে এন আই টির অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার রূপজ্যোতি দেব জানিয়েছেন, শনিবার প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয় না। আর রবিবার তো সবকিছুই ছুটি। তাই নিয়মিত ক্লাস শুরু হবে সোমবার থেকে।