অনলাইন ডেস্ক : সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে শিশুকন্যাকে নিয়ে নার্সিং হোমের দ্বারস্থ হতে হল অভিভাবককে। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট নার্সিং হোমে যাওয়ার পরামর্শদাতা খোদ কর্তব্যরত চিকিৎসক। চিকিৎসাও করেন তিনি। তবে সেই নার্সিং হোমে। ঘটনাটি করিমগঞ্জের।
গত রবিবার পৌষ সংক্রান্তির আনন্দ অবকাশের সন্ধ্যায় খেলনাগাড়ি নিয়ে খেলায় মত্ত ছিল মামাতো ভাই জোনাই সহ দুই বোন হিয়া ও আঁখি। হঠাতই অঘটন।রিমোটের অ্যারিয়েলের তার ঢুকে যায় বড়বোন হিয়া ওরফে বারো বছরের তিতীর্ষার ডানহাতের অনামিকাতে। বহু চেষ্টা করেও তার বের করা যাচ্ছিল না দেখে অভিভাবকরা তাকে নিয়ে ছুটে যান করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ দেবপ্রিয় দে শীঘ্রই এক্সরে করানোর পরামর্শ দেন। তাঁর কথামতো সঙ্গে সঙ্গেই এক্সরে করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ফের দেখালে ডাক্তারবাবু জানান, রিমোটের তার আঙুলের খুব বেশি ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় অস্ত্রপোচার করাতে হবে।
এবার সেই ডাক্তারবাবুই হিয়ার বাবা-মাকে জানান,সিভিল হাসপাতালে এরকম অপারেশনের সরঞ্জাম ওটিতে ইমারজেন্সিতে নেই। তাই শীঘ্র শিলচর মেডিক্যাল কলেজ অথবা করিমগঞ্জের একটি নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন রাত ৮টা। সংক্রান্তির সে রাতে এতদূর না গিয়ে হিয়ার বাবা-মা স্বপন দাস ও মধুমিতা দাস করিমগঞ্জের সেই নির্দিষ্ট নার্সিং হোমে নিয়ে যান। কারণ, তীব্র ব্যথায় তাঁদের শিশুকন্যাটি কাতরাচ্ছিল। তাছাড়া সংক্রান্তি ও রবিবারের ছুটি থাকায় রাতে শিলচর নিয়ে যাওয়া বেশ হ্যাপা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, সিভিল হাসপাতাল থেকে সেই বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছার মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে হাজির হন ডাঃ দেবপ্রিয়। অপারেশন করে রিমোটের তার বের করেন তিনিই। একটা সেলাই দিতে হয় তাঁকে। আর ব্যান্ডএইডে চাপা দিয়ে ,কিছু ওষুধপত্র লিখে হিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অপারেশনের জন্য হিয়ার বাবার হাতে বিল ধরানো হয় ৪ হাজার টাকার। দরদাম করে পরে সাড়ে তিন হাজার টাকায় রফা হয় বলে জানান স্বপন বাবু ও তাঁর অন্য এক আত্মীয় সঞ্জয় দাস। সঞ্জয়বাবুও হিয়াকে নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসালয়ে ছুটোছুটির সময় সঙ্গে ছিলেন। এবার আত্মীয় স্বজনের কাছে খবরটি চাউর হতেই সবার প্রশ্ন জাগে, সামান্য একটি তার বের করার জন্য অপারেশনের উপযুক্ত সরঞ্জাম করিমগঞ্জে নেই কেন ? মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে বিকল্প হিসেবে সেই নার্সিং হোমে যাওয়ার পরামর্শ একজন কর্তব্যরত সরকারি চিকিৎসক দেন কীভাবে ?
বিষয়টি নিয়ে ডাঃ দে-র সঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রথমেই সিভিল হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে অপারেশন করার সরঞ্জামের অভাবের কথা জানান। তবে বিকল্প হিসেবে রোগীকে নিয়ে সেই নার্সিং হোমে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। ডাঃ দেবপ্রিয় দে আরও জানান, এক্সরে করে রিমোটের তার প্যাঁচানো অবস্থায় বেশ গভীরে ঢুকে যাওয়ার ফলে তা বের করা সমস্যা ছিল। এবং সিভিল হাসপাতালে সেই সুবিধা নেই বলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেই তিনিই নার্সিং হোমে হিয়ার আঙ্গুলে অস্ত্রপোচার করেন। অপারেশনের সময় তিনি সিভিল হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন না বলেও জানান ডাঃ দে।